ইউক্রেনে এবার ৩ শতাধিক ড্রোন দিয়ে রাশিয়ার হামলা

ইউক্রেনজুড়ে আবারও ভয়াবহ ড্রোন হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। মাত্র ৫ ঘণ্টায় ছোড়া হয় ৩০০-এর বেশি ড্রোন। কিয়েভসহ বিভিন্ন শহরে বিস্ফোরণ ও ধ্বংসযজ্ঞে আতঙ্কিত সাধারণ মানুষ। পাল্টা জবাবে রাশিয়ার ঘাঁটিতেও হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন।
ভয়াবহ ড্রোন হামলায় কাঁপলো ইউক্রেন
গতকাল শনিবার (৫ জুলাই) রাতে ইউক্রেনের বিভিন্ন অঞ্চলে একযোগে ৩০০টিরও বেশি ড্রোন ছুড়েছে রাশিয়ার বাহিনী। দেশটির প্রতিরক্ষা বিভাগ জানিয়েছে, এটি চলমান যুদ্ধে অন্যতম বড় এবং সমন্বিত ড্রোন হামলা। কিয়েভ, দোনেৎস্ক, জাপোরিঝিয়া, খারকিভসহ অনেক শহরের আকাশে সারারাত বিস্ফোরণ ও ড্রোনের শব্দ শোনা গেছে।
ইউক্রেনের বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনী দাবি করেছে, তারা রাতভর অপারেশনে দেড় শতাধিক রাশিয়ান ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করতে সক্ষম হয়েছে।
কিয়েভে আতঙ্কিত রাত, প্রাণ হারিয়েছেন সাধারণ মানুষ
রাজধানী কিয়েভে এই হামলা নিয়ে শহরের প্রশাসন জানিয়েছে, ড্রোন বিস্ফোরণে বেশ কিছু আবাসিক ভবন ও স্থাপনায় আগুন ধরে যায়। জরুরি সেবা বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, অন্তত একজন নিহত ও ২৩ জন আহত হয়েছেন। কিয়েভের রেলস্টেশন, হাসপাতাল ও কনস্যুলেট ভবন আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
রাতের আঁধারে বেজে ওঠে বিমান হামলার সতর্কতা। হাজারো মানুষ আশ্রয় নেয় মেট্রো স্টেশন ও ভূগর্ভস্থ পার্কিং লটে।
পাল্টা জবাব দিয়েছে ইউক্রেনীয় বাহিনী
রাশিয়ার ভোরোনেজ অঞ্চলের একটি বিমানঘাঁটিতে পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা বিভাগ জানিয়েছে, এই হামলায় ধ্বংস হয়েছে রুশ প্রশিক্ষণ বিমান ও গ্লাইড বোমা।
রাশিয়া নিশ্চিত করেছে, তাদের বিমান চলাচল কয়েকটি শহরে সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। তবে তারা দাবি করেছে, মাত্র ৫ ঘণ্টায় ৫০টির বেশি ইউক্রেনীয় ড্রোন ধ্বংস করেছে রুশ বাহিনী।
খারকিভ সীমান্তে নতুন হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে রাশিয়া
ইউক্রেনের সেনাপ্রধান সতর্ক করে জানিয়েছেন, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় খারকিভ এলাকায় রাশিয়া আবারও আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তিনি বলেন, “আমরা প্রতিরোধে প্রস্তুত, তবে প্রয়োজন আরও সামরিক সহায়তা।”
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনে অস্ত্র সহায়তা কমিয়ে দিয়েছে। এর ফলে ইউক্রেনীয় প্রতিরোধ দুর্বল হয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
জাতিসংঘের উদ্বেগ ও যুদ্ধবিরতির আহ্বান
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এই ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলাকে চলমান যুদ্ধের অন্যতম ভয়াবহ ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করে তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “এই ধরণের ভয়াবহতা বেসামরিক নাগরিকদের জীবনের জন্য হুমকি এবং আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন।”
তিনি অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান এবং বলেন, “উভয় পক্ষকে এখনই আলোচনায় বসে একটি রাজনৈতিক সমাধানে পৌঁছাতে হবে।”
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া: ট্রাম্প-পুতিন আলাপ ব্যর্থ
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট পুতিনের সাম্প্রতিক ফোনালাপ ফলপ্রসূ হয়নি। ট্রাম্প নিজেই স্বীকার করেন, “এই আলোচনায় কোনো অগ্রগতি হয়নি। পুতিন এখনো যুদ্ধ বন্ধের কোনো ইচ্ছা দেখাচ্ছেন না।”
ইউক্রেনীয় জনগণ ট্রাম্পের এই অবস্থানে হতাশা প্রকাশ করেছেন। কিয়েভের এক বাসিন্দা বলেন, “পুতিন কেবল শক্তির ভাষা বোঝে, আর ট্রাম্প সে ভাষায় কথা বলছেন না।”
বায়ু দূষণের মাত্রা ছাড়ালো সর্বোচ্চ সীমা
রাশিয়ার ড্রোন হামলার পর কিয়েভের পরিবেশ দূষণ সংক্রান্ত মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রাতের বিস্ফোরণের কারণে শহরের বাতাসে বিষাক্ত কণার পরিমাণ আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে।
নাগরিকদের ঘরের জানালা বন্ধ রাখা, এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার এবং ঘরের বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার আশঙ্কা
আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, রাশিয়ার টানা ড্রোন ও মিসাইল হামলা এবং পশ্চিমা দুনিয়ার দ্বিধাদ্বন্দ্বপূর্ণ সমর্থন ইউক্রেনকে কঠিন এক পরিস্থিতির মুখে ঠেলে দিয়েছে।
বিশ্লেষক ডেভিড মুর বলেন, “যুদ্ধ থামার কোনো ইঙ্গিত নেই। বরং রাশিয়া তাদের সামরিক কৌশল আরও হিংস্র করে তুলছে।”
“রাশিয়ার এই আক্রমণ আমাদের ইতিহাসের ভয়াবহতম রাত হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে”— ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি
সারসংক্ষেপ
রাশিয়া ও ইউক্রেনের এই উত্তেজনা আবারও প্রমাণ করলো, যুদ্ধ এখনো বহুদূর বিস্তৃত। ৩০০-রও বেশি ড্রোন ব্যবহার করে হামলা চালানো শুধু যুদ্ধের ভয়াবহতা নয়, বরং এটি এক নতুন কৌশলেরই প্রকাশ।
বিশ্লেষকদের মতে, পরিস্থিতি কীভাবে মোড় নেবে তা নির্ভর করছে আন্তর্জাতিক মহলের পরবর্তী পদক্ষেপ ও পশ্চিমা শক্তিগুলোর প্রতিক্রিয়ার ওপর।
এম আর এম – ০১৮৯, Signalbd.com