বিশ্ব

গাজায় ড্রোন হামলার ফুটেজ দেখিয়ে অস্ত্র বিক্রির বিজ্ঞাপন প্রচার

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা কোম্পানিগুলো গাজার ওপর চালানো ড্রোন হামলার ভয়াবহ ভিডিও ব্যবহার করে অস্ত্র বিক্রির প্রচার চালাচ্ছে। এতে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠেছে। মানবিক সংকটের সময় এমন প্রচারণা কতটা নৈতিক — উঠছে প্রশ্ন।

গাজা হামলার ভিডিওকে বানানো হচ্ছে বাণিজ্যের হাতিয়ার

ইসরায়েলি অস্ত্র প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো গাজায় চলমান ড্রোন হামলার ফুটেজকে ব্যবহার করছে তাদের সামরিক প্রযুক্তি বিক্রির বিজ্ঞাপনে। এসব ভিডিওতে ড্রোনের নির্ভুল হামলা, লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস এবং সাফল্যের দৃশ্য তুলে ধরা হচ্ছে, যা যুদ্ধকালীন বাস্তবতার নির্মমতা থেকে উঠে আসা।

প্রচারণার ভিডিওতে দেখা যায়, নির্দিষ্ট ভবনে টার্গেট লক করে ড্রোন ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করছে এবং ধ্বংসস্তূপে পরিণত হচ্ছে এলাকা। এসব দৃশ্য ব্যবহার করে বলা হচ্ছে, “আমাদের প্রযুক্তি যুদ্ধক্ষেত্রে প্রমাণিত — এখন আপনার সুরক্ষায়।”

অস্ত্র বাণিজ্যে নতুন ট্রেন্ড: বাস্তব যুদ্ধের লাইভ ফুটেজ

বিশ্বের সামরিক সরঞ্জাম বাজারে প্রতিযোগিতা দিনে দিনে বাড়ছে। আর এই প্রতিযোগিতায় নিজেদের প্রযুক্তি তুলে ধরতে অনেক প্রতিষ্ঠানই বাস্তব যুদ্ধের ফুটেজকে বেছে নিচ্ছে। ইসরায়েলি ড্রোন নির্মাতা একটি প্রতিষ্ঠান তাদের ওয়েবসাইট ও সোসাল মিডিয়ায় প্রকাশ করেছে ভিডিও — যা দেখে বোঝা যায়, তারা গাজা যুদ্ধকে মার্কেটিং টুল হিসেবে ব্যবহার করছে।

কোনো কোনো কোম্পানি বিজ্ঞাপনে সরাসরি বলেছে, “যুদ্ধকালীন নির্ভুল টার্গেটিংয়ের জন্য আমাদের ড্রোন সিস্টেমের ওপর ভরসা করুন।”

মানবিক বিপর্যয়ের মাঝেও ব্যবসায়িক প্রচারণা

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় চলমান সংঘর্ষে ইতোমধ্যে হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে যুদ্ধের ভিডিওকে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করাকে ‘অমানবিক’ বলে অভিহিত করেছেন মানবাধিকার কর্মীরা।

বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন সংস্থা, এনজিও এবং সাধারণ মানুষ এই ধরণের প্রচারণাকে নিন্দা জানিয়ে বলছেন, “একটি মানবিক বিপর্যয়কে ব্যবসার প্ল্যাটফর্ম বানানো অমানবিক ও অনৈতিক।”

অতীতে এমন ঘটনা ঘটেছে কি?

ইসরায়েল এর আগেও যুদ্ধকালীন বাস্তবতা ব্যবহার করে অস্ত্র বিক্রির প্রচারণা চালিয়েছে। ২০২১ সালের গাজা সংঘর্ষের সময়েও কিছু প্রতিষ্ঠান তাদের প্রযুক্তির কার্যকারিতা তুলে ধরতে যুদ্ধের ছবি ও ভিডিও ব্যবহার করেছিল। তবে এবারের প্রচারণা আগের তুলনায় অনেক বেশি দৃশ্যমান এবং বিতর্কিত।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বে সামরিক প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান চাহিদার মাঝে বাস্তব যুদ্ধ এখন ‘লাইভ ডেমো’ রূপে পরিণত হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া: সমালোচনার ঝড়

জাতিসংঘের একাধিক প্রতিনিধি এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলছেন, “যুদ্ধ কখনোই বাণিজ্যের হাতিয়ার হতে পারে না।” আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোও জানিয়েছে, যুদ্ধের ভয়াবহতাকে পণ্য হিসেবে তুলে ধরাটা শুধু নৈতিকতার প্রশ্নই নয়, মানবাধিকারেরও লঙ্ঘন।

বিভিন্ন দেশের মিডিয়াও এই প্রচারণাকে ‘যুদ্ধ বানিজ্যিকরণ’ বলে উল্লেখ করেছে।

অস্ত্র ব্যবসার নতুন কৌশল?

বিশ্লেষকদের মতে, এই প্রবণতা শুধু ইসরায়েলেই নয়, বিশ্বের অন্যান্য অস্ত্র উৎপাদনকারী দেশগুলোতেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। বাস্তব যুদ্ধের ভিডিওকে প্রযুক্তির প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করলে তা ভবিষ্যতে যুদ্ধকে আরও ত্বরান্বিত করতে পারে, কারণ তখন প্রতিটি সংঘর্ষ হয়ে উঠবে একটি সম্ভাব্য মার্কেটিং ক্যাম্পেইন।

তারা বলছেন, “বাজার ধরতে হলে প্রযুক্তি প্রমাণ দেখাতে হবে — কিন্তু সেটা যুদ্ধের বাস্তবতা দিয়ে কি হওয়া উচিত?”

“একটি জীবন্ত যুদ্ধক্ষেত্রকে মার্কেটিং ভিডিও বানিয়ে বিশ্ববাসীকে দেখানো চরম নিষ্ঠুরতা”— একজন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কর্মী।

ভবিষ্যৎ কী?

বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, সামনের দিনগুলোতে যুদ্ধের ভিডিওর ব্যবহার বাণিজ্যিকভাবে আরও বিস্তৃত হতে পারে। প্রযুক্তির উৎকর্ষের সাথে সাথে যুদ্ধের লাইভ ফুটেজ সহজলভ্য হচ্ছে, আর সেটাই হয়ে উঠছে নতুন বিজ্ঞাপনী মাধ্যম।

তবে প্রশ্ন উঠছে — প্রযুক্তির প্রমাণ দেখাতে কি রক্তের নদী বইয়ে দেওয়া উচিত?

এম আর এম – ০৩৩৫, Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button