বিশ্ব

ইসরায়েল এবার পশ্চিম তীর পুরো দখলে নেবে

পশ্চিম তীরকে ইসরায়েলের অংশ করার ঘোষণা, গাজায় সংকট আরও তীব্র

ইসরায়েল নতুন করে পশ্চিম তীরের পুরো অঞ্চলকে নিজেদের মধ্যে একীভূত করার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। চলতি জুলাই মাসেই দেশটির পার্লামেন্ট ‘নেসেট’ পশ্চিম তীরকে ইসরায়েলের অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পেতে চলেছে। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন লিকুদ পার্টির মন্ত্রিসভার একাংশ এই দাবির পক্ষে সই করেছে, যা মধ্যপ্রাচ্যের জটিল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে।

গাজায় ভয়াবহ পরিস্থিতি, হাজার হাজার ফিলিস্তিনি ক্ষতিগ্রস্ত

জাতিসংঘের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে প্রকাশ, গাজা উপত্যকার প্রায় ৮৫ শতাংশ এলাকা এখন ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে অথবা উচ্ছেদ আদেশের মুখে। এতে প্রভাবিত হাজার হাজার ফিলিস্তিনি পরিবার জীবনের সংকটে পড়েছে। গাজার বিভিন্ন এলাকায় চলমান ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গতকাল গাজা শহরের মুস্তাফা হাফেজ স্কুলে আশ্রয় নেওয়া বাস্তুচ্যুতদের ওপর ইসরায়েলি বোমাবর্ষণে অন্তত ১১৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ১২ জন ত্রাণকর্মীও রয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ৫৮১ জন। নিহতদের মরদেহ আল-শিফা হাসপাতালে পৌঁছে স্বজনরা শোকে ভারাক্রান্ত।

আন্তর্জাতিক মহলের উদ্বেগ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষ প্রতিনিধি ফ্রানচেসকা আলবানিজ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘গণহত্যামূলক অভিযান’ চালানোর অভিযোগে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখানোর আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি ইসরায়েলের ওপর সম্পূর্ণ অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ, বাণিজ্যিক ও আর্থিক সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবি তোলেন। জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেন, ইসরায়েলের উচ্ছেদ আদেশগুলো বিপদগ্রস্ত মানুষের কাছে জরুরি সহায়তা পৌঁছাতে বাধা দিচ্ছে, যা মানবিক সংকটকে আরো জটিল করে তুলছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতা এবং যুদ্ধবিরতির চেষ্টায় অগ্রগতি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চলতি সপ্তাহে গাজায় ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন। তিনি জানান, যুদ্ধবিরতির জন্য প্রয়োজনীয় শর্তাবলী ইসরায়েল মেনে নিয়েছে। ট্রাম্পের ঘোষণার পর, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু আগামী সপ্তাহে ওয়াশিংটনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করবেন, যেখানে গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং বন্দি মুক্তি নিয়ে আলোচনা হবে। তবে এই বৈঠকের আগেই পশ্চিম তীরকে ইসরায়েলের অংশ করার দাবি সামনে আসায় মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও বেড়ে যেতে পারে।

পশ্চিম তীর: জুদিয়া ও সামারিয়া – ইসরায়েলের নতুন লক্ষ্য

মন্ত্রিসভার এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা নেসেটের সদস্য এবং মন্ত্রিসভার সদস্যরা জুদিয়া ও সামারিয়া অঞ্চলে অবিলম্বে ইসরায়েলের সার্বভৌমত্ব এবং আইন প্রয়োগের আহ্বান জানাচ্ছি।’ জুদিয়া ও সামারিয়া শব্দগুলি ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে দখলকৃত পশ্চিম তীরের নির্দিষ্ট অঞ্চলকে নির্দেশ করে। এই অঞ্চলগুলো দখল করার মাধ্যমে ইসরায়েল ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের ওপর তাদের নিয়ন্ত্রণকে স্থায়ী করতে চাইছে।

নেতানিয়াহুর হামাস নিশ্চিহ্ন করার অঙ্গীকার

গাজায় চলমান সংঘর্ষের মাঝেই ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছেন, হামাসকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য তারা দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। তিনি আশকেলন সীমান্ত শহরে দেওয়া একটি ভিডিও বার্তায় বলেছিলেন, “আমরা হামাসকে সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন করব।” এর ফলে গাজায় হামলার মাত্রা আরও বাড়তে পারে এবং স্থানীয়দের দুর্ভোগ তীব্র হতে পারে।

গাজার অবস্থা: জরুরি সহায়তা পৌঁছানো কঠিন

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গাজার খান ইউনিস এলাকার দুইটি স্থানে নতুন উচ্ছেদ আদেশ জারি করা হয়েছে, যেখানে প্রায় ৮০ হাজার মানুষ বসবাস করে। এই আদেশের কারণে স্থানীয় গুরুত্বপূর্ণ জলাধার ‘আল-সাতার’ পর্যন্ত ত্রাণ ও পানীয় জল পৌঁছানো বন্ধ হয়ে গেছে। জাতিসংঘের স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন কর্মীরা জানান, এর ফলে গাজার মানুষের জীবিকা এবং স্বাস্থ্য পরিস্থিতি ভয়াবহ সংকটের মুখে পড়েছে।

ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘর্ষ: এক চলমান সংকট

দীর্ঘদিন ধরে চলা ইসরায়েল-ফিলিস্তিন বিরোধ এখন নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে। ইসরায়েলের পশ্চিম তীরকে সম্পূর্ণরূপে নিজেদের অংশ করার পরিকল্পনা, গাজায় রক্তক্ষয়ী হামলা, এবং আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতার প্রচেষ্টা — এই সব মিলিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের ভবিষ্যত অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছে।

বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এই সংকটের দ্রুত সমাধানের জন্য চাপ সৃষ্টি করছে। তবে রাজনীতিক ও কূটনীতিকদের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ হলো পারস্পরিক আস্থা প্রতিষ্ঠা এবং শান্তি প্রক্রিয়া পুনরায় শুরু করা।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button