যুক্তরাষ্ট্রের অতীত ভুল স্বীকার ও ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছে ইরান। আলোচনার দরজা খোলা রাখতে চাইলেও তেহরানের অবস্থান স্পষ্ট—সম্মানজনক প্রস্তাব ছাড়া কোনো সমঝোতা নয়। ইসরায়েলি হুমকি ও পরমাণু ইস্যু ঘিরেই নতুন উত্তেজনা।
আরাঘচির বক্তব্য ও শর্ত
ইরানের পররাষ্ট্র উপমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “আমরা আলোচনার পথ কখনো বন্ধ করিনি। তবে আগের মতো অন্ধভাবে আর নয়। যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই তাদের আগ্রাসী পদক্ষেপের দায় স্বীকার করতে হবে।”
তিনি জানান, শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচিতে মার্কিন হামলায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এখন তারা যদি সম্পর্ক মেরামত করতে চায়, তবে সেটি হতে হবে আন্তর্জাতিক আইন ও পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে।
আরাঘচি আরও বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র যদি সম্মানের সাথে আলোচনা চায় এবং অতীত ভুলের জন্য দায় স্বীকার করে, তাহলে তেহরান আলোচনায় বসার বিষয়টি বিবেচনা করবে।”
অতীত প্রেক্ষাপট ও উত্তেজনার সূত্রপাত
গত কয়েক সপ্তাহে ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ হামলায় ইরানের বেশ কয়েকটি পরমাণু স্থাপনায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। বিশেষ করে নাতাঞ্জ, ফর্দো ও ইসফাহানের স্থাপনাগুলোর ওপর হামলা ইরানের নেতৃত্বে তীব্র ক্ষোভের জন্ম দেয়।
এর আগে, ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত পরমাণু চুক্তি (JCPOA) থেকে যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা সরে যাওয়া এবং নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের ফলে দুই দেশের সম্পর্কে মারাত্মক সংকট তৈরি হয়। ইরান বারবার যুক্তরাষ্ট্রের সেই সিদ্ধান্তকে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ বলেও অভিহিত করে আসছে।
ইসরায়েলের হুমকি ও আঞ্চলিক উত্তেজনা
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী সম্প্রতি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ইরান থেকে যদি নতুন করে হুমকি আসে, তাহলে তেহরানের যেকোনো স্থানে সামরিক হামলা চালানো হবে। তিনি আরও দাবি করেন, “ইরানের ইউরেনিয়াম সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়নি; বরং কেবল মাটির নিচে চাপা পড়েছে।”
তেহরান এই বক্তব্যকে ‘উসকানিমূলক ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি’ হিসেবে দেখছে। আরাঘচি বলেন, “ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ আমাদের বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি এবং এটি আমাদের বৈধ অধিকার। আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুযায়ী শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরমাণু কার্যক্রম বৈধ।”
প্রেসিডেন্টের অবস্থান ও অভ্যন্তরীণ প্রতিক্রিয়া
ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানও আলোচনার বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছেন। তবে তিনি বলেছেন, “বিশ্বাস ফিরিয়ে আনাটাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।” যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলাগুলোর কারণে ইরানের জনগণের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, “আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক চাই, তবে সেটা আমাদের সম্মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই হতে হবে।”
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইরান এই মুহূর্তে কৌশলগতভাবে শক্ত অবস্থান নিতে চাচ্ছে। কারণ ইসরায়েল-ইরান সংঘাতের মাঝে যুক্তরাষ্ট্রকে আলাদাভাবে চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে আলোচনায় বসাতে চায় তেহরান।
মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশেষজ্ঞ ড. সামির নাকভি বলেন, “ইরান একটি বার্তা দিতে চায়—তারা শান্তি চায়, তবে আত্মসমর্পণ নয়।”
“যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই অতীত ভুলের জন্য দায় স্বীকার করে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে—তবেই আলোচনা সম্ভব”—আব্বাস আরাঘচি, পররাষ্ট্র উপমন্ত্রী, ইরান
সারসংক্ষেপ
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পরমাণু ইস্যুতে নতুন করে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত ইরান। তবে তেহরানের পররাষ্ট্র উপমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি স্পষ্ট জানিয়েছেন, আলোচনা হবে একমাত্র তখনই, যদি ওয়াশিংটন পূর্বের ভুল স্বীকার করে এবং উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেয়। সাম্প্রতিক হামলা ও দ্বন্দ্বের পটভূমিতে এই অবস্থান আন্তর্জাতিক মহলে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
ইরান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক নতুন এক মোড়ে এসে দাঁড়িয়েছে। তেহরান চাইছে সম্মান ও ক্ষতিপূরণের বিনিময়ে আলোচনার টেবিলে ফিরতে। তবে ইসরায়েলের হুমকি ও আঞ্চলিক উত্তেজনার মধ্যে এই আলোচনা আদৌ সফল হবে কিনা, সেটিই এখন বড় প্রশ্ন।
বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী পদক্ষেপই নির্ধারণ করবে মধ্যপ্রাচ্যের ভবিষ্যৎ পথচলা।
এম আর এম – ০২৮৩, Signalbd.com



