হাটহাজারী মাদরাসায় সন্ত্রাসী হামলা: জামায়াতের দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি

হাটহাজারী দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম মাদরাসায় সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা দেশে শোক এবং নিন্দার ঝড় তুলেছে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে। হামলায় শতাধিক ছাত্র আহত হয়েছেন এবং দেশের সর্বস্তরের মানুষ এই বর্বরোচিত ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল এবং সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার আজ রোববার (৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলেন, “হাটহাজারী মাদরাসায় সন্ত্রাসী হামলা এবং মসজিদ ও মাদরাসাকে অবমাননা কোনোভাবেই সহ্যযোগ্য নয়। যারা এই হামলা চালিয়েছে তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। আহত ছাত্রদের প্রতি আমরা সমবেদনা জানাচ্ছি এবং তাদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি।”
হামলার পেছনের ঘটনা
প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) রাত ৮টার দিকে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে আয়োজিত জশনে জুলুসের র্যালি হাটহাজারী মাদরাসার সামনের পথ দিয়ে যাচ্ছিল। র্যালির সময় আরিয়ান ইব্রাহিম নামের এক যুবক মসজিদ ও মাদরাসার দিকে আঙুল তোলার সঙ্গে ‘অশোভন অঙ্গভঙ্গি’ করেন। এরপর তিনি তা ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেন।
এই ঘটনার পর মাদরাসার ছাত্ররা প্রতিবাদ করলে হামলাকারীরা তাদের ওপর নৃশংস হামলা চালায়। এই হামলায় শতাধিক ছাত্র গুরুতর আহত হন। জামায়াতের বক্তব্য অনুযায়ী, এই হামলা স্পষ্টভাবে একটি উস্কানিমূলক এবং পরিকল্পিত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড।
হাটহাজারী মাদরাসার তাৎপর্য
দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম, হাটহাজারী, দেশের অন্যতম প্রাচীন ও বৃহত্তম দ্বীনি প্রতিষ্ঠান। এখানে শুধু ধর্মীয় শিক্ষা নয়, সমাজকল্যাণমূলক শিক্ষারও ব্যবস্থা রয়েছে। দেশের বহু নামকরা আলেম ও শিক্ষার্থী এখানে শিক্ষাগ্রহণ করেছেন।
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, “হাটহাজারী মাদরাসার মতো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে হামলা দেশের সকল মুসলিমদের ঈমান ও আক্বিদাকে আঘাত করে। ধর্মীয় পবিত্র স্থানগুলোতে কোনোভাবে অবমাননা গ্রহণযোগ্য নয়। এই ধরনের ঘটনায় জাতি ও সমাজে বিভেদ এবং সহিংসতা ছড়ানোর উদ্দেশ্য থাকে।”
ধর্মীয় স্থানের সম্মান এবং সামাজিক দায়িত্ব
জামায়াতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ইসলামের মূল শিক্ষা হলো শান্তি, সংযম ও সহনশীলতা। দেশের মানুষকে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সহনশীলতার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে হবে।
এছাড়াও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দায়িত্বশীল আচরণের গুরুত্বের দিকে বিশেষভাবে আলোকপাত করা হয়েছে। এমনকি ভিডিও বা ছবি শেয়ার করার সময় তা যেন কোনো ধর্মীয় অনুভূতিকে আঘাত না করে, সেই ব্যাপারে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি
জামায়াতের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানানো হয়েছে যে, হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। এটি শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করবে না, বরং সমাজে শান্তি ও নিরাপত্তার বার্তাও প্রেরণ করবে।
দেশের বিভিন্ন স্তরে প্রতিক্রিয়া
হাটহাজারী মাদরাসায় হামলার খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশের বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় মহল থেকে নিন্দার ঝড় দেখা দিয়েছে। অনেকেই এই ঘটনার সাথে উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ড ও পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের সম্ভাবনা জড়িত থাকার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং অভিভাবকরা এই হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে বলছেন, “মাদরাসা ও মসজিদ হলো আমাদের ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কেন্দ্রবিন্দু। এ ধরনের হামলা সহ্য করা হবে না।”
হামলার পর আহতদের অবস্থা
প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, শতাধিক ছাত্র আহত হয়েছেন। স্থানীয় হাসপাতালগুলোতে তাদের চিকিৎসা চলছে। শিক্ষার্থীরা গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হলেও চিকিৎসকরা আশ্বাস দিয়েছেন যে, যথাযথ চিকিৎসার মাধ্যমে তাদের দ্রুত সুস্থ করা সম্ভব।
জামায়াতের বিবৃতিতে আহত ছাত্রদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করা হয়েছে এবং দ্রুত সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করা হয়েছে।
সামাজিক সচেতনতার আহ্বান
জামায়াতের পক্ষ থেকে সামাজিক সচেতনতার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। তারা বলেছে, “সকলের দায়িত্ব হলো ধর্মীয় অনুভূতিকে সম্মান করা এবং সমাজে সহনশীলতা বজায় রাখা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অবাঞ্ছিত বা উস্কানিমূলক পোস্টের মাধ্যমে সমাজে অশান্তি সৃষ্টি করা চলবে না।”
এতে স্পষ্টভাবে বোঝা যায়, বর্তমান সময়ে ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে সচেতনতা অপরিহার্য। ছোট একটি ভিডিও বা পোস্টও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করতে পারে এবং বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করতে পারে।
দেশের সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপট
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে কিছু isolated হামলার ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু হাটহাজারীর ঘটনা দৈর্ঘ্য ও সংঘর্ষের মাত্রার কারণে বিশেষভাবে উদ্বেগজনক।
সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনও ধর্মীয় স্থানের নিরাপত্তা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সম্মান রক্ষার আহ্বান জানিয়েছে। এটি সমাজে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
হাটহাজারী মাদরাসায় সন্ত্রাসী হামলা আমাদের সমাজের জন্য একটি কঠিন সতর্কবার্তা। এটি দেখাচ্ছে যে, ধর্মীয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি শ্রদ্ধা না দেখালে সাম্প্রদায়িক অশান্তি এবং সহিংসতা সৃষ্টি হতে পারে।
জামায়াতের আহ্বান অনুযায়ী, হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং সামাজিক দায়িত্বশীল আচরণ নিশ্চিত করা সময়ের দাবি। সমাজকে শান্তিপূর্ণ, সহনশীল এবং সংহত রাখার জন্য সবাইকে সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে।
এই ঘটনায় দেশের সকল ধর্মপ্রাণ মানুষ এবং শিক্ষানুরাগী সমাজকে একত্রিত হয়ে ধর্মীয় স্থানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া এবং সহিংসতার প্রতিরোধ করতে হবে।
MAH – 12683, Signalbd.com