নতুন মিসাইল হামলা ইসরায়েলে, প্রতিরক্ষামন্ত্রীর কঠোর প্রতিশোধের অঙ্গীকার

মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা নতুন করে ছড়িয়ে পড়েছে। মঙ্গলবার (১ জুলাই) জেরুজালেমে এক নতুন মিসাইল হামলার ঘটনা ঘটেছে, যা নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ আবারও তীব্র করেছে। ইসরায়েলের বিভিন্ন এলাকায় সাইরেন বাজতে থাকে, সাধারণ মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটে চলেন। এই হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে আরব নিউজ ও টাইমস অব ইসরায়েল।
মিসাইল হামলার পেছনে ইয়েমেনের হুতি সংগঠন
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, হামলাটি এসেছে ইয়েমেন থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে। এই ক্ষেপণাস্ত্রটি সফলভাবে ভূপাতিত হয়েছে বলে দাবি করেছে তারা। হামলার দায় স্বীকার করেছে ইয়েমেনের ইরান সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠী ‘হুতি’। গাজায় ইসরায়েলের সাম্প্রতিক আগ্রাসনের প্রতিবাদে নিয়মিত ইসরায়েলি ভূখণ্ড লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে আসছে এই গোষ্ঠী। যদিও অধিকাংশ হামলা ইসরায়েলি সেনাবাহিনী প্রতিহত করেছে।
ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া: কঠোর প্রতিশোধের হুমকি
এই ঘটনার জবাবে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ কঠোর প্রতিশোধের অঙ্গীকার করেছেন। তিনি বলেন, “ইয়েমেনের ভাগ্য তেহরানের মতো হবে। কেউ যদি আমাদের বিরুদ্ধে হাত তোলে, আমরা সেই হাত কেটে ফেলব।” গত মাসে ইরানের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিকে লক্ষ্য করে ইসরায়েল যে ১২ দিনের সামরিক অভিযান চালিয়েছে, সেটির উল্লেখও করেন কাটজ।
তাছাড়া, তিনি আরও বলেন, “ইসরায়েলের ওপর হামলা চলতে থাকলে নৌ ও বিমান অবরোধের মতো কড়াকড়িও আরোপ করা হবে।” এই কঠোর পদক্ষেপ ইসরায়েলের জন্য ‘সীমান্তরক্ষার’ একটি অপরিহার্য অংশ বলে মনে করা হচ্ছে।
ইয়েমেন ও ইরানের প্রভাব
ইয়েমেনের হুতি আন্দোলন ইরানের কাছ থেকে ব্যাপক সমর্থন পায়। ইরান মধ্যপ্রাচ্যে নিজের প্রভাব বিস্তারের জন্য এই ধরনের গোষ্ঠীগুলোর মাধ্যমে ইসরায়েলের বিরুদ্ধেproxy যুদ্ধ চালাচ্ছে বলে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। ইসরায়েল অবশ্য নিয়মিতই ইয়েমেনের ভূখণ্ডে প্রতিহিংসামূলক হামলা চালিয়ে আসছে। মধ্যপ্রাচ্যে এই proxy যুদ্ধের কারণে পরিবেশ ক্রমেই অস্থির হচ্ছে।
সাম্প্রতিক ঘটনার পটভূমি
গত কয়েক বছরে গাজার উত্তেজনা ও সামরিক সংঘাত বহুবার ইসরায়েলের নিরাপত্তা পরিস্থিতি দুর্বল করেছে। হুতি গোষ্ঠীসহ বিভিন্ন সশস্ত্র সংগঠন ইসরায়েলি ভূখণ্ডে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে আসছে, যার অধিকাংশ প্রতিহত হয়। এর ফলে সাধারণ নাগরিকদের জীবন কঠিন হয়ে পড়েছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ ঝুঁকি
এই নতুন হামলা ও তার জবাব ইসরায়েলের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশগুলোর সম্পর্ক আরও খারাপ করে দিতে পারে। পশ্চিম এশিয়ার স্থিতিশীলতা গুরুতর হুমকির মুখে পড়েছে। আন্তর্জাতিক মহল এখন এই সংঘর্ষ ঠেকাতে নানা পর্যায়ে চাপ বাড়াচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইসরায়েল এবং ইয়েমেনের হুতি গোষ্ঠীর মধ্যে এই সংঘর্ষ দ্রুত বড় আকার ধারণ করতে পারে, যা পুরো মধ্যপ্রাচ্যে ব্যাপক রাজনৈতিক ও সামরিক উত্তেজনা সৃষ্টি করবে। তেহরানের ভূমিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তারা proxy গোষ্ঠীগুলোর মাধ্যমে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নতুন করে যুদ্ধ বাড়াতে পারে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা কৌশল
ইসরায়েল নানা ধরনের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নেয়া রেখেছে যাতে এই ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা দ্রুত প্রতিহত করা যায়। আইডিএফের আইরন ডোম সিস্টেম বিশেষভাবে কার্যকর বলে স্বীকৃত। তবে হুতি গোষ্ঠীর হামলা ক্রমেই শক্তিশালী হচ্ছে, যা নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
মধ্যপ্রাচ্যের এই নতুন মিসাইল হামলা এবং ইসরায়েলের কঠোর প্রতিক্রিয়া গোটা অঞ্চলটিতে উত্তেজনা বৃদ্ধি করেছে। হুতি গোষ্ঠী ও ইয়েমেন থেকে ইসরায়েলি নিরাপত্তা লক্ষ্য করে চালানো এই হামলা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়েরও উদ্বেগ বাড়িয়েছে। ইসরায়েল কাটজের কঠোর হুঁশিয়ারি স্পষ্ট করে দিচ্ছে যে, তারা এই ধরনের হামলা নীরবভাবে সহ্য করবে না এবং প্রতিশোধমূলক শক্তি প্রয়োগ করবে।
বিশ্ব আজ মধ্যপ্রাচ্যের এই উত্তেজনা গভীর মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করছে। আশা করা যায়, আন্তর্জাতিক কূটনীতির মাধ্যমে উত্তেজনা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।