
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই সপ্তাহে মোট ২১টি দেশের পণ্যে নতুন করে পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছেন। এর মধ্যে গত বুধবার তিনি সাতটি দেশের পণ্যে নতুন শুল্ক হার নির্ধারণের কথা জানান। ফিলিপাইন, ব্রুনেই, মলডোভা, আলজেরিয়া, ইরাক, লিবিয়া ও শ্রীলঙ্কা এই সাতটি দেশের নাম এই তালিকায় রয়েছে।
ট্রাম্পের শুল্ক সিদ্ধান্তের পেছনের কারণ
ডোনাল্ড ট্রাম্প গত মঙ্গলবার থেকে ধাপে ধাপে এই শুল্ক হার নির্ধারণের তথ্য প্রকাশ করতে শুরু করেন। তিনি তাঁর মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যালে’ এ ঘোষণা দেন, যেখানে তিনি উল্লেখ করেন, প্রথমে কমপক্ষে সাতটি দেশের তালিকা প্রকাশ করা হবে, পরে আরও কয়েকটি দেশের নাম জানা যাবে। তবে শেষ পর্যন্ত সাতটি দেশেই সীমাবদ্ধ থাকে এই ঘোষণা।
ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নীতিকে নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা বিশেষ ভূমিকা রাখছে। তবে অনেক অর্থনীতিবিদ ও বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ ট্রাম্পের বাণিজ্য ঘাটতির ব্যাখ্যা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন।
নতুন শুল্ক হার: বিস্তারিত পর্যালোচনা
সিএনবিসি ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিটি দেশের জন্য নির্ধারিত নতুন শুল্ক হার নিম্নরূপ:
- ফিলিপাইন: নতুন শুল্ক হার ২০%, আগের ছিল ১৭%
- ব্রুনেই: নতুন শুল্ক ২৫%, আগের ২৪%
- মলডোভা: নতুন শুল্ক ২৫%, আগের ৩১%
- আলজেরিয়া: ৩০% (আগে ৩০%)
- ইরাক: ৩০%, আগের ৩৯%
- লিবিয়া: ৩০%, আগের ৩১%
- শ্রীলঙ্কা: ৩০%, আগের ৪৪%
শুল্ক হার নির্ধারণের প্রভাব ও পরবর্তী পদক্ষেপ
এই ২১টি দেশের শুল্ক হার প্রায় ২০ থেকে ৪০ শতাংশের মধ্যে নির্ধারিত হয়েছে। তবে এসব শুল্ক হার প্রয়োজনের তুলনায় কম রাখা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র সরকার মনে করে, বর্তমান শুল্ক হার সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি দূর করার জন্য যথেষ্ট নয়। তবে ট্রাম্প প্রশাসন পরবর্তীতে এসব হার পুনর্বিবেচনা করতে পারে, যা নির্ভর করবে ওই দেশের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ওপর।
বাণিজ্য ঘাটতির বাস্তব চিত্র
বহু ক্ষেত্রে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৪ সালে মলডোভা ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি ছিল মাত্র ৮৫ মিলিয়ন ডলার। সুতরাং এই ছোট দেশের বিরুদ্ধে কঠোর শুল্ক আরোপের পেছনে ট্রাম্পের কৌশল প্রভাবিত হতে পারে মার্কিন অর্থনীতির বৃহত্তর স্বার্থে।
পূর্বে ঘোষিত শুল্ক আরোপের প্রেক্ষাপট
২০২৫ সালের ২ এপ্রিল ট্রাম্প ‘স্বাধীনতা দিবস’ উপলক্ষে প্রথম দফায় কয়েকটি দেশের পণ্যে উচ্চ শুল্ক আরোপ করেন। তবে সেই ঘোষণার পর বিশ্ববাজারে অস্থিরতা দেখা দেয়। পরিস্থিতির অবনতি এড়াতে তিনি ওই শুল্কগুলো ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করেন। স্থগিতের মেয়াদ গতকাল শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সোমবার ট্রাম্প নির্বাহী আদেশে তা ১ আগস্ট পর্যন্ত বাড়িয়ে দেন।
ট্রাম্পের কঠোর অবস্থান
ট্রাম্প আরও স্পষ্ট করে বলেছেন, আগামী ১ আগস্টের সময়সীমার পরে আর কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। তাঁর ভাষায়, ‘আর কোনো সময় দেওয়া হবে না।’ মার্কিন প্রশাসনের এই কড়া অবস্থান বিশ্ব বাণিজ্য ক্ষেত্রে নতুন এক সংকটের ইঙ্গিত দিতে পারে।
প্রথম ধাপে ১৪ দেশের তালিকা
সোমবার তিনি ১৪টি দেশের পণ্যে নতুন পাল্টা শুল্ক আরোপের চিঠি দেন। সেই তালিকায় রয়েছে:
- জাপান
- দক্ষিণ কোরিয়া
- মালয়েশিয়া
- কাজাখস্তান
- দক্ষিণ আফ্রিকা
- লাওস
- মিয়ানমার
- বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা
- তিউনিসিয়া
- ইন্দোনেশিয়া
- বাংলাদেশ
- সার্বিয়া
- কম্বোডিয়া
- থাইল্যান্ড
এই ১৪ দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি, তাদের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
ট্রাম্পের নতুন শুল্কের আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ
বিশ্ববাজারে মার্কিন শুল্ক আরোপের খবর যত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে, বিভিন্ন দেশের সরকার ও বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানগুলো এর প্রভাব নিয়ে উদ্বিগ্ন। শুল্ক বৃদ্ধির ফলে তাদের পণ্যের মার্কিন বাজারে প্রবেশ কঠিন হয়ে পড়ছে, যা ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা দিতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ট্রাম্প প্রশাসনের এই বাণিজ্য নীতি দীর্ঘমেয়াদে বিশ্ব বাণিজ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। অন্যদিকে, ট্রাম্পের সমর্থকরা এই পদক্ষেপকে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় বলে দেখছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০২৫ সালের জুলাইয়ে আরও সাতটি দেশের পণ্যে নতুন পাল্টা শুল্ক আরোপ করে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ক্ষেত্রে নতুন উত্তেজনার সূচনা করেছেন। তার আগে ১৪টি দেশের পণ্যে শুল্ক নির্ধারণের মাধ্যমে মোট ২১টি দেশের পণ্য মার্কিন বাজারে উচ্চ শুল্কের আওতায় এসেছে। ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের ফলে বিশ্ববাজারে অস্থিরতা বাড়ার আশঙ্কা করছেন অনেকে। তবে মার্কিন প্রশাসনের স্থির মনোভাব বলছে, তারা বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে কঠোর পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত।