গাজা: ইসরায়েলি বোমাবর্ষণ আর অবরোধের কারণে গাজার হাজার হাজার নারী, পুরুষ ও শিশুর জীবন এখন এক ভয়াবহ সংকটে। তারা প্রতিদিন ক্ষুধার্ত থেকে মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে ত্রাণের জন্য লড়াই করছে। খাদ্য, পানি ও চিকিৎসার জন্য মানুষ নিরন্তর সংগ্রাম করছে, কিন্তু প্রতিবন্ধকতা আর আগ্রাসনের ফলে মানবিক সাহায্য পৌঁছাতে পারছে না।
গাজার মানুষের নিরন্তর যুদ্ধ
গাজার মানুষজন আজ যেন ‘জীবনের জন্য যুদ্ধ’ করছে। খাদ্যের জন্য ঘর থেকে বেরোতেই হচ্ছে প্রাণহানির ভয়ে। ইসরায়েলি বাহিনী প্রায় প্রতিদিন ত্রাণ সরবরাহের জায়গায় গুলি চালায়, যেন ‘রাশিয়ান রুলেট’ খেলছে। এই অবস্থায় খাবার সংগ্রহের জন্য মানুষকে অসহনীয় ঝুঁকি নিতে হচ্ছে।
ত্রাণ নিতে বের হওয়া ফিলিস্তিনি নারী-পুরুষ ও শিশুরা প্রাণ হারাচ্ছে একের পর এক। হাসপাতাল, স্কুল কিংবা ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের আশেপাশেও ইসরায়েলি হামলা চলে, যা মানবিক সংকটকে আরও গভীর করে তোলে।
যুদ্ধবিরতি ও সাহায্য পৌঁছানোর সংকট
২০২৫ সালের মার্চ মাস থেকে ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করেছে, যার ফলে গাজার বিভিন্ন এলাকায় বোমাবর্ষণ এবং অবরোধ অব্যাহত রয়েছে। যুদ্ধবিরতির অস্থায়ী মুহূর্তগুলোতেও গাজাবাসীর জীবন অতর্কিত ভাবে বিপন্ন হয়ে ওঠে। রাস্তা খোলা থাকলেও, মানুষ ত্রাণ পেতে গিয়ে হামলার শিকার হয়।
হামাস যুদ্ধবিরতির শর্ত পরিবর্তনের প্রস্তাব দিয়েছে, যাতে গাজার মানুষের জন্য আন্তর্জাতিক সাহায্যের প্রবেশ নিশ্চিত হয়। তবে ইসরায়েল ও মার্কিন সমর্থিত ‘গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন’ (জিএইচএফ) কার্যক্রম বন্ধ রাখার কারণে সহায়তা গাজায় পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়েছে।
ক্ষুধা ও মৃত্যু: গাজার অন্ধকার বাস্তবতা
গাজায় এখন প্রতিদিন ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। খাদ্যাভাবে দুর্বল হয়ে পড়া শিশুরা, অসুস্থ বৃদ্ধরা, এবং দুর্বল শারীরিক অবস্থায় থাকা নারী-পুরুষরা জীবন ও মৃত্যুর মধ্যে ঝুলে রয়েছে। মানুষ জানে, ট্রাকের কাছে যেতে গিয়ে গুলির শিকার হতে পারে, তবু খাবারের জন্য বাইরে বেরোতে বাধ্য হয়।
বিশ্বের অনেক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন বারবার আহ্বান জানিয়েছে—গাজার অবরোধ তুলে দিয়ে মানুষের জীবন রক্ষা করতে হবে। কিন্তু যুদ্ধবিরতি হলেও সামরিক হামলা ও অবরোধে গাজাবাসীর মানবিক দুর্ভোগ কমছে না।
গাজার অবরোধ ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরেই গাজায় অবরোধ আর বোমাবর্ষণ চালিয়ে আসছে। এর ফলে বিদ্যুৎ, পানি, ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের সংকট তৈরি হয়েছে। গাজার হাসপাতাল ও চিকিৎসা কেন্দ্রগুলো চিকিৎসা সামগ্রী সংকটে, যা শিশু ও অসুস্থদের মৃত্যু বাড়াচ্ছে।
আন্তর্জাতিক সমাজ, জাতিসংঘ ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন গাজার অবরোধ তুলে নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বললেও, ইসরায়েল ও তার মিত্ররা এ বিষয়ে কঠোর অবস্থান বজায় রেখেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্থায়ী শান্তি ছাড়া গাজার সংকট দূর করা সম্ভব নয়। যুদ্ধবিরতি হলে অবশ্যই দ্রুত ত্রাণ পৌঁছানো উচিত, নাহলে শিশু ও সাধারণ মানুষের মৃত্যু বাড়বে বহুগুণে।
গাজার মানুষের আশা ও বিশ্ব দরবারের দায়িত্ব
গাজার মানুষ দুঃখ, নির্যাতন, ও ক্ষুধার মধ্যে জীবনযুদ্ধ চালাচ্ছে। তারা চায় শান্তি, স্থায়ী যুদ্ধবিরতি, যাতে তারা নিরাপদে বাস করতে পারে। খাদ্য, পানি, শিক্ষা ও চিকিৎসা পাওয়ার মৌলিক অধিকার পেতে চায়।
বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলো এখনই গাজার মানবিক সংকট সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আবেদন, যাতে তারা অবরোধ তুলে দিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করে।
গাজার অন্ধকার জীবনে আজ মানুষের শেষ আলো হচ্ছে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও শান্তির আশার প্রতীক্ষা। কখন বিশ্ববাসী গাজার মানুষের আর্তনাদ শুনবে? কখন আসবে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি? এই প্রশ্ন এখনও উত্তরহীন।



