বিশ্ব

রাজস্থানে ভারতীয় বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত, দুই পাইলট নিহত

Advertisement

ভারতের রাজস্থান রাজ্যের চুরু জেলার রতনগড়ের কাছে অবস্থিত চুরুর তেহসিলে ভারতীয় বিমানবাহিনীর (আইএএফ) একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় বিমানের দুই পাইলটের মৃত্যু হয়েছে বলে ভারতীয় বিমানবাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসন নিশ্চিত করেছে।

দুর্ঘটনার বিবরণ:

ভারতীয় বিমানবাহিনী সূত্রে জানা গেছে, বুধবার (৯ জুলাই) বেলা আনুমানিক সাড়ে ১২টার সময় একটি নিয়মিত প্রশিক্ষণ মিশনের সময় এই দুর্ঘটনা ঘটে। বিধ্বস্ত যুদ্ধে বিমানের নাম ‘জাগুয়ার’ — একটি দুই আসনের ট্রেনার যুদ্ধবিমান, যা প্রাথমিকভাবে তরুণ পাইলটদের প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হয়।

চুরু জেলার পুলিশ সুপার, জয় যাদব বলেন, “বিমানটি ভাবানা বাদাভানে গ্রামের কাছাকাছি একটি খোলা মাঠে বিধ্বস্ত হয়েছে। দুর্ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে দুই পাইলটকে মৃত অবস্থায় পায়। তাদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানানো হচ্ছে।”

আইএএফের এক মুখপাত্র বলেন, “এই দুর্ঘটনায় দুজন পাইলট মারাত্মকভাবে আহত হন। দ্রুত তাদের উদ্ধার করে নিকটস্থ হাসপাতালে নেওয়া হয়, কিন্তু দুজনেরই মৃত্যু হয়।”

পূর্বের বিমান দুর্ঘটনার পটভূমি:

ভারতের বিমান বাহিনী সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কিছু যুদ্ধবিমান দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে, যা প্রশিক্ষণ চলাকালীন বা প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে ঘটেছে।

২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে গুজরাটের জামনগর জেলায়, সুভর্দা গ্রামে একটি দুই আসনের জাগুয়ার যুদ্ধবিমান প্রশিক্ষণ মিশনের সময় বিধ্বস্ত হয়েছিল। ওই দুর্ঘটনায় এক পাইলটের মৃত্যু হয়। বিমানটি জামনগর শহর থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরে কালাভাদ হাইওয়ের পাশের একটি খোলা মাঠে পড়েছিল।

এর আগেও, ২০২৪ সালের মার্চে হরিয়ানার আম্বালা বিমান ঘাঁটি থেকে উড্ডয়নের পর একটি জাগুয়ার বিমান বিধ্বস্ত হয়। একই দিনে পশ্চিমবঙ্গের বাগডোগরায় একটি এএন-৩২ পরিবহন বিমান জরুরি অবতরণ করেছিল। যদিও ওই দুই ঘটনার ক্রুরা নিরাপদে বের হতে সক্ষম হয়েছিলেন, তবে জাগুয়ার বিমানটি প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে বিধ্বস্ত হয় বলে জানা গিয়েছিল।

জাগুয়ার যুদ্ধবিমান সম্পর্কে তথ্য:

জাগুয়ার যুদ্ধবিমান ভারতের বিমান বাহিনীতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি মূলত হালকা আক্রমণ এবং প্রশিক্ষণ মিশনের জন্য ব্যবহৃত হয়। দুই আসনের এই বিমানটি নতুন পাইলটদের হাতে প্রশিক্ষণের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে যাতে তাঁরা বাস্তব যুদ্ধ পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারেন।

বিমানটি ব্রিটিশ নির্মিত হলেও এটি ভারতীয় প্রযুক্তির বিভিন্ন উন্নত অংশ ব্যবহার করে আপগ্রেড করা হয়েছে।

ভারতীয় বিমান বাহিনীর নিরাপত্তা ও দুর্ঘটনা প্রতিরোধে উদ্যোগ:

ভারতীয় বিমানবাহিনী নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে তাদের বিমানবহরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য। যদিও প্রযুক্তিগত ত্রুটি বা অপ্রত্যাশিত দুর্ঘটনা অবশ্যম্ভাবী, তবে বিমান বাহিনী দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধের জন্য বিভিন্ন আধুনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।

এছাড়াও, প্রশিক্ষণ চলাকালীন দুর্ঘটনা থেকে বাঁচতে বিমান চালকদের জন্য উন্নত সিমুলেটর প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে, যাতে তারা ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি মোকাবিলায় দক্ষ হন।

সামরিক প্রশিক্ষণ ও দুর্ঘটনার প্রভাব:

যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়া একটি দুঃখজনক ঘটনা হলেও এটি সামরিক প্রশিক্ষণের একটি ঝুঁকিপূর্ণ অংশ। পাইলটরা নিয়মিত প্রশিক্ষণে বিভিন্ন জটিল পরিস্থিতি মোকাবিলা করেন, যা যুদ্ধকালীন দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়।

তবে সামরিক বাহিনীর প্রশিক্ষণ চলাকালীন দুর্ঘটনা পাইলটদের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। প্রতিটি দুর্ঘটনার পর পাইলটদের নিরাপত্তা ও প্রশিক্ষণ প্রক্রিয়ার পুনঃমূল্যায়ন করা হয়, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে।

জনসাধারণ ও পরিবারের প্রতি সমবেদনা:

এই দুর্ঘটনার ফলে দুই পাইলটের পরিবার, সহকর্মী ও ভারতীয় বিমানবাহিনী গভীর শোকাহত। ভারত সরকারের পক্ষ থেকে নিহত পাইলটদের পরিবারের জন্য যথাযথ সাহায্যের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় প্রশাসন দুর্ঘটনাস্থল ঘিরে নিরাপত্তা জোরদার করেছে এবং অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটনের জন্য।

রাজস্থানে ভারতের বিমানবাহিনীর এই মর্মান্তিক যুদ্ধবিমান দুর্ঘটনা আবারও প্রমাণ করল, সামরিক প্রশিক্ষণ ও যুদ্ধবিমান পরিচালনা কতটা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। ভারতের নিরাপত্তা বাহিনী এই ধরণের দুর্ঘটনা কমাতে আধুনিক প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণের উপর জোর দিচ্ছে, তবে পাইলটদের জীবন রক্ষা করাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

ভারতীয় বিমানবাহিনী যে এই ধরনের দুর্ঘটনার তদন্ত করে তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও উন্নত করবে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। নিহত পাইলটদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা ও সমবেদনা রইল।

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button