বিশ্ব

ইরান নতুন স্থানে পারমাণবিক কর্মসূচি শুরু করতে পারে: ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, ইরানের পরমাণু কর্মসূচি মার্কিন হামলার ফলে পেছালেও, তেহরান নতুন করে অন্য স্থানে তা শুরু করতে পারে। পারমাণবিক পরিদর্শনে অনাগ্রহ ও ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণে অটল অবস্থান ইরানকে ঘিরে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ আরও বাড়াচ্ছে।

যখন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরাইলের সাম্প্রতিক হামলার কারণে ইরানের পূর্ববর্তী পরমাণু কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটেছে বলে দাবি করা হচ্ছে। তবে, ট্রাম্পের মতে, ইরান এখনও পুরোপুরি পরমাণু কর্মসূচি থেকে সরে আসেনি।

মার্কিন প্রেসিডেন্টের বক্তব্য ও শঙ্কা

এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় ট্রাম্প বলেন, “আমরা ইরানের পরমাণু কার্যক্রমে একটি বড় ধাক্কা দিয়েছি। তবে তেহরান নতুন করে অন্য কোনো স্থানে এ কার্যক্রম পুনরায় শুরু করতে পারে।”

“ইরান নতুন কোনো গোপন স্থানে কর্মসূচি চালু করলে, তা গোটা বিশ্বের নিরাপত্তার প্রশ্ন হয়ে দাঁড়াবে”—ডোনাল্ড ট্রাম্প

তিনি আরও জানান, ইরান এখনো পর্যন্ত আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (IAEA) বা মার্কিন পর্যবেক্ষকদের কাছে পরিদর্শনের অনুমতি দেয়নি এবং ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ (enrichment) বন্ধেও রাজি হয়নি। এই অবস্থানকে আন্তর্জাতিক মহলে ‘উদ্বেগজনক ও বিপজ্জনক’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে।

হামলা ও প্রতিক্রিয়া

গত মাসে ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র যৌথভাবে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালায়। মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতরের মুখপাত্র শন পারনেল জানান, “আমাদের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ইরানের কর্মসূচি অন্তত এক থেকে দুই বছর পিছিয়ে গেছে। তিনটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে।”

তবে কিছু গোয়েন্দা রিপোর্ট বলছে, ইরানের মূল পারমাণবিক উপাদানগুলো এখনো অক্ষত থাকায় এ বিলম্ব দীর্ঘমেয়াদী নয়। এমন অবস্থায় ইরান নতুন করে কর্মসূচি শুরু করলে সেটা শুধুমাত্র সময়ের ব্যাপার বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

পার্লামেন্টের পদক্ষেপ ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

ইরানের পার্লামেন্ট সম্প্রতি একটি বিল পাস করেছে, যার মাধ্যমে তারা আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (IAEA) সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিত করে। দেশটির প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান এই বিলে অনুমোদন দিয়েছেন।

এই সিদ্ধান্তের ফলে, এখন থেকে IAEA’র কোনো পরিদর্শন করতে চাইলে, সেটি তেহরানের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের অনুমোদন ছাড়া সম্ভব নয়। পশ্চিমা বিশ্ব এই পদক্ষেপকে ‘গোপন পরমাণু কর্মসূচি পরিচালনার দিক’ হিসেবে দেখছে।

২০১৫ সালের চুক্তি এবং ট্রাম্প প্রশাসনের ভূমিকা

ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে ২০১৫ সালে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল, যেখানে ইরান তার কর্মসূচির নির্দিষ্ট কিছু দিক সীমিত করতে রাজি হয়। কিন্তু ২০১৮ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট থাকার সময় যুক্তরাষ্ট্র ওই চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসে এবং ইরানের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

এরপর থেকেই পারমাণবিক ইস্যুতে ইরান ও পশ্চিমা বিশ্বের মধ্যকার সম্পর্ক আরও জটিল হয়ে ওঠে। বর্তমান পরিস্থিতি সেই উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

পারমাণবিক কার্যক্রমের ভবিষ্যৎ এবং অঞ্চলভিত্তিক উদ্বেগ

মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার প্রেক্ষিতে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ইরান যদি সত্যিই গোপনে নতুন কোনো স্থানে পরমাণু কর্মসূচি শুরু করে, তবে সেটি গোটা অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে উঠতে পারে।

ইসরায়েল ইতোমধ্যেই ঘোষণা দিয়েছে, তারা কোনোভাবেই ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্রধারী রাষ্ট্র হতে দেবে না। অপরদিকে, ইরানও জানিয়েছে, তাদের কর্মসূচি শুধুমাত্র শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে, যা বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য ব্যবহৃত হবে।

বিশেষজ্ঞদের মত

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. হাসান জাফর বলেন, “ট্রাম্পের মন্তব্য শুধুমাত্র রাজনৈতিক নয়, বরং গোয়েন্দা তথ্যভিত্তিক আশঙ্কাও হতে পারে। ইরান অতীতে গোপন স্থানে পারমাণবিক গবেষণা চালিয়েছে, তাই এই আশঙ্কা একেবারে অমূলক নয়।”

তিনি আরও বলেন, “এই পরিস্থিতি যদি অব্যাহত থাকে, তবে আন্তর্জাতিক চাপ আরও বাড়বে এবং মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতের আশঙ্কাও তৈরি হতে পারে।”

সারসংক্ষেপ

ইরান ও পশ্চিমা বিশ্বের মধ্যে পারমাণবিক ইস্যুতে উত্তেজনা নতুন মোড় নিচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্টের শঙ্কা যদি বাস্তবে পরিণত হয়, তবে তা আন্তর্জাতিক রাজনীতির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠবে। এখন দেখার বিষয়, তেহরান তার অবস্থানে স্থির থাকে নাকি আন্তর্জাতিক চাপের মুখে নীতিগত পরিবর্তন আনে।

বিশ্লেষকদের মতে, পরবর্তী সপ্তাহগুলোতেই এই পরিস্থিতির মোড় স্পষ্ট হয়ে উঠবে।

এম আর এম – ০১৬৭, Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button