ইরানে হামলা হলে পাকিস্তানে কোনো মার্কিনি থাকবে না

ফতোয়ার ভাষায় ‘খামেনির ওপর আক্রমণ মানে আল্লাহর শত্রুতা’, বললেন রাজা নাসির
মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার আবহে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনির বিরুদ্ধে হুমকি এলে শুধু ইরান নয়, গোটা মুসলিম বিশ্ব প্রতিক্রিয়া দেখাবে — এমনটাই হুঁশিয়ারি দিলেন পাকিস্তানের সিনেট সদস্য আল্লামা রাজা নাসির আব্বাস জাফরি। তিনি বলেন, “ইরানে হামলা হলে পাকিস্তানে কোনো মার্কিনি থাকবে না।”
কী বলেছেন পাক সিনেটর রাজা নাসির?
পাকিস্তানের শীর্ষস্থানীয় শিয়া নেতা ও সিনেট সদস্য আল্লামা রাজা নাসির আব্বাস জাফরি সম্প্রতি এক বক্তব্যে বলেন, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনিকে হুমকি দিলে তা ইসলামের বিরুদ্ধে ঘোষণা বলেই বিবেচিত হবে।
তিনি বলেন, “ট্রাম্প, নেতানিয়াহু ও তাদের সহযোগীদের জানা উচিত, ইরানে হামলা হলে সেটি শুধু একটি দেশের উপর হামলা নয় — বরং তা গোটা মুসলিম বিশ্বের অস্তিত্বে আঘাত। আর তার জবাবও বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের পক্ষ থেকেই আসবে।”
তার মতে, পাকিস্তানও এ ধরনের হামলার বিরুদ্ধে চুপ থাকবে না। যদি ইরানে হামলা হয়, তাহলে পাকিস্তানে কোনো মার্কিনি নিরাপদ থাকবে না।
ধর্মীয় ফতোয়া: ‘খামেনির শত্রু মানে আল্লাহর শত্রু’
পাকিস্তানের এই সিনেটর তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন, ইরানের জ্যেষ্ঠ ধর্মীয় নেতারা সম্প্রতি একটি ফতোয়া জারি করেছেন, যেখানে বলা হয়েছে — যদি কেউ আয়াতুল্লাহ খামেনিকে হুমকি দেয়, তবে সে আল্লাহর শত্রু এবং তার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।
এই ফতোয়া জারি করেছেন ইরানের গ্র্যান্ড আয়াতুল্লাহ নাসের মাকারেম শিরাজি ও আয়াতুল্লাহ হোসেইন নুরি হামেদানি। তাদের মতে, ইসলামী উম্মাহর নেতৃত্ব এবং ধর্মীয় কর্তৃত্বের উপর হামলা মানে সরাসরি ইসলাম ও সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত। সেক্ষেত্রে “সংঘর্ষের রায়” কার্যকর হবে।
মধ্যপ্রাচ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার পটভূমি
সম্প্রতি ইসরায়েলের আগ্রাসন, হুথি আন্দোলন, রেড সি অঞ্চলের নিরাপত্তা সংকট এবং ইরানবিরোধী পশ্চিমা বক্তব্যের কারণে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা তুঙ্গে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু নেতা ইরানকে ‘বিপজ্জনক রাষ্ট্র’ আখ্যা দিয়ে সামরিক পদক্ষেপের হুমকি দিচ্ছেন।
এই পরিস্থিতিতে ইরান বলছে, তারা আত্মরক্ষার অধিকার সংরক্ষণ করে এবং প্রয়োজন হলে জবাব দিতে প্রস্তুত।
পাকিস্তানের অবস্থান ও প্রতিবাদ
ইসরায়েলের আগ্রাসন ও ইরানবিরোধী মনোভাবের বিরুদ্ধে সম্প্রতি পাকিস্তান বেশ দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে। আন্তর্জাতিক ফোরামগুলোতেও পাকিস্তান মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির আহ্বান জানিয়েছে।
তবে এই প্রথমবারের মতো কোনো সিনেট সদস্য এমন সরাসরি ভাষায় হুমকি দিলেন, যা আন্তর্জাতিকভাবে আলোচনার কেন্দ্রে এসেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বক্তব্য শুধু ধর্মীয় আবেগ নয় — বরং এটি একটি কৌশলগত বার্তাও, যেখানে ইঙ্গিত রয়েছে মুসলিম দেশগুলোর পারস্পরিক ঐক্যের।
বিশ্লেষকরা কী বলছেন?
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ধরনের বক্তব্য মধ্যপ্রাচ্য-দক্ষিণ এশিয়া সম্পর্ককে নতুন এক দিকনির্দেশনা দিচ্ছে।
বিশ্লেষক মাসউদ করিম বলেন, “যখন একজন সিনেট সদস্য এমন বক্তব্য দেন, সেটি কেবল ব্যক্তিগত মত নয় — বরং রাষ্ট্রীয় মনোভাবের প্রতিফলনও হতে পারে।”
তিনি আরো বলেন, “এই বক্তব্য একদিকে যেমন ইরানের সঙ্গে মুসলিম ঐক্যের বার্তা দেয়, তেমনি মার্কিন প্রভাবকেও চ্যালেঞ্জ করে।”
“ইরানে হামলা হলে পাকিস্তানে কোনো মার্কিনি নিরাপদ থাকবে না”—আল্লামা রাজা নাসির আব্বাস জাফরি, সিনেট সদস্য
ভবিষ্যতের ইঙ্গিত
মধ্যপ্রাচ্যে যেকোনো সামান্য উত্তেজনা বড় ধরনের যুদ্ধের রূপ নিতে পারে — অতীতে এর বহু নজির রয়েছে।
ইরান, পাকিস্তান, তুরস্কসহ একাধিক মুসলিম দেশের মধ্যে যদি ঐক্য দৃশ্যমান হয়, তবে এর কূটনৈতিক প্রভাব শুধু অঞ্চলে নয়, বরং বিশ্ব রাজনীতিতেও পড়বে।
তবে এখন প্রশ্ন হলো, এই ধর্মীয় ও রাজনৈতিক বার্তাগুলো কি সামরিক উত্তেজনায় রূপ নেবে, নাকি কূটনৈতিক সমাধানই হবে শেষ পথ? সেটাই এখন দেখার বিষয়।
এম আর এম – ০১৪৭, Signalbd.com