বিশ্ব

পাকিস্তানের দুঃসময়ে আবারও পাশে দাঁড়াল চীন

 চীন থেকে ৩৪০ কোটি ডলার বাণিজ্যিক ঋণ নবায়নসহ ১৩০ কোটি ডলারের পুনঃবিনিয়োগ নিশ্চিত করেছে পাকিস্তান। এই সহায়তায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১৪ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। আইএমএফের শর্ত পূরণ ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় বড় ভূমিকা রাখবে বেইজিংয়ের এই সহযোগিতা।

বিপদের সময় চীনের আর্থিক সহযোগিতা

পাকিস্তানের চলমান অর্থনৈতিক সংকটের প্রেক্ষাপটে আবারও সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিল চীন। সম্প্রতি বেইজিং ৩৪০ কোটি মার্কিন ডলারের একটি বাণিজ্যিক ঋণ নবায়ন করেছে, পাশাপাশি পুনঃবিনিয়োগ করেছে আরও ১৩০ কোটি ডলারের পরিশোধিত ঋণ। পাকিস্তানের অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্রে এসব তথ্য নিশ্চিত হয়েছে।

চীনের এ ধরনের সহযোগিতা পাকিস্তানের জন্য কোনো নতুন ঘটনা নয়, তবে চলমান বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি ও আইএমএফের শর্ত পূরণের দিক থেকে এটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।

বৈদেশিক রিজার্ভে বড় বুস্ট

এই মুহূর্তে পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই ঋণ ও সহায়তা এসেছে চীন ছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং বহুপাক্ষিক আর্থিক সংস্থা থেকে।

পাকিস্তানের অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আইএমএফের সঙ্গে চলমান ঋণ চুক্তির আওতায় জুনের মধ্যেই কমপক্ষে ১৪ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ বজায় রাখা একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। বেইজিংয়ের সহায়তা সে লক্ষ্য পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

আইএমএফ ও অর্থনৈতিক পুনর্গঠন

গত কয়েক বছর ধরেই পাকিস্তান অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের চেষ্টায় রয়েছে। ৭০০ কোটি ডলারের আইএমএফ বেইলআউট প্যাকেজের আওতায় সরকার আর্থিক শৃঙ্খলা, ব্যয় হ্রাস ও বৈদেশিক ঋণ ব্যবস্থাপনায় মনোযোগী হয়েছে।

সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, চীনসহ অন্যান্য মিত্র দেশগুলোর সহায়তা ও কাঠামোগত সংস্কারের মাধ্যমে দেশটির অর্থনীতি ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে।

চীন-পাকিস্তান সম্পর্ক: ‘লোহার মতো বন্ধুত্ব’

চীন ও পাকিস্তানের সম্পর্ক বহুদিনের এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক সবক্ষেত্রেই এ সম্পর্ক নিবিড়। সাম্প্রতিক সময়ে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের সঙ্গে ফোনালাপে দেশটির সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে অব্যাহত সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দেন।

ওয়াং ই বলেন, “সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই কেবল পাকিস্তানের নয়, বরং গোটা বিশ্বের দায়িত্ব।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, চীন সবসময় পাকিস্তানের ন্যায্য উদ্বেগ ও চাহিদার পাশে থাকবে।

ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার মাঝেও চীনের অবস্থান

কাশ্মীর সীমান্তে ভারত-পাকিস্তানের সাম্প্রতিক উত্তেজনার মধ্যে চীন পুনরায় স্পষ্ট করেছে যে তারা ইসলামাবাদের পাশে থাকবে। একইসঙ্গে ওয়াশিংটন, তেহরান ও রিয়াদসহ আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখার কথাও জানানো হয়েছে।

চীনের এই অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে এক ধরনের ভারসাম্য তৈরি করছে।

রাজনৈতিক অস্থিরতা ও জনআস্থা

অর্থনৈতিক সংকটের পাশাপাশি পাকিস্তান রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্য দিয়েও যাচ্ছে। নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও গণতন্ত্র নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পিটিআই থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক মহল পর্যন্ত সুশাসনের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছে।

তবে সরকারের আশা, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে এলে রাজনৈতিক আস্থাও বাড়বে। চীনের সহায়তা তাই কেবল অর্থনীতির জন্য নয়, বরং একটি বড় কূটনৈতিক বার্তাও বহন করছে।

উপসংহার

চীনের দেওয়া বাণিজ্যিক ঋণ ও কূটনৈতিক সমর্থন পাকিস্তানের জন্য নিঃসন্দেহে সময়োচিত ও গুরুত্বপূর্ণ। এই সহায়তা শুধু রিজার্ভে বাড়তি জোগানই নয়, বরং আঞ্চলিক রাজনীতিতেও পাকিস্তানকে কিছুটা শক্ত অবস্থানে নিয়ে যাবে। তবে দীর্ঘমেয়াদে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য কাঠামোগত সংস্কার, স্বচ্ছতা ও রাজনৈতিক ঐকমত্য অপরিহার্য। চীন যতই পাশে থাকুক, দেশের ভেতরের সমস্যাগুলোর সমাধান পাকিস্তানকেই করতে হবে।

এম আর এম – ০১১৫, Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button