ইসরায়েলি হামলায় গাজায় ১১১ ফিলিস্তিনি নিহত

গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতির আলোচনার মাঝেও অব্যাহত রয়েছে ইসরায়েলি আগ্রাসন ও বর্মবন্দি হামলা। কাতার ভিত্তিক খ্যাতনামা সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একদিনে ভয়াবহ বিমান হামলায় কমপক্ষে ১১১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে অনেকেই ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্র এবং শরণার্থী শিবিরে অপেক্ষমাণ ছিলেন।
গাজার সবচেয়ে বড় হাসপাতাল ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতালের পরিচালক মারওয়ান আল সুলতান ও তার পরিবারসহ নিহত হয়েছেন। হাসপাতাল পরিচালকের বাসভবন লক্ষ্য করে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) বিমান হামলা চালায়। এ হামলায় তার স্ত্রী ও এক মেয়ের মৃত্যুও নিশ্চিত করা হয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই তথ্য প্রকাশ করেছে, যদিও ইসরায়েল তাকে ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।
ত্রাণকেন্দ্র ও শরণার্থী শিবিরেও বিধ্বংসী হামলা
ইসরায়েলি বিমানবাহিনীর হামলা শুধুমাত্র হাসপাতালেই সীমাবদ্ধ হয়নি, বরং গাজার উত্তর ও দক্ষিণ অংশের ত্রাণকেন্দ্র ও শরণার্থী শিবিরগুলোতেও ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে। নিরাপদ বলে ঘোষিত এসব এলাকা লক্ষ্য করে শিশু ও বয়স্কসহ অসংখ্য নিরীহ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়েছে। নিহতের মধ্যে অন্তত পাঁচজন শিশু রয়েছে বলে জানা গেছে।
এই পরিস্থিতিতে গাজার সাধারণ মানুষ তীব্র দুর্ভোগে পড়েছে, যেখানে খাদ্য, ওষুধ এবং প্রাথমিক চিকিৎসা পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়েছে। একদিকে যুদ্ধবিরতি আলোচনার চেষ্টা চললেও অপরদিকে এই হামলাগুলো অব্যাহত থাকার ফলে শান্তি প্রতিষ্ঠা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
গাজা সংকট: ইতিহাস এবং সাম্প্রতিক পরিস্থিতির পর্যালোচনা
গাজা উপত্যকা, যা প্রায় ৩৬০ বর্গকিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত, বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। এখানে প্রায় দুই কোটি ফিলিস্তিনি বাস করে, যাদের অধিকাংশই দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের কারণে নানা দুর্দশার মধ্যে রয়েছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর নিয়মিত হামলা, নাজায়ন ও অবরোধের কারণে মানবিক সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে।
২০২৫ সালে ইসরায়েলি-ফিলিস্তিনি সংঘাতের নতুন মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে গাজার ওপর বিমান ও স্থল হামলা বেড়েছে। জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো বারবার যুদ্ধবিরতি ও শান্তিচুক্তির আহ্বান জানালেও বাস্তবে তা কার্যকর হচ্ছে না।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও মানবিক সংকট
গাজায় সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় বিশ্বজুড়ে নিন্দা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংগঠন। কাতার, তুরস্ক, ইরানসহ বেশ কয়েকটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ ইসরায়েলের এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। জাতিসংঘ মহাসচিবও অবিলম্বে সংঘাত বন্ধ এবং মানবিক সাহায্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।
তবে ইসরায়েল তার নিরাপত্তা দাবিতে এই হামলাকে যৌক্তিক বলে দাবি করছে। তারা বলছে, গাজায় ইসলামিক জিহাদ ও হামাসের সামরিক অবকাঠামো ধ্বংস করার জন্য এই অভিযানের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
গাজার মানবিক অবস্থা: খাদ্য, পানি ও চিকিৎসার সংকট
বর্তমান পরিস্থিতিতে গাজার মানুষের জন্য খাদ্য ও পানির অভাব তীব্র আকার নিয়েছে। দীর্ঘদিনের অবরোধ এবং সাম্প্রতিক বিমান হামলার কারণে ত্রাণ সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। গাজার হাসপাতালগুলো অস্ত্রোপচার, জরুরি চিকিৎসা এবং মৌলিক ওষুধের অভাবে নাজুক পরিস্থিতিতে রয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গাজার হাসপাতালে চিকিৎসক ও নার্সদের প্রায় অর্ধেকের বেশি কাজ করার সামর্থ্য হারিয়েছেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে তারা চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারছেন না।
গাজার শিশুদের ওপর প্রভাব
সংঘাতের সবচেয়ে বড় শিকার হচ্ছে গাজার শিশুরা। হতাহত শিশুদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। শিক্ষা ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় শিশুরা তাদের ভবিষ্যৎ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আঘাতপ্রাপ্ত ও শরণার্থী শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
বিশ্ব সম্প্রদায়ের করণীয়
গাজার সংকটের স্থায়ী সমাধানের জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়কে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনি পক্ষকে শান্তি আলোচনায় বসতে এবং যুদ্ধবিরতি মেনে চলতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। এছাড়া মানবিক সাহায্য অবাধে পৌঁছানো নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চাপ প্রয়োগ জরুরি।
সারসংক্ষেপ
- গাজায় একদিনে ১১১ জন ফিলিস্তিনি নিহত, এর মধ্যে হাসপাতাল পরিচালক মারওয়ান আল সুলতান ও তার পরিবার।
- ত্রাণকেন্দ্র ও শরণার্থী শিবিরেও হামলা, নিরাপদ এলাকা বয়ে গেছে রক্তক্ষয়ী সংঘাতে।
- আন্তর্জাতিক মহল সংঘাত বন্ধ ও মানবিক সাহায্যের দ্রুত প্রবাহ নিশ্চিতের আহ্বান জানাচ্ছে।
- গাজার মানুষ খাদ্য, পানি ও চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
- শিশুরা বিশেষভাবে সংকটের শিকার, শিক্ষা ও মানসিক স্বাস্থ্য বিপন্ন।
গাজা সংকট নিয়ে বিস্তারিত ও আপডেট জানতে আমাদের সাথেই থাকুন – Signalbd.com