বিশ্ব

ইরানের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি করছে ইসরায়েলিরা, গ্রেপ্তার ৩

 ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান উত্তেজনার মধ্যে ইসরায়েলের তিন নাগরিককে গ্রেপ্তার করেছে দেশটির নিরাপত্তা সংস্থা। গুপ্তচরবৃত্তি, তথ্য পাচার ও বিদেশি নির্দেশনায় অপারেশনের প্রস্তুতির অভিযোগে এই গ্রেপ্তার। সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা চলছে।

ইরানের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে তিন ইসরায়েলিকে গ্রেপ্তার

ইরানের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ইসরায়েলে তিন জনকে গ্রেপ্তার করেছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। ইসরায়েলি পুলিশ এবং শিন বেত (ন্যাশনাল ইনটেলিজেন্স এজেন্সি)-এর যৌথ অভিযানে এই গ্রেপ্তার সংঘটিত হয় চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে। সোমবার এক বিবৃতিতে বিষয়টি নিশ্চিত করে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ।

গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে রয়েছেন ১৮ বছর বয়সী ইয়োনি সেগাল, ২০ বছর বয়সী ওমর মিজরাহি এবং ৩৩ বছর বয়সী মার্ক মর্গান। তারা দীর্ঘদিন ধরে ইরানি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছিলেন এবং গোপনে তথ্য আদান-প্রদান করছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

কীভাবে ধরা পড়লো তারা?

তদন্তকারীদের মতে, তিবেরিয়াস, হাইফা এবং তেলআবিবের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানের ছবি, ভিডিও এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত তথ্য তারা ইরানে পাঠাতো। এসব স্থানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে—তেলআবিবের ডিজেঙ্গফ সেন্টার, হাইফার গ্র্যান্ড মল ও ইচিলোভ হাসপাতাল। তারা কৌশলে এই স্থানগুলোর লাইভ লোকেশন পাঠিয়ে নির্দিষ্ট নির্দেশনার জন্য অপেক্ষা করত।

সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানিয়েছে, আটককৃতদের মধ্যে কেউ কেউ বিদেশে গিয়ে প্রশিক্ষণ নেয়ার পরিকল্পনা করছিল, যাতে ইরানি এজেন্টদের পক্ষে সরাসরি অপারেশন চালানো সম্ভব হয়। এমনকি, তাদের কাছে গুপ্তহত্যা মিশনের সম্ভাব্য পরিকল্পনার কথাও উঠে এসেছে।

অতীতেও এমন ঘটনা ঘটেছে

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে দ্বন্দ্ব নতুন নয়। কিন্তু সাম্প্রতিক যুদ্ধ পরিস্থিতির পর গুপ্তচরবৃত্তির ঘটনা অনেক বেড়ে গেছে। শুধু ইরানেই গত দুই সপ্তাহে ৭০০-এরও বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যারা ইসরায়েলের হয়ে কাজ করছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।

এর আগেও ইরান কয়েকজনকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেছে, যাদের বিরুদ্ধে মোসাদের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ ছিল। একাধিকবার বিস্ফোরক, স্টারলিংক ডিভাইস এবং সাইবার সরঞ্জাম জব্দ করা হয়েছে। এসব ঘটনা ইঙ্গিত করে যে, তথ্যযুদ্ধ এখন আর শুধু ইন্টারনেট বা কূটনৈতিক স্তরে সীমাবদ্ধ নেই, এটি সরাসরি মাঠ পর্যায়ে চলে এসেছে।

এই গ্রেপ্তারের প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া

এই গ্রেপ্তার ইসরায়েলি অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা। দেশের ভেতরেই ইরানের হয়ে কাজ করা ব্যক্তিদের সক্রিয় উপস্থিতি উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা আরো কঠোর করার উদ্যোগ নিতে পারে সরকার।

অন্যদিকে, ইরানের পক্ষ থেকে এটিকে নিজেদের সাফল্য হিসেবে দেখানো হচ্ছে। ইরান ইতোমধ্যেই বলেছে, যারা “শত্রু রাষ্ট্রের” হয়ে কাজ করবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং প্রয়োজনে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হবে।

বিচার ও পরবর্তী ধাপ

ইসরায়েলি পুলিশ ইতোমধ্যেই তিন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন ডিক্লারেশন দাখিল করেছে। পেতাহ টিকভা ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে ৩০ জুলাই পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে।

এদিকে, ইরানে গ্রেপ্তার হওয়া কয়েকজনের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যেই রায় কার্যকর হয়েছে। বিচারপ্রক্রিয়ায় দ্রুততা আনতে সরকারের তরফ থেকে বিশেষ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, বিশেষ করে যেসব অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সম্পর্ক থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে।

ভবিষ্যতে আরও উত্তেজনা?

বিশ্লেষকদের মতে, এই ধরনের গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ ও পাল্টা ব্যবস্থা মধ্যপ্রাচ্যের দুই চিরবৈরী রাষ্ট্র ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলবে। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরবর্তী ধাপে সাইবার হামলা বা সীমান্ত এলাকাগুলোতে টার্গেটেড অপারেশনের ঝুঁকিও বাড়ছে।

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান বৈরিতা দিনে দিনে এক নতুন মাত্রা পাচ্ছে। গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ ও তথ্য পাচারের মতো ইস্যুগুলো দ্বন্দ্বকে আরও জটিল করে তুলছে। পরবর্তী ধাপে এই উত্তেজনা কতটা বিস্তার লাভ করবে, তা সময়ই বলে দেবে।

এম আর এম – ০১১৬, Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button