বিশ্ব

ইসরাইলের বিমানবন্দরে ইয়েমেনের হাইপারসনিক মিসাইল হামলা!

 গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসনের জবাবে ইয়েমেনের সেনাবাহিনী এক হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইসরাইলের বেন গুরিয়ন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লক্ষ্য করে হামলা চালায়। হামলার পর বিমানবন্দর অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। উত্তেজনা আরও বাড়ছে মধ্যপ্রাচ্যে।

হাইপারসনিক মিসাইল হামলা

রোববার (৬ জুলাই) সকালবেলায় তেল আবিবের কাছাকাছি অবস্থিত ইসরাইলের ব্যস্ততম বেন গুরিয়ন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইয়েমেনের সশস্ত্র বাহিনী এক বিশেষ সামরিক অভিযান পরিচালনা করে। এতে ব্যবহৃত হয় ‘ফিলিস্তিন-২’ নামক হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র।

ইয়েমেনি সশস্ত্র বাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইয়াহিয়া সারি টেলিভিশনে এক বিবৃতিতে জানান, “আমাদের হামলা ছিল সুনির্দিষ্ট এবং পুরোপুরি সফল। বিমানবন্দরের কার্যক্রম সাময়িকভাবে থেমে গেছে এবং ফ্লাইট ওঠানামা স্থগিত রয়েছে।”

হামলার সময় বিমানবন্দরের অবস্থা

হামলার পর পরই বেন গুরিয়ন বিমানবন্দর থেকে সব আগমন ও প্রস্থান ফ্লাইট বাতিল করা হয়। ইসরায়েলি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ জানায়, বিমানবন্দর পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।

সেই মুহূর্তে ইসরাইল অধিকৃত অঞ্চলগুলো কার্যত আন্তর্জাতিক আকাশপথ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ডেড সি এলাকার বিভিন্ন স্থানে সাইরেন বাজতে শুরু করে। যদিও এখনো হতাহত বা বড় কোনো ক্ষয়ক্ষতির আনুষ্ঠানিক তথ্য প্রকাশ পায়নি।

আগের হামলা ও সাম্প্রতিক উত্তেজনা

এই ঘটনার মাত্র এক সপ্তাহ আগেই (১ জুলাই) ইয়েমেনি সেনাবাহিনী একই ধরনের হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে এই বিমানবন্দরে হামলা চালায়। তখনও ‘ফিলিস্তিন-২’ মিসাইল ব্যবহারের কথা জানিয়েছিল ইয়াহিয়া সারি।

গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যামূলক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ হিসেবে ইয়েমেনি হুতি বিদ্রোহীরা আগের মতোই আকাশপথে এবং সমুদ্রপথে ইসরাইলের উপর চাপ সৃষ্টি করে আসছে।

সমান্তরালে ড্রোন হামলা ও কৌশলগত সমুদ্র অবরোধ

হাইপারসনিক মিসাইল হামলার সঙ্গে সঙ্গেই ইয়েমেনি বাহিনী ইলাত, তেল আবিব ও আশকেলন অঞ্চলে একযোগে ড্রোন হামলা চালায়। এই হামলা ছিল সমন্বিত ও পরিকল্পিত, যা ইসরায়েলের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোকেও লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে।

তাছাড়া, ইয়েমেন সমুদ্রপথে কৌশলগত অবরোধ জারি করেছে, যার ফলে ইসরায়েলের সামরিক রসদ পরিবহন ব্যাহত হচ্ছে। এতে আন্তর্জাতিক মহলও গাজায় চলমান মানবিক সংকটের প্রতি দৃষ্টি দিতে বাধ্য হচ্ছে।

ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া: প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সক্রিয়

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, হামলার সময় তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় ছিল এবং হামলা প্রতিরোধে কাজ করেছে। তবে বাস্তবে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।

ইসরাইলি সরকার এখন পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে বড় কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি, তবে সামরিক প্রস্তুতি ও প্রতিরক্ষামূলক নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্যে নতুন সামরিক ভারসাম্য?

এই ঘটনার মাধ্যমে একদিকে যেমন ইয়েমেন তার সামরিক সক্ষমতার একটি নতুন মাত্রা দেখিয়েছে, অন্যদিকে ইসরাইলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ওপর প্রশ্ন উঠেছে। হাইপারসনিক মিসাইল এমন এক প্রযুক্তি, যেটি চলার পথে গতিপথ পরিবর্তনে সক্ষম এবং একে প্রতিরোধ করা অত্যন্ত কঠিন।

বিশ্লেষকদের মতে, ইয়েমেনের এমন সামরিক অভিযান শুধুমাত্র ইসরাইল নয়, গোটা মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা কাঠামোকেই চ্যালেঞ্জ করছে।

“তেল আবিবের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিরোধ চলবে যতক্ষণ না গাজায় আগ্রাসন বন্ধ হয়”—ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইয়াহিয়া সারি

ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

এই হামলা মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলবে বলে আশঙ্কা করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। একদিকে গাজায় চলমান সংঘাত, অন্যদিকে ইয়েমেনের সরাসরি হস্তক্ষেপ—এই দুই মিলিয়ে পরিস্থিতি জটিলতর হয়ে উঠছে।

সামনের দিনগুলোতে ইসরাইলের জবাবী পদক্ষেপ কেমন হবে, তা নির্ধারণ করে দেবে পরিস্থিতি কোন দিকে গড়াবে।

শেষকথা

গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রেক্ষিতে ইয়েমেনের হাইপারসনিক মিসাইল হামলা এক নতুন ধরণের সামরিক বার্তা দিয়েছে। এই বার্তা শুধু ইসরাইলের উদ্দেশেই নয়, গোটা বিশ্ব জানছে—মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ এখন নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করছে।

এম আর এম – ০১৮৮, Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button