বিশ্ব

টেক্সাসে ভয়াবহ বন্যায় মৃ’তে’র সংখ্যা বেড়ে ৭৮, নি’খোঁ’জ ৪১ জন

টেক্সাসের স্যান অ্যান্টোনিওয়ে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতে তীব্র বন্যা, বিপর্যয় ও মানবিক সংকট চলছে

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যে ভয়াবহ বন্যায় মৃতের সংখ্যা ৭৮-এ পৌঁছেছে। এখনো নিখোঁজ রয়েছে অন্তত ৪১ জন। উদ্ধারকর্মীরা বিপর্যস্তদের উদ্ধার ও নিখোঁজদের খোঁজে মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। গত শুক্রবার স্যান অ্যান্টোনিও শহরের গ্রীষ্মকালীন ক্যাম্পে তীব্র বৃষ্টিপাতের কারণে গুয়াদালুপ নদীর পানি বিপুল মাত্রায় বেড়ে বন্যা সৃষ্টি হয়।

কের কাউন্টিতে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতি, ২৮ শিশুসহ ৬৮ জনের মৃত্যু

কের কাউন্টির নদীতীরবর্তী ‘ক্যাম্প মিস্টিক’ প্লাবিত হয়। ওই ক্যাম্পে অন্তত ২৮ শিশুসহ মোট ৬৮ জনের মৃত্যু নিশ্চিত হয়েছে। সেখানে থাকা ১০ মেয়ে ও ১ জন তত্ত্বাবধায়ক এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বলছে, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে এবং নিখোঁজদের খোঁজে কাজ চলমান।

ক্যাম্প মিস্টিকের ঘটনা: এক ভয়াবহ রাত

শুক্রবার ভোরের আগে মাত্র ৪৫ মিনিটের মধ্যে নদীর পানি ২৬ ফুট (৮ মিটার) উচ্চতায় উঠে যায়। তখন ক্যাম্প মিস্টিকে প্রায় ৭৫০ জন মেয়ে ছিল, যারা অধিকাংশ নিরাপদে সরিয়ে নেয়া সম্ভব হলেও অনেকেই ওই রাতের ঝড়ের শিকার হন। বন্যার পানির তোড়ে গাছপালা ভেঙে গেছে, গাড়ি উল্টে গেছে, আর কাদা-মাটি ও ধ্বংসাবশেষে চাপা পড়া মানুষ খোঁজার কাজ এখন কঠিন হয়ে পড়েছে।

উদ্ধারকাজে নানা ঝুঁকি, সাপের কামড়ে আহত কর্মীরাও

স্থানীয় উদ্ধারকর্মীরা হেঁটে, ট্রাক, হেলিকপ্টার ও ড্রোন ব্যবহার করে বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে বেঁচে থাকা মানুষ খুঁজছেন। তবে কাদা ও ধ্বংসাবশেষের মাঝে কাজ করতে গিয়ে অনেক সময় বিষধর সাপের কামড়েও পড়ছেন তাঁরা।

কের কাউন্টির মরদেহ উদ্ধারকৃত ব্যক্তিদের মধ্যে ১৮ জন প্রাপ্তবয়স্ক এবং ১০টি শিশুর পরিচয় এখনও শনাক্ত করা যায়নি।

টেক্সাস গভর্নরের দৃঢ় সংকল্প

টেক্সাসের গভর্নর গ্রেগ অ্যাবট বলেছেন, “আমরা প্রত্যেক নিখোঁজ ব্যক্তিকে খুঁজে বের করতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাব। কাউকে বাদ দেওয়া হবে না।”

তিনি আরও জানান, আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টায় আরও ঝড়ের পূর্বাভাস রয়েছে, যা উদ্ধারকাজকে আরও কঠিন করে তুলতে পারে। তাই সকলের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্টের জরুরি ব্যবস্থা, ফেডারেল সহায়তা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার কের কাউন্টির জন্য ‘বড় দুর্যোগ পরিস্থিতি’ ঘোষণা করেছেন। তিনি ফেডারেল ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি (FEMA) সেখানে সক্রিয় করেছেন এবং শীঘ্রই নিজে টেক্সাস সফরে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রকাশ করেছেন।

স্থানীয় মানুষের মানবিক সহায়তা ও ত্রাণকাজ

এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে স্থানীয় মানুষদের মানবিক সহায়তা নজরকাড়া। কেউ খাবার রান্না করছেন, কেউ আশ্রয় দিচ্ছেন, আবার কেউ ত্রাণসামগ্রী জোগাড় করে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন। সামাজিক সংগঠনগুলো ও স্বেচ্ছাসেবকরা একসাথে কাজ করে আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন করছেন।

টেক্সাস বন্যা: কারণ ও প্রভাব

বন্যার কারণ

টেক্সাসে এ বন্যার প্রধান কারণ ছিল হঠাৎ তীব্র বৃষ্টিপাত ও নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়া। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের কারণে এই ধরনের ভয়াবহ বন্যার ঝুঁকি দিন দিন বেড়ে চলেছে।

মানব জীবনের ক্ষতি ও অর্থনৈতিক প্রভাব

৭৮ জনের মৃত্যুর পাশাপাশি হাজার হাজার মানুষের জীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছে। বহু বাড়িঘর, সড়কপথ, ব্রীজ ও পরিকাঠামো ধ্বংস হয়েছে। কের কাউন্টি ছাড়াও আশপাশের এলাকায় বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, যা অর্থনৈতিকভাবে ওই অঞ্চলকে ব্যাপক ক্ষতির মুখে ফেলেছে।

বিশ্বব্যাপী বন্যা: জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ চিত্র

বিশ্বজুড়ে গত কয়েক বছরে বন্যার ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উষ্ণতার মাত্রা বাড়ছে, বৃষ্টি অনিয়মিত হচ্ছে, যা থেকে বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। টেক্সাসের এই বন্যাও এ কারণেই এক ভয়াবহ সংকেত হয়ে দাঁড়িয়েছে।

টেক্সাসের বন্যায় সুরক্ষা ও করণীয়

  • বন্যা প্রবণ এলাকায় বাসিন্দাদের সতর্ক থাকা জরুরি।
  • দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুতি নেয়ার পাশাপাশি স্থানীয় কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মেনে চলা প্রয়োজন।
  • জরুরি অবস্থায় আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে নিরাপদ থাকা।
  • সতর্কতা বাড়াতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও সংবাদমাধ্যম নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা।

টেক্সাসের ভয়াবহ বন্যা শুধু মানবিক একটি সংকট নয়, এটি আমাদের জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ প্রভাবেরও এক দৃষ্টান্ত। এই দুর্যোগ থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের দুর্যোগ মোকাবেলা ব্যবস্থা আরও উন্নত করতে হবে। তত্ক্ষণাৎ নিহত ও নিখোঁজদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে, আক্রান্ত সকলের দ্রুত উদ্ধার ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button