আঞ্চলিক

আদালত চলাকালে লোডশেডিং, কাঠগড়া থেকে পালালেন আসামি

Advertisement

নরসিংদী জেলা জজ আদালতের এজলাসে শুনানিকালে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সুযোগে পালালেন অটোরিকশা চুরির মামলার আসামি। ঘটনাটি ঘিরে আদালতে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। বিচারক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এ কোন দেশে বসবাস করি আমরা!’

আদালতের কাঠগড়া থেকে নাটকীয় পালানো

নরসিংদীতে অবিশ্বাস্য এক ঘটনা ঘটেছে—আদালত চলাকালে লোডশেডিংয়ের সুযোগে কাঠগড়া থেকে পালিয়ে যান এক চুরির মামলার আসামি। সোমবার (১৪ জুলাই) দুপুর দেড়টার দিকে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট রুবায়েত আক্তার শিফার এজলাসে এই ঘটনা ঘটে। এই সময় বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দেয়, আর সেই সুযোগেই পালিয়ে যান আসামি রিয়াজুল ইসলাম হৃদয় (২৫)।

তিনি রায়পুরা উপজেলার বালুয়াকান্দি গ্রামের বাসিন্দা। গত ৭ জুলাই তাকে একটি অটোরিকশা চুরির মামলায় গ্রেফতার করে রায়পুরা থানা পুলিশ। পরে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

আসামি পালালেন কীভাবে? পুলিশের গাফিলতি নাকি নিরাপত্তার ভাঙন?

পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, আদালতে শুনানিকালে হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যায়। কক্ষের ভিতর অন্ধকার নেমে আসে। এই সময় কাঠগড়ায় থাকা আসামি রিয়াজুল ইসলাম হাতকড়া খুলে দায়িত্বে থাকা পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে দ্রুত পালিয়ে যান।

ঘটনার পরপরই আদালত চত্বরে তোলপাড় শুরু হয়। কোর্ট পুলিশ, র‌্যাব ও জেলা পুলিশের একাধিক টিম তাৎক্ষণিকভাবে অভিযান চালালেও তাকে গ্রেফতার করতে পারেনি।

বিচারকের ক্ষোভ: ‘এ কোন দেশে বসবাস করি?’

ঘটনাটিকে নজিরবিহীন ও উদ্বেগজনক উল্লেখ করে বিচারক রুবায়েত আক্তার শিফা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন,
“আদালতের মতো সংবেদনশীল জায়গায় যদি নিরাপত্তা নিশ্চিত না হয়, তাহলে জনগণ কোথায় যাবে? বিদ্যুৎ না থাকলে কি আইনও অন্ধকারে ডুবে যাবে? এ কোন দেশে বসবাস করি আমরা?”

এই মন্তব্য শুনে উপস্থিত আইনজীবী ও দর্শকরা হতবাক হয়ে পড়েন।

গ্রেফতারের ৭ দিন পর আদালতে হাজিরা

রিয়াজুল ইসলাম হৃদয়কে গত ৭ জুলাই রাতে রায়পুরা থেকে একটি অটোরিকশা চুরির মামলায় গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিকভাবে তাকে রিমান্ডে নেওয়া হয়নি। সরাসরি আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। সোমবার ছিল তার প্রথম হাজিরা।

কিন্তু আদালতে হাজিরা দিতে গিয়েই সুযোগ বুঝে পালিয়ে যান তিনি—যা নরসিংদী জেলায় বিরল এক ঘটনা।

পুলিশের বক্তব্য ও বিভাগীয় ব্যবস্থা

নরসিংদী আদালত পুলিশের ইনচার্জ মো. সাইরুল ইসলাম স্বীকার করেছেন, এ ঘটনায় দায়িত্বপ্রাপ্ত দুই পুলিশ সদস্যের গাফিলতি ছিল। তার ভাষায়,
“আদালত চলাকালে বিদ্যুৎ চলে গেলে নিরাপত্তা আরও জোরদার করা উচিত ছিল। দুর্ভাগ্যজনকভাবে দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা তা করতে ব্যর্থ হয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।”

তিনি আরও জানান, আসামিকে দ্রুত গ্রেফতার করতে জেলার প্রতিটি থানা ও সীমান্ত এলাকায় সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

বিদ্যুৎ না থাকলে কি নিরাপত্তাও থাকে না?

এই ঘটনায় সাধারণ মানুষের মাঝে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। নেটিজেনরা প্রশ্ন তুলেছেন—আদালতের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বিদ্যুৎ না থাকলে কি নিরাপত্তা ব্যবস্থা একেবারে ভেঙে পড়ে?

বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশের’ এই যুগে আদালতে জেনারেটর বা ব্যাকআপ ব্যবস্থা না থাকাটা হতাশাজনক। এমন ঘটনায় শুধু নিরাপত্তা নয়, বিচারব্যবস্থার উপর সাধারণ মানুষের আস্থাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’

কী হতে পারে ভবিষ্যতে?

আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, আদালতে বিদ্যুৎব্যবস্থা, সিসিটিভি পর্যবেক্ষণ, এবং নিরাপত্তা কর্মীদের প্রশিক্ষণের দিকটিকে আরও গুরুত্ব দিতে হবে। অন্যথায় ভবিষ্যতে এমন ঘটনা আরও বাড়তে পারে।

একজন সিনিয়র আইনজীবী বলেন, “আসামি পালিয়ে যাওয়া শুধু একটি ঘটনা নয়, এটি বিচারপ্রক্রিয়ার প্রতি চরম অবহেলার প্রতিফলন। দ্রুত তদন্ত করে দায়ীদের শাস্তি দিতে হবে।”

সারসংক্ষেপ  

আদালত চলাকালে বিদ্যুৎ চলে যাওয়া, সেই অন্ধকারে আসামির পালিয়ে যাওয়া এবং বিচারকের হতাশা—এই তিনটি বিষয় একটি বড় প্রশ্ন তুলে দিয়েছে: দেশের আদালত কতটা নিরাপদ? আগামী দিনগুলোতে প্রশাসন ও বিচার বিভাগ এই প্রশ্নের কী জবাব দেয়, সেটিই এখন দেখার বিষয়।

এম আর এম – ০৩৩৮, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button