বিশ্ব

রাশিয়ার পক্ষে ইউক্রেন যুদ্ধে লড়তে ৩০ হাজার সৈন্য পাঠাচ্ছে উত্তর কোরিয়া

 ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার পক্ষে আরও সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে যাচ্ছে উত্তর কোরিয়া। সম্প্রতি গোপন গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী জানা গেছে, ২৫ থেকে ৩০ হাজার নতুন সেনা রাশিয়ায় পাঠাতে প্রস্তুত পিয়ংইয়ং। এ পদক্ষেপে রাশিয়া-উত্তর কোরিয়া সামরিক জোট আরও দৃঢ় হচ্ছে।

যুদ্ধের ময়দানে আরও উত্তর কোরীয় সেনা

ইউক্রেনের বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধে রাশিয়াকে সহায়তা করতে অতিরিক্ত ৩০ হাজার সৈন্য পাঠানোর পরিকল্পনা করছে উত্তর কোরিয়া। ইউক্রেনীয় গোয়েন্দা সংস্থার সর্বশেষ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে, যা পশ্চিমা গণমাধ্যমেও প্রকাশ পেয়েছে।

রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধ করতে উত্তর কোরিয়ার এমন পদক্ষেপ ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক মহলে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই সেনারা মূলত ইউক্রেনের দোনেৎস্ক, লুহানস্ক এবং কুরস্ক সীমান্ত এলাকায় মোতায়েন হবে।

২০২৪ সালের পাঠানো সেনাদের অভিজ্ঞতা

গত বছরের নভেম্বরে প্রায় ১১ হাজার উত্তর কোরীয় সেনা প্রথমবারের মতো রাশিয়ায় পাঠানো হয়েছিল। তখন তাদের দায়িত্ব ছিল ইউক্রেনের সীমান্তে রুশ অবকাঠামো রক্ষা করা। সেই সময়ে প্রায় ৪ হাজারের মতো সেনা নিহত বা আহত হয় বলে জানা যায়।

এই অভিজ্ঞতা সত্ত্বেও উত্তর কোরিয়া তাদের সৈন্য সংখ্যা তিনগুণ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা স্পষ্টভাবে রাশিয়ার সঙ্গে তাদের সামরিক সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা নির্দেশ করে।

রাশিয়ার প্রস্তুতি ও সামরিক সমন্বয়

প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যেই উত্তর কোরীয় সেনাদের জন্য প্রয়োজনীয় অস্ত্র, গোলাবারুদ এবং সামরিক সরঞ্জাম প্রস্তুত করছে। এমনকি রুশ ইউনিটে এই সেনাদের একীভূত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

ইউক্রেন অধিকৃত এলাকায় বড় ধরনের হামলা ও আক্রমণে এদের ব্যবহার করার পরিকল্পনাও গোপনে করা হচ্ছে। স্যাটেলাইট চিত্র ও বিমানবন্দরে সামরিক কার্গো বিমানের চলাচল থেকে এসব প্রস্তুতির প্রমাণ মিলেছে।

স্যাটেলাইট ফুটেজে মিলছে চিহ্ন

উত্তর কোরিয়ার সুনান বিমানবন্দরে রাশিয়ান IL-76 কার্গো বিমানের গতিবিধি বেড়েছে। একইসঙ্গে দুনাই বন্দরে রোপুচা-ক্লাস যুদ্ধজাহাজও নোঙর করেছে, যা প্রায় ৪০০ সৈন্য পরিবহনে সক্ষম। এইসব সামরিক গতিবিধি আগত সেনা প্রেরণের ইঙ্গিতই দিচ্ছে।

পুতিন-শইগু সফর ও চুক্তির প্রেক্ষাপট

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নির্দেশে সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও উপদেষ্টা সের্গেই শইগু ১৭ জুন উত্তর কোরিয়া সফরে যান। সেখানে পিয়ংইয়ং-এর সঙ্গে একাধিক সামরিক সহযোগিতার বিষয়ে চুক্তি হয়।

এই সফরের সময় ঘোষণা দেওয়া হয় যে, ১ হাজার মাইন নিষ্কাশনকারী এবং ৫ হাজার সামরিক নির্মাণ শ্রমিক রাশিয়ায় পাঠাবে উত্তর কোরিয়া। তাদের কাজ হবে রুশ ভূখণ্ডে ধ্বংসপ্রাপ্ত অবকাঠামো পুনর্গঠন করা।

পরিসংখ্যান ও অস্ত্র সহায়তা

২০২৪ সালেই উত্তর কোরিয়া রাশিয়াকে ১০০টির বেশি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও প্রায় ৯০ লাখ গোলাবারুদ সরবরাহ করেছে। জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত ১১টি দেশের যৌথ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

এছাড়া ইউক্রেনীয় গোয়েন্দারা উত্তর কোরিয়ার আর্টিলারি প্রশিক্ষণ ম্যানুয়ালের রুশ অনুবাদও উদ্ধার করেছে, যা রাশিয়ান সেনাদের মধ্যে প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হয়েছে।

বিশ্লেষকদের দৃষ্টিভঙ্গি

বিশ্লেষকদের মতে, উত্তর কোরিয়ার এই পদক্ষেপ কেবলমাত্র রাশিয়াকে সামরিক সুবিধা দেওয়ার জন্য নয়, বরং পশ্চিমা বিশ্বের ওপর চাপ সৃষ্টির কৌশলও হতে পারে। এটি চীন-রাশিয়া-কোরিয়া জোটের অঘোষিত কৌশলিক অগ্রগতি বলেও অনেকের মত।

তবে এর ফলে যুদ্ধ পরিস্থিতি আরও জটিল ও দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

“রাশিয়ার প্রতি উত্তর কোরিয়ার এই সমর্থন আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে একটি নতুন বলয়ের ইঙ্গিত দিচ্ছে” — একজন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক।

সারসংক্ষেপঃ  

উত্তর কোরিয়া যদি সত্যিই ৩০ হাজার সৈন্য রাশিয়ায় পাঠায়, তবে এটি হবে যুদ্ধের ইতিহাসে এক বড় পরিবর্তন। যুদ্ধক্ষেত্রে এমন সেনা প্রেরণ কেবল সামরিক সহযোগিতা নয়, বরং ভূরাজনৈতিক জোটবদ্ধতার এক স্পষ্ট প্রতিচ্ছবি।

তবে প্রশ্ন হলো—এই নতুন সামরিক জোট কবে, কোথায় এবং কিভাবে যুদ্ধের গতিপথ পাল্টাবে?

এম আর এম – ০১৪১, Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button