বিশ্ব

এনভিডিয়া এখন বিশ্বের সবচেয়ে দামি প্রতিষ্ঠান

প্রযুক্তি ও শেয়ার বাজারের বিশ্বমঞ্চে নতুন এক রেকর্ড গড়লো এনভিডিয়া (NVIDIA)। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা AI-এর ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা ও প্রয়োগের ফলে মার্কিন প্রযুক্তি জায়ান্ট মাইক্রোসফট এবং অ্যাপলকে পেছনে ফেলে বাজারমূল্যের দিক থেকে বিশ্বের সবচেয়ে দামি প্রতিষ্ঠান হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে এনভিডিয়া। জুন ২০২৫ মাসের শেষে শেয়ার বাজারে এনভিডিয়ার মূল্য দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩.৮৬ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা মাইক্রোসফটের ৩.৬৯ ট্রিলিয়ন ও অ্যাপলের ৩.১ ট্রিলিয়ন ডলারের চেয়ে অনেক বেশি।

এনভিডিয়ার অসাধারণ সাফল্যের পেছনে কী কারণ?

সম্প্রতি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বাজারে হঠাৎই তীব্র বৃদ্ধি ঘটেছে। এআই প্রযুক্তির ওপর নানা সেক্টরের চাহিদা বাড়ায় এআই চিপের ডিমান্ড তুঙ্গে উঠেছে। এনভিডিয়া মূলত এআই চিপ তৈরিতে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ প্রতিষ্ঠান, যা এই চাহিদার ঘাটতি পূরণে বড় ভূমিকা রাখছে। তাই বাজারে এনভিডিয়ার শেয়ার মূল্য ও কোম্পানির সামগ্রিক মূল্যায়ন ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বিশ্বজুড়ে স্বয়ংচালিত গাড়ি, স্বাস্থ্যসেবা, ক্লাউড কম্পিউটিং, রোবোটিক্স এবং ডেটা সায়েন্সসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এআই প্রযুক্তি ছড়িয়ে পড়ায় এনভিডিয়ার বিশেষজ্ঞ প্রযুক্তি খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এর ফলে বিশ্বের অন্যতম বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হিসেবে এনভিডিয়ার অবস্থান আরও সুগভীর হয়েছে।

মাইক্রোসফট ও অ্যাপলকে ছাড়িয়ে শীর্ষে এনভিডিয়া

রয়টার্সের ২ জুলাই প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জুন মাসের শেষের দিকে এনভিডিয়ার বাজারমূল্য ছিল ৩.৮৬ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা মাইক্রোসফটের বাজারমূল্য ৩.৬৯ ট্রিলিয়ন ডলারের চেয়ে প্রায় ৪.৩ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে, অ্যাপলের বাজারমূল্য ছিল ৩.১ ট্রিলিয়ন ডলার।

তবে, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে অ্যাপল তার ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৩.৯২ ট্রিলিয়ন ডলারের বাজারমূল্য অর্জন করেছিল, যা এখনও পর্যন্ত ছুঁতে পারেনি এনভিডিয়া। অর্থাৎ, বাজারমূল্যের দিক থেকে অস্থায়ী হলেও এই শীর্ষস্থান লাভ করলেও দীর্ঘমেয়াদে এনভিডিয়ার সামনে আরো অনেক কাজ বাকি।

অন্যান্য প্রযুক্তি জায়ান্টদের অবস্থান

অন্যদিকে, প্রযুক্তি সেক্টরের অন্যান্য বড় নামগুলো যেমন মেটা, ব্রডকম, এবং অ্যামাজনের বাজারমূল্যও সাম্প্রতিক সময়ে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

  • মেটার বাজারমূল্য বেড়েছে প্রায় ১৪ শতাংশ, বর্তমানে প্রায় ১.৮৬ ট্রিলিয়ন ডলার।
  • ব্রডকমের বাজারমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে ১৩.৯ শতাংশ, দাঁড়িয়েছে ১.৩ ট্রিলিয়ন ডলার।
  • অ্যামাজনের বাজারমূল্য বেড়েছে ৭ শতাংশ, যা এখন ২.৩৩ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।

তবে কিছু কোম্পানি যেমন ইলন মাস্কের বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা টেসলার বাজারমূল্য কিছুটা কমেছে। ইউরোপের বাজারে ধারাবাহিক ক্ষতির কারণে টেসলার বাজারমূল্য ৮.৩ শতাংশ হ্রাস পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১.০২ ট্রিলিয়ন ডলারে।

বাজারমূল্যের অগ্রগতিতে প্রযুক্তি খাতের গুরুত্ব

বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রযুক্তি খাতের অবদান দিন দিন বেড়েই চলছে। AI, ক্লাউড, বড় ডেটা ও আধুনিক চিপ তৈরির ক্ষেত্রে অগ্রণী প্রতিষ্ঠানগুলো প্রযুক্তি বিপ্লবের মূল চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করছে। বিশেষত AI-এর জনপ্রিয়তার কারণে প্রযুক্তি জায়ান্টদের বাজারমূল্যের চিত্র পরিবর্তিত হচ্ছে।

এনভিডিয়া এখন শুধুমাত্র একটি কোম্পানি নয়, বরং বিশ্ব প্রযুক্তির অন্যতম শক্তিশালী কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। ২০২৫ সালের এই অর্জন প্রযুক্তি বাজারে এক নতুন যুগের সূচনা করেছে। এর মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে কিভাবে উদ্ভাবনী প্রযুক্তি ও বাজারের সঠিক চাহিদার মেলবন্ধনে কোম্পানিগুলো বিশ্বশক্তি হিসাবে আত্মপ্রকাশ করছে।

ভবিষ্যতের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ

এআই প্রযুক্তির ভবিষ্যত অত্যন্ত উজ্জ্বল হলেও এই খাতে প্রতিযোগিতা ও প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জও কম নয়। চিপ তৈরির জটিলতা, সরবরাহ শৃঙ্খলে বাধা, বিশ্ববাজারের বৈশ্বিক অবস্থা এবং প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর কৌশল—এসব বিষয় এনভিডিয়ার সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়েছে।

তবে কোম্পানিটি ক্রমাগত নতুন নতুন প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন নিয়ে কাজ করছে, যা তাদের শীর্ষস্থান ধরে রাখতে সাহায্য করবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা

  • এনভিডিয়ার বাজারমূল্য: ৩.৮৬ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার (জুন ২০২৫ শেষে)।
  • মাইক্রোসফটের বাজারমূল্য: ৩.৬৯ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার।
  • অ্যাপলের বাজারমূল্য: ৩.১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার।
  • টেসলার বাজারমূল্য: ১.০২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার (৮.৩% হ্রাস)।
  • মেটা, ব্রডকম ও অ্যামাজনের বাজারমূল্য: যথাক্রমে ১.৮৬, ১.৩, ও ২.৩৩ ট্রিলিয়ন ডলার।

বিশ্বের প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর বাজারমূল্য নির্ভর করছে তাদের উদ্ভাবনী প্রযুক্তি, বাজার চাহিদা এবং অর্থনৈতিক পরিবেশের ওপর। এনভিডিয়ার এআই চিপে বিশ্ব বাজারের চাহিদা বৃদ্ধি এবং সফল ব্যবসায়িক কৌশল তাদের মাইক্রোসফট ও অ্যাপলকে ছাপিয়ে শীর্ষে নিয়ে এসেছে। আগামী দিনে প্রযুক্তি খাতে এই রকম আরও চমকপ্রদ পরিবর্তন আসতে পারে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button