ইরানে স্টারলিংকের ইন্টারনেট ব্যবহার করলেই হতে পারে মৃত্যুদণ্ড!

ইরানে স্টারলিংকসহ অনুমোদনহীন ইন্টারনেট প্রযুক্তি ব্যবহারে পাস হয়েছে কড়া নিরাপত্তা আইন। নতুন আইনে বলা হয়েছে—যেকোনো ধরনের বৈদেশিক সহযোগিতা বা স্পাই নেটওয়ার্কে অংশগ্রহণের অভিযোগে হতে পারে মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত শাস্তি। এ পদক্ষেপে দেশটির ডিজিটাল স্বাধীনতা চরম সংকটে।
ইন্টারনেট ব্যবহারে মৃত্যুদণ্ড? ইরানের নতুন আইন আতঙ্ক ছড়াল বিশ্বজুড়ে
ইরানের পার্লামেন্ট সম্প্রতি এমন একটি কড়া আইন পাস করেছে, যা দেশটির প্রযুক্তি ব্যবহারকারী ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে চরম উদ্বেগে ফেলেছে। নতুন আইন অনুসারে, অনুমোদনহীন স্যাটেলাইট ইন্টারনেট প্রযুক্তি — বিশেষত স্টারলিংক ব্যবহারকে ’জাতীয় নিরাপত্তার বিরুদ্ধে অপরাধ’ হিসেবে গণ্য করা হবে। এর শাস্তি হতে পারে দীর্ঘ কারাদণ্ড থেকে শুরু করে মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত।
কাদের টার্গেট করা হচ্ছে?
এই আইনের আওতায় পড়বে এমন ব্যক্তিরা যারা স্টারলিংক ডিভাইস আমদানি, ব্যবহার বা বিতরণ করেন। সরকারের অনুমতি ছাড়া যেকোনো ধরণের ইন্টারনেট টার্মিনাল স্থাপন করাকে এখন অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। বিশেষ করে ইসরায়েল বা তথাকথিত ‘শত্রু রাষ্ট্র’-এর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের সন্দেহে এই প্রযুক্তি ব্যবহারকারীদের কঠিন শাস্তির মুখোমুখি করা হবে।
আইনটির নাম এবং মূল ধারা
নতুন আইনটির নাম রাখা হয়েছে — ‘গোয়েন্দাগিরি, ইসরায়েল ও শত্রু রাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতা করে জাতীয় নিরাপত্তা ও স্বার্থের বিরুদ্ধে অপরাধের শাস্তি বৃদ্ধিকরণ আইন’।
আইনে বলা হয়েছে, যারা ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য কোনো শত্রু রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে গুপ্তচরবৃত্তি, সাইবার সহযোগিতা বা তথ্য পাচার করবেন, তারা ‘ইফসাদ ফিল আরদ’ বা ‘পৃথিবীতে চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি’র দায়ে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন।
কেন এমন আইন এখন?
গত কয়েক মাস ধরে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার উত্তেজনা তীব্র আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সংঘাতের সময় ইরানে ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট চলাকালে হাজার হাজার স্টারলিংক টার্মিনাল গোপনে পাচার করা হয়। সরকার মনে করছে, এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেশের ভেতর থেকে শত্রু রাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইরান এই আইনটির মাধ্যমে নিজের ডিজিটাল সার্বভৌমত্ব বজায় রাখতে চাইছে, কিন্তু তাতে সাধারণ নাগরিকের স্বাধীনতা হুমকির মুখে পড়ছে।
ডিভাইস পাচার ও কালোবাজারে বেচাকেনা
নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও বর্তমানে ইরানে আনুমানিক ২০ থেকে ৪০ হাজার স্টারলিংক টার্মিনাল সক্রিয় রয়েছে বলে জানানো হয়েছে। বেশিরভাগই কালোবাজারের মাধ্যমে দেশে প্রবেশ করেছে। দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী এইসব ডিভাইস খুঁজে বের করে জব্দ করতে অভিযান চালাচ্ছে।
কারা ঝুঁকিতে?
এই নতুন আইন কার্যকর হওয়ার ফলে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে পড়বেন —
- প্রযুক্তি উদ্যোক্তারা
- বিকল্প ইন্টারনেট ব্যবহারকারী সমাজকর্মীরা
- বিদেশি এনজিও সংযুক্ত কর্মীরা
- এমনকি যারা শুধু দ্রুতগতির ইন্টারনেটের সুবিধা পেতে চেয়েছিলেন তারাও
এইসব ব্যবহারকারী যে উদ্দেশ্যেই স্টারলিংক ব্যবহার করুন না কেন, সরকার যদি তা ‘রাষ্ট্রবিরোধী’ কার্যকলাপ হিসেবে চিহ্নিত করে, তবে তারা আইনের আওতায় আসতে পারেন।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
এই আইনের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, ইরান তার জনগণের তথ্যপ্রাপ্তির অধিকার দমন করতে চাচ্ছে। অনেকেই এই পদক্ষেপকে ’নতুন ডিজিটাল পর্দা’ নামে অভিহিত করছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
তেহরান ইউনিভার্সিটির আইনের অধ্যাপক হামিদ রেজা নাজারি বলেন:
“এই আইনের মাধ্যমে সরকার নিজের নিয়ন্ত্রণ শক্তিশালী করতে চায়, কিন্তু এটি সাধারণ নাগরিকদের উপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে। এটি স্পষ্টতই প্রযুক্তিগত স্বাধীনতার পরিপন্থী।”
কোন পথে যাচ্ছে ইরান?
এই আইনের মাধ্যমে ইরান একদিকে যেমন নিজস্ব নিরাপত্তা কৌশল জোরদার করছে, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মহলে আরও বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে — তথ্যপ্রযুক্তি ও মানবাধিকার কি আসলেই মুখোমুখি সংঘাতে যাচ্ছে?
স্টারলিংকসহ অনুমোদনহীন প্রযুক্তি ব্যবহারে মৃত্যুদণ্ডের বিধান বাস্তবায়নের ফলে ইরানে ডিজিটাল অধিকার চরম সংকটে পড়েছে। সরকার যদিও এটিকে নিরাপত্তা রক্ষার কৌশল হিসেবে ব্যাখ্যা করছে, তবে সমালোচকদের মতে — এই পদক্ষেপ জনগণের মৌলিক অধিকার খর্ব করছে।
এম আর এম – ০১১০, Signalbd.com