গাজায় নিজেদের ছোড়া গুলিতে নিহত ৩১ ইসরায়েলি সেনা

গাজায় ইসরায়েলের চলমান সামরিক অভিযানের মধ্যে ‘ফ্রেন্ডলি ফায়ার’-এর ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৩১ ইসরায়েলি সেনা। দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু ও যুদ্ধক্ষেত্রের বিভিন্ন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার কারণে আরও অনেকে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির সামরিক বাহিনী।
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর সামরিক অভিযানের সময় ভুল করে নিজেদের ছোড়া গুলিতে নিহত হয়েছেন অন্তত ৩১ সেনা। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী ঘনিষ্ঠ এক রেডিও স্টেশনের রিপোর্টে এ তথ্য উঠে এসেছে। এছাড়া, অভিযানে অংশগ্রহণকারী আরও অনেক সেনা যুদ্ধক্ষেত্রের দুর্ঘটনায় মারা গেছেন।
ঘটনার বিস্তারিত: ‘ফ্রেন্ডলি ফায়ার’-এ ৩১ সেনার মৃত্যু
গাজায় চলমান যুদ্ধের মধ্যে নিজেদের সহকর্মীদের ভুল গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৩১ জন ইসরায়েলি সেনা। সামরিক ভাষায় একে বলা হয় ‘ফ্রেন্ডলি ফায়ার’। শুক্রবার ইসরায়েলি আর্মি রেডিও তাদের এক প্রতিবেদনে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করে।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে গাজার ভেতরে ইসরায়েল স্থল অভিযান শুরু করার পর থেকে এখন পর্যন্ত এই ৩১ জন ভুল গুলিতে নিহত হয়েছেন। সামরিক বাহিনীর তথ্যমতে, এ ঘটনাগুলো মূলত সংঘটিত হয়েছে যুদ্ধক্ষেত্রে সমন্বয়ের ঘাটতি ও ভুল বোঝাবুঝির কারণে।
অভিযান চলাকালীন দুর্ঘটনায় মৃত্যু
শুধু ‘ফ্রেন্ডলি ফায়ার’ নয়— গাজার অভ্যন্তরে সামরিক অভিযান পরিচালনার সময় আরও অনেক ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছেন নানাবিধ দুর্ঘটনায়।
বিভিন্ন সূত্র অনুযায়ী, অভিযান পরিচালনা সংশ্লিষ্ট দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৭২ জন সেনা। এদের অনেকে গোলাবারুদ ব্যবহারে অসাবধানতার কারণে মারা যান, কেউ সাঁজোয়া যানের চাপায় পিষ্ট হন, আবার কেউ মারা যান উচ্চ স্থান থেকে পড়ে গিয়ে।
এছাড়াও, কর্মক্ষেত্রের অন্যান্য দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে আরও ৫ সেনার। তাদের কেউ যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে গিয়ে ভুল করেছেন, কেউবা সামরিক সরঞ্জামের ওজন সামলাতে না পেরে আহত হন এবং পরবর্তীতে মৃত্যুবরণ করেন।
কিভাবে শুরু হলো এই অভিযান?
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক হামলার পর গাজায় বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। তার এক মাস পর শুরু হয় পূর্ণাঙ্গ স্থল অভিযান। এই অভিযানে প্রথম থেকেই বিপুল সংখ্যক সেনা জড়িত ছিল।
তবে অভিযান যত গভীরে গিয়েছে, ততই বেড়েছে দুর্ঘটনা ও সমন্বয়হীনতার সমস্যা। ফলে শুধু শত্রুপক্ষের আক্রমণে নয়, নিজেদের কর্মকাণ্ডের কারণেও ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা বেড়েছে।
সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরীণ সংকট?
ইসরায়েলের সেনাবাহিনীতে ক্রমবর্ধমান এই দুর্ঘটনার সংখ্যা বড় ধরনের প্রশ্ন তুলছে বাহিনীর প্রস্তুতি, সমন্বয় এবং অভ্যন্তরীণ কাঠামো নিয়ে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সেনাদের মাঝে প্রশিক্ষণের অভাব, যুদ্ধক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে দুর্বলতা, এবং যুদ্ধের চাপ – এই তিনটি বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এমন দুর্ঘটনার জন্য।
এছাড়া সেনা পরিবারগুলোতেও তৈরি হচ্ছে আতঙ্ক। তাদের সন্তানরা যে শত্রুর আক্রমণে নয়, বরং নিজেদের ভুলে প্রাণ হারাচ্ছে — তা মেনে নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে।
পরিসংখ্যান: ইসরায়েলি ক্ষয়ক্ষতির চিত্র
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত গাজায় নিহত হয়েছেন মোট ৮৮২ ইসরায়েলি সেনা। এর মধ্যে ৪৪০ জন নিহত হয়েছেন শুধুমাত্র স্থল অভিযানে।
আহত হয়েছে আরও প্রায় ৬ হাজার ৩২ জন সেনা। আর এই পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট, শুধু যুদ্ধক্ষেত্রেই নয়, নিজেদের ভেতরকার বিশৃঙ্খলাও ভয়াবহ ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
গাজার মানবিক বিপর্যয়: পাল্লা দিয়ে বাড়ছে হতাহতের সংখ্যা
একদিকে ইসরায়েলি সেনাদের মধ্যে নিজেরা নিজেদের হত্যা করছে ভুলবশত, অন্যদিকে গাজার মানুষের ওপর চলছে অবিরাম হামলা।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৫৭ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি, যাদের মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু। আহত হয়েছেন আরও প্রায় ১ লাখ ৩৫ হাজার মানুষ।
যুদ্ধবিরতির আহ্বান অব্যাহত থাকলেও, ইসরায়েলি বাহিনী থেমে নেই। বরং প্রতিদিনই নতুন নতুন হামলা ও আগ্রাসনের তথ্য উঠে আসছে।
কী বার্তা দিচ্ছে এই দুর্ঘটনাগুলো?
বিশ্লেষকদের মতে, ‘ফ্রেন্ডলি ফায়ার’ ও দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর এই প্রবণতা ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর দক্ষতা ও কৌশলগত দুর্বলতাকে সামনে নিয়ে এসেছে।
এর ফলে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও প্রশ্ন উঠছে— ইসরায়েলের মতো একটি প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত বাহিনী কীভাবে এমন ভুল করে বসে?
“ফ্রেন্ডলি ফায়ার ইসরায়েলি বাহিনীর অভ্যন্তরীণ অব্যবস্থাপনাকেই প্রমাণ করছে”— আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক ড. ইউসুফ কারিম।
সামনে কী অপেক্ষা করছে?
গাজায় যুদ্ধ চলছেই, casualties বাড়ছেই — আর এর মধ্যে নিজেদের ভুলেই প্রাণ হারাচ্ছে সেনারা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যুদ্ধ কেবল শত্রুর সঙ্গে নয়, কখনও কখনও নিজেরা নিজেরাও যুদ্ধক্ষেত্রে ঝুঁকির কারণ হয়ে ওঠে।
তবে প্রশ্ন রয়ে যায় — এই ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে ইসরায়েল কি সেনা মৃত্যুর হার কমাতে পারবে, নাকি আরও ভয়াবহ পরিণতির দিকে এগিয়ে যাবে?
এম আর এম – ০১৭২, Signalbd.com