গাজায় যুদ্ধবিরতি আলোচনায় প্রস্তুত হামাস

গাজায় যুদ্ধবিরতি আলোচনায় নতুন আশা: হামাসের ইতিবাচক জবাব
ফিলিস্তিনের গাজা পট্টিতে দীর্ঘদিন ধরে চলমান সংঘর্ষ ও উত্তেজনার মাঝে নতুন এক যুদ্ধবিরতি আলোচনার সূচনা হতে যাচ্ছে। সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস, যা গাজার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে।
টেলিগ্রাম চ্যানেলে দেওয়া এক বিবৃতিতে হামাস জানায়, তারা মধ্যস্থতাকারীদের কাছে তাদের ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জমা দিয়েছে এবং যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার জন্য নতুন আলোচনার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। এই পদক্ষেপ গাজায় দীর্ঘদিনের যুদ্ধ বন্ধে বড় একটি আশা জাগাচ্ছে।
গাজার ভোগান্তি ও ধ্বংসযজ্ঞ
গত কয়েক সপ্তাহে ইসরায়েলের বিমান হামলা ও গোলাবর্ষণে গাজার অধিকাংশ এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। রাস্তাঘাট, বাসস্থান, হাসপাতাল ও স্কুল সহ প্রায় সব অবকাঠামো ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই পরিস্থিতিকে মানবিক সংকট হিসেবে ঘোষণা করেছে।
গাজার জনগণের জীবন নিত্যদিনের আতঙ্কে কেটে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতির অবসান ঘটাতে যুদ্ধবিরতির দিকে আরও দ্রুত এগোনোর দাবি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে আসছে।
আলোচনার বিস্তারিত ও ফিলিস্তিনের প্রত্যাশা
একজন বরিষ্ঠ ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা বিবিসি সংবাদকে জানিয়েছেন, হামাস প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতির সামগ্রিক কাঠামো মেনে নিয়েছে। তবে তারা কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শর্তের আলোকে পরিবর্তন অনুরোধ করেছে। বিশেষ করে, তারা চায়, ২০ মাস মেয়াদের এই যুদ্ধবিরতি স্থায়ীভাবে ভঙ্গ হলে আবারও যুদ্ধ শুরু করা যাবে না—এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে স্পষ্ট নিশ্চয়তা দিতে হবে।
অন্যদিকে, হামাসের মিত্র ইসলামিক জিহাদ গোষ্ঠীও যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে, তবে তারা চাইছে এই প্রক্রিয়া যেন স্থায়ী ও টেকসই হয়।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের অবস্থান
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন, ইসরায়েল ৬০ দিনের জন্য যুদ্ধবিরতির শর্তগুলো মেনে নিয়েছে। এই সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার লক্ষ্যে কাজ করবে।
ট্রাম্প হামাসকেও আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, “এ চূড়ান্ত প্রস্তাব গ্রহণ করাই সর্বোত্তম সিদ্ধান্ত, এর থেকে ভালো আর কিছু আসবে না। না হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে।”
ইসরায়েলের পক্ষ থেকে এখনও আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি, তবে তারা নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা স্বার্থে শর্তাবলী পূরণের ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে আছে।
জিম্মি বিনিময়: এক গুরুত্বপূর্ণ শর্ত
উল্লেখযোগ্য অংশ হলো, এই যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ধাপে ধাপে ১০ জন জীবিত ইসরায়েলি জিম্মিকে এবং ১৮ জন জিম্মির মরদেহ ইসরায়েলের কাছে হস্তান্তর করার পরিকল্পনা রয়েছে। বিনিময়ে গাজায় আটক প্রায় ৫০ জন ফিলিস্তিনি বন্দীর মুক্তি দেওয়া হবে। এর মধ্যে অন্তত ২০ জন এখনও জীবিত বলে মনে করা হচ্ছে।
এই বিনিময়ই আলোচনার অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু, যা দুই পক্ষের মধ্যে বিশ্বাস ও সমঝোতার সেতুবন্ধন গড়ে তুলতে পারে।
মানবিক সহায়তা নিশ্চিতকরণ
যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে আরও উল্লেখ আছে, জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটির মাধ্যমে গাজায় পর্যাপ্ত মানবিক সহায়তা তাৎক্ষণিকভাবে প্রবেশ করানো হবে। পানীয় জল, খাদ্য, ওষুধসহ জরুরি সামগ্রীর ব্যবস্থা করা হবে, যা গাজার জনগণের দুর্দশা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
গাজার হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা সাম্প্রতিক হামলায় ধ্বংসপ্রাপ্ত, তাই মানবিক সহায়তার আগমন জীবনের জন্য অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।
গাজায় শান্তির প্রত্যাশা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
গাজায় দীর্ঘসময় ধরে চলমান এই সংঘর্ষে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা বিশ্বব্যাপী শান্তিপ্রিয় মানুষের প্রত্যাশা। যুদ্ধবিরতি আলোচনা সফল হলে তা হবে বড় এক পদক্ষেপ, যা ভবিষ্যতে দীর্ঘস্থায়ী শান্তির ভিত্তি গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।
বিশ্ববাসী এখন এই আলোচনার ফলাফলের দিকে তাকিয়ে আছে। আশা করা যায়, মধ্যস্থতাকারী দেশগুলো এই প্রয়াসে সফল হবে এবং গাজা অবিলম্বে এক শান্তিপূর্ণ সময়ের মুখোমুখি হবে।
গাজায় দীর্ঘ যুদ্ধে নতুন যুদ্ধবিরতি আলোচনায় হামাসের ইতিবাচক সাড়া এসেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারীদের প্রস্তাবে তারা অংশ নিতে প্রস্তুত। ইসরায়েলের সঙ্গে জিম্মি বিনিময়, মানবিক সহায়তা প্রবেশ ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতির শর্তগুলো আলোচনার মূল বিষয়। আন্তর্জাতিক মহল শান্তির জন্য আশা প্রকাশ করেছে।