গাজায় ইসরায়েলি হামলায় হাসপাতাল পরিচালক নিহত

গাজায় ইসরায়েলের বিমান হামলায় চিকিৎসক মারওয়ান সুলতান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের প্রাণহানি, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের তীব্র নিন্দা
ফিলিস্তিনের গাজার ইন্দোনেশীয় হাসপাতালের পরিচালক, প্রখ্যাত চিকিৎসক মারওয়ান সুলতান ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন। গাজার হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বুধবার এ তথ্য নিশ্চিত করে জানিয়েছে, গাজা সিটির নিজ বাড়িতে হামলায় মারওয়ান সুলতানসহ তাঁর পরিবারের কয়েকজন সদস্যও প্রাণ হারিয়েছেন।
চিকিৎসক মারওয়ান সুলতান: মানবতা ও চিকিৎসার প্রতীক
চিকিৎসক মারওয়ান সুলতান দীর্ঘদিন ধরে গাজায় চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত ছিলেন। তিনি মানবিক দায়িত্ববোধ ও পেশাগত নিষ্ঠার প্রতীক হিসেবে সমাদৃত ছিলেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, তিনি কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন না, বরং যুদ্ধ-সংকটের মাঝেও রোগীদের সেবা দিয়ে চলেছেন।
মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, চিকিৎসা কর্মীদের বিরুদ্ধে এ ধরনের হামলা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও যুদ্ধবিধি লঙ্ঘন। তারা এই জঘন্য অপরাধের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।
হামলার পেছনের কারণ ও ইসরায়েলের দাবি
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজার এই হামলাকে justified করার চেষ্টা করে বলেছে, তারা গাজা সিটির ওই এলাকায় হামাসের একজন ‘গুরুত্বপূর্ণ’ সদস্যকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। তবে এই হামলায় নিরীহ বেসামরিক লোকজন নিহত হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছে এবং এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে বলে জানায়।
তবে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় স্পষ্ট করেছে, নিহত চিকিৎসক ও তাঁর পরিবার বেসামরিক মানুষ এবং তাদেরকে নিশানা করা হয়েছে যা মানবিক ও আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন।
গাজার সাম্প্রতিক পরিস্থিতি ও অন্যান্য হামলা
ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর হামলা শুধু গাজা সিটি পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকেনি। গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনিসের আল-মাওয়াসির ‘নিরাপদ এলাকা’তেও গত কয়েক দিনে ইসরায়েলি বোমা হামলায় অন্তত পাঁচজন নিহত ও অনেকে আহত হয়েছেন।
গাজার ইন্দোনেশীয় হাসপাতাল ইতোমধ্যে একাধিকবার ইসরায়েলি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক পর্যায়ে এই হাসপাতালটিকে ‘পরিষেবা অযোগ্য’ ঘোষণা করেছিল।
জাতিসংঘের এক রিপোর্ট অনুযায়ী, উত্তর গাজা গভর্নরেটে বর্তমানে কার্যকর কোনো হাসপাতাল অবশিষ্ট নেই, যা চিকিৎসা সেবার জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বারবার ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে চিকিৎসা ও মানবিক কর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ করেছে।
নিহত চিকিৎসকের মেয়ে লুবনার বর্ণনা
চিকিৎসক মারওয়ানের মেয়ে লুবনা আল-সুলতান বলেন, “হামলা যখন হয়েছিল, বাবা তাঁর নিজের কক্ষে ছিলেন। একটি ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি সেই কক্ষ লক্ষ্য করে আঘাত হানে। বাবাকে হারিয়ে আমরা সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত।” তিনি আরও যোগ করেন, তাঁর বাবা কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন না, তিনি শুধু রোগীদের জীবন রক্ষায় মনোযোগী ছিলেন।
গাজার বর্তমান অবস্থা: মৃত্যু ও ধ্বংসযজ্ঞ
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় গাজায় অন্তত ১৩৯ জন নিহত হয়েছেন। হামলায় শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন এবং অসংখ্য বাসস্থান, হাসপাতাল ও স্কুল ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে।
এই সংঘাতের প্রেক্ষাপটে গাজার সাধারণ মানুষ শরণার্থীশিবিরগুলোতে বসবাস করছে, যেখানে খাবার, ওষুধ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসের মারাত্মক সংকট চলছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া ও সাহায্যের আহ্বান
জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ইসরায়েলের এ ধরনের হামলার কঠোর নিন্দা জানাচ্ছে। তারা ফিলিস্তিনের বেসামরিক জনগণকে রক্ষায় জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে। চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান ও চিকিৎসকদের সুরক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক আইন কঠোরভাবে প্রযোজ্য করার দাবি জানিয়েছে বিশ্বজনীন স্বাস্থ্য সংস্থা ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো।
যুদ্ধবিরতি ও শান্তির প্রত্যাশা
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, গাজায় ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে ইসরায়েল রাজি হয়েছে। তবে তা বাস্তবায়নে এখনও বাস্তব চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান। যুদ্ধবিরতির শর্তানুযায়ী, দু’পক্ষের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
তবে সাম্প্রতিক বিমান হামলা ও মৃত্যুর ঘটনাগুলো যুদ্ধে মানবিক বিপর্যয় ও সংকটকে আরো বৃদ্ধি করছে।
গাজায় ইসরায়েলি হামলা: চিকিৎসা, মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের প্রেক্ষাপট
গাজায় চলমান ইসরায়েলি বিমান হামলায় চিকিৎসা কর্মী ও বেসামরিক জনসংখ্যার ওপর হামলা, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন ও জেনেভা কনভেনশনের স্পষ্ট লঙ্ঘন। হাসপাতাল ও চিকিৎসা কর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নৈতিক ও আইনি দায়িত্ব।
গাজার বিভিন্ন হাসপাতাল বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সেখানকার রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা দিতে না পারা এক বিশাল মানবিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি করেছে।
সারসংক্ষেপ:
- গাজার ইন্দোনেশীয় হাসপাতালের পরিচালক চিকিৎসক মারওয়ান সুলতান ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন।
- গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো এ হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।
- ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তারা হামাসের সদস্যকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে, কিন্তু বেসামরিক লোকজন নিহত হওয়ার বিষয়টি তদন্তাধীন।
- গাজার সাম্প্রতিক বিমান হামলায় শতাধিক ব্যক্তি নিহত ও আহত হয়েছে।
- গাজার হাসপাতালগুলো ক্ষতিগ্রস্ত এবং কার্যকর চিকিৎসা পরিষেবা বন্ধ রয়েছে।
- আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ও জাতিসংঘ এই সংঘাতের দ্রুত সমাধান ও বেসামরিকদের সুরক্ষার আহ্বান জানিয়েছে।
- যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা চললেও, সাম্প্রতিক ঘটনা গাজায় মানবিক সংকট আরও বাড়িয়েছে।