ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের ৩১ হাজার ভবন ধ্বংস

মাত্র ১২ দিনের পাল্টাপাল্টি হামলায় ধ্বংস হয়েছে ইসরায়েলের বিশাল অবকাঠামো। ইরানের দাবি—এই হামলা ‘অপূরণীয় ধ্বংস’ ডেকে এনেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সংঘাত মধ্যপ্রাচ্যের কৌশলগত পরিস্থিতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে।
সামরিক উত্তেজনায় ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায় ইসরায়েলে ধ্বংস হয়েছে ৩১ হাজার ভবন এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪ হাজারেরও বেশি যানবাহন। ইরানের প্রতিরক্ষা-সংক্রান্ত সূত্র এমন দাবি করেছে। এই হামলা মধ্যপ্রাচ্যে নতুন উত্তেজনার জন্ম দিয়েছে, যা আরও জটিলতা তৈরি করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।
ঘটনা ও ঘোষণা বিশদভাবে
ইরানের ইসলামিক রেভ্যুলুশনারি গার্ডস কর্পস (IRGC)-এর অ্যারোস্পেস ইউনিট ‘অপারেশন ট্রু প্রমিজ-৩’ নামে সামরিক অভিযানে ২২ দফায় ইসরায়েলি ভূখণ্ডে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। এই হামলায় ইসরায়েলের একাধিক শহরে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ঘটে।
ইরানি সংবাদমাধ্যম ‘দেফা প্রেস’-এর বরাত দিয়ে জানানো হয়, হামলায় ধ্বংস হয় ৩১ হাজার ভবন এবং ৪ হাজারেরও বেশি যানবাহন। শুধু অবকাঠামো নয়, এই হামলা ইসরায়েলের নিরাপত্তা কাঠামোকেও বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে।
সংঘাত
এই সংঘাতের সূচনা ঘটে ১৩ জুন, যখন ইসরায়েল প্রথম ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে বিমান হামলা চালায়। টানা ১২ দিন ধরে ইরানজুড়ে বোমাবর্ষণ চালায় ইসরায়েলি বাহিনী, যার লক্ষ্য ছিল সামরিক ঘাঁটি থেকে শুরু করে আবাসিক এলাকা পর্যন্ত।
ইরান এই হামলাকে ‘রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস’ আখ্যা দিয়ে পাল্টা প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় শুরু হয় ‘অপারেশন ট্রু প্রমিজ’, যা নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তীব্র আলোচনা শুরু হয়।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা
২২ জুন যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে সমর্থন জানিয়ে ইরানের নাতাঞ্জ, ফোর্দো ও ইসফাহান এলাকার গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে বিমান হামলা চালায়। এতে ইরানের মধ্যে উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়।
জবাবে ইরান কাতারে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম সামরিক ঘাঁটি আল-উদেইদে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এই হামলাকে ইরানের ‘সরাসরি হুমকি’র জবাব হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সংঘাত মধ্যপ্রাচ্যে বিদ্যমান কৌশলগত ভারসাম্যে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে। এমনকি সাময়িক যুদ্ধবিরতির পরেও উত্তেজনা পুরোপুরি শেষ হয়নি বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরণের হামলা ভবিষ্যতের জন্য মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ এতে শুধু রাষ্ট্রীয় অবকাঠামো নয়, সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকাও হুমকির মুখে পড়ে যাচ্ছে।
সাময়িক যুদ্ধবিরতি, কিন্তু উদ্বেগ বজায়
২৪ জুন কাতারের মধ্যস্থতায় একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও, বাস্তবে পরিস্থিতি এখনও উত্তপ্ত। ইরানের শীর্ষ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ নাসের মাকারেম শিরাজি ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের নেতাদের বিরুদ্ধে ধর্মীয় ফতোয়া জারি করেছেন। এই ঘোষণা নতুন করে উত্তেজনা বাড়িয়ে দিয়েছে।
তিনি বলেন, “যারা ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়, তারা ঈশ্বরের শত্রু। তাদের প্রতিরোধ করা ধর্মীয় দায়িত্ব।”
শেষকথা
ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনা এখন আর শুধু দুই দেশের মধ্যকার সীমাবদ্ধ নেই—এটি মধ্যপ্রাচ্যের শক্তির ভারসাম্য ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিকেও প্রভাবিত করছে। যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হলেও, উত্তেজনার স্ফুলিঙ্গ এখনও জ্বলছে।
তবে বিশ্লেষকদের মতে, পরিস্থিতি কীভাবে মোড় নেবে তা নির্ভর করছে পরবর্তী প্রতিক্রিয়ার ওপর।
এম আর এম – ০১১৭, Signalbd.com