বিশ্ব

যুক্তরাষ্ট্রের  টেক্সাসে শতাব্দীর ভয়াবহ বন্যা: ২০ শিশু নিখোঁজ, ২৪ জনের মৃত্যু

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে গত এক শতাব্দীর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। আকস্মিক প্রবল বর্ষণে নদীর পানি ভয়াবহভাবে বেড়ে যাওয়ায় অন্তত ২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। একটি গ্রীষ্মকালীন কিশোরী ক্যাম্প থেকে নিখোঁজ রয়েছে ২০ মেয়ে শিশু। উদ্ধার কাজ চলছে পুরো জোরে।

কী ঘটেছে

টেক্সাসের সেন্ট্রাল অঞ্চলে আকস্মিক বৃষ্টিপাতের ফলে সৃষ্টি হয়েছে শতাব্দীর ভয়াবহ বন্যা। মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে নদীর পানি বিপজ্জনকভাবে বেড়ে যাওয়ায় বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সবচেয়ে বিপর্যয়কর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে একটি গ্রীষ্মকালীন কিশোরী ক্যাম্পে, যেখান থেকে অন্তত ২০ শিশু নিখোঁজ রয়েছে। কর্তৃপক্ষ এখনো অনুসন্ধান ও উদ্ধার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

টেক্সাসে বন্যার বর্তমান অবস্থা

টেক্সাসের কের কাউন্টিতে শুক্রবার ভোর থেকে শুরু হওয়া ভারী বৃষ্টিপাত সন্ধ্যা পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। মাত্র ৪৫ মিনিটে গুয়াদালুপ নদীর পানি প্রায় ২৬ ফুট বেড়ে যায়, যা ১৯৮৭ সালের রেকর্ডকেও ছাড়িয়ে গেছে।

বৃষ্টিপাত এতটাই ভয়াবহ ছিল যে, একদিনেই প্রায় ১২ ইঞ্চি বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, স্থানীয় প্রশাসন একে ‘শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্যোগ’ হিসেবে উল্লেখ করেছে।

গ্রীষ্মকালীন ক্যাম্পে মৃত্যুফাঁদ: নিখোঁজ ২০ শিশু

সবচেয়ে করুণ চিত্রটি দেখা গেছে সেন্ট্রাল টেক্সাসের একটি গ্রীষ্মকালীন কিশোরী ক্যাম্পে, যেখানে রাতের অন্ধকারে হঠাৎই পানি ঢুকে পড়ে। সেখানে অবস্থানরত প্রায় ৭০০ শিশুর মধ্যে অন্তত ২০ কিশোরী এখনো নিখোঁজ।

ক্যাম্প পরিচালকের মৃত্যুর খবরও নিশ্চিত করেছে কর্তৃপক্ষ। শিশুরা গভীর রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় ছিলেন, আর এই সময় হঠাৎ বন্যার পানি এসে সবকিছু তলিয়ে নেয়।

উদ্ধার কাজ চলছে: ২৪ ঘণ্টার রেসকিউ অপারেশন

উদ্ধারকাজে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও সামরিক বাহিনীর যৌথ টিম কাজ করছে। হেলিকপ্টার ও নৌকায় চলছে অনুসন্ধান। অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় উদ্ধার কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

টেক্সাস গভর্নর গ্রেগ অ্যাবট জরুরি অবস্থা জারি করেছেন এবং জানিয়েছেন, “আমরা প্রতিটি নিখোঁজ মানুষের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।”

স্থানীয় প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া ও ব্যাখ্যা

প্রশ্ন উঠেছে, কেন বন্যার পূর্বাভাস থাকলেও আগে থেকেই মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়নি। প্রশাসনের এক কর্মকর্তা বলেন, “পূর্বাভাস ছিল বটে, তবে আমরা যে ধরনের অতিমাত্রার বৃষ্টিপাত পেয়েছি, সেটি কেউই আশা করেনি।”

টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষতির ফলে অনেক এলাকা থেকে তথ্য সংগ্রহ করাও কঠিন হয়ে পড়েছে।

আগেও কি এমন হয়েছিল?

টেক্সাসে এর আগে ১৯৮৭ সালে ভয়াবহ বন্যা হয়েছিল, কিন্তু এবারের মতো এত তীব্র গতিতে পানি বৃদ্ধি দেখা যায়নি। এই বছর বৃষ্টির মাত্রা ও পানির উচ্চতা দুইই আগের সব রেকর্ডকে ছাপিয়ে গেছে।

স্থানীয় অধিবাসীরা জানান, তারা কখনো এত দ্রুত নদীর পানি বেড়ে উঠতে দেখেননি।

রাষ্ট্রপতি ও নেতাদের প্রতিক্রিয়া

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই দুর্যোগকে “ভয়াবহ ও মর্মান্তিক” বলে উল্লেখ করেছেন এবং ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন। গভর্নর অ্যাবট সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “এটা এমন এক সময়, যখন আমাদের সৃষ্টিকর্তার প্রতি আরও বেশি নির্ভর করতে হবে।”

ভবিষ্যত কী বলছে?

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আবারও ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। তাই নতুন করে ভূমিধস বা আরও বন্যার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

সিভিল ডিফেন্স বিভাগ আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, নিখোঁজের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে এক সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।

“এই মুহূর্তে আমাদের সব মনোযোগ নিখোঁজ শিশুদের খুঁজে পাওয়ার দিকে”—টেক্সাস গভর্নর গ্রেগ অ্যাবট

মানবিক বিপর্যয় ও ভবিষ্যতের প্রস্তুতি

টেক্সাসে যে দুর্যোগ দেখা দিয়েছে, তা শুধু প্রাকৃতিক নয়, এটি মানবিক বিপর্যয়ও বটে। এত শিশুর নিখোঁজ হয়ে যাওয়া একটি জাতির হৃদয়ে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করে। প্রশাসনের উচিত ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতির জন্য আরও সক্রিয় পূর্বপ্রস্তুতি রাখা।

তবে প্রশ্ন থেকে যায়—প্রযুক্তি ও আগাম সতর্কবার্তার যুগে আমরা কি সত্যিই প্রস্তুত ছিলাম?

এম আর এম – ০১৮৪, Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button