গাজায় ভয়াবহ বিস্ফোরণে ইসরাইলি সেনা নিহত, উত্তেজনা আরও বাড়ছে

গাজা উপত্যকার উত্তরে বিস্ফোরণে নিহত হলেন ইসরাইলি সেনাবাহিনীর এক সদস্য। চলতি মাসেই গাজায় প্রাণ হারালেন ২০ জনের বেশি সেনা। ঘটনার পর উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে পুরো অঞ্চল, উদ্বেগে আন্তর্জাতিক মহল।
গাজা উপত্যকার উত্তরে ভয়াবহ বিস্ফোরণে এক ইসরাইলি সেনা নিহত হয়েছেন। চলমান সংঘাতের মধ্যে এটি ইসরাইলের জন্য আরেকটি বড় ক্ষতি। ইসরাইলি বাহিনী নিহত সেনার পরিচয় প্রকাশ করেছে।
বিস্তারিত
রোববার (২৯ জুন) গাজা উপত্যকার উত্তরে একটি বড় ধরণের বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর (আইডিএফ) এক সদস্য প্রাণ হারান। আইডিএফ জানায়, নিহত সেনার নাম ইস্রায়েল নাটান রোজেনফেল্ড। বয়স মাত্র ২০ বছর। তিনি ৬০১ ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যাটালিয়নের একজন যোদ্ধা এবং ৪০১ ডিভিশনের অধীনে আকাবাত হা-বারজেল ইউনিটে দায়িত্বে ছিলেন।
আইডিএফ এক বিবৃতিতে জানায়, নিহত রোজেনফেল্ড ইসরাইলের রানানা শহরের বাসিন্দা ছিলেন। বিস্ফোরণের ঘটনার প্রকৃতি এখনও পুরোপুরি স্পষ্ট নয়, তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে—গোপন কোনো স্থানে পুঁতে রাখা বিস্ফোরক ডিভাইসের কারণেই এই দুর্ঘটনা।
চলতি বছরের মার্চে গাজায় যুদ্ধবিরতির পর ফের সংঘর্ষ শুরু হয়। এরপর থেকে গাজা উপত্যকায় সেনা হতাহতের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। জুন মাসেই গাজায় প্রাণ হারিয়েছেন ২০ জন ইসরাইলি সেনা, যা গত এক বছরে সর্বোচ্চ।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরাইল-গাজা যুদ্ধের ধারাবাহিকতায় এখন পর্যন্ত ৮০০–এর বেশি ইসরাইলি সেনা নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
মানবিক বিপর্যয় এবং গাজার পরিস্থিতি
ঘটনার দিন, অর্থাৎ রোববার গাজাজুড়ে ইসরাইলি বাহিনীর বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ৪৫ জন ফিলিস্তিনি। গাজার স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, নিহতদের মধ্যে নারী, শিশু এবং ত্রাণের অপেক্ষায় থাকা সাধারণ মানুষও ছিলেন। এই হামলাগুলোর বেশিরভাগই সংঘটিত হয়েছে গাজার শহর ও উত্তরাঞ্চলে।
ইসরাইলি সেনাবাহিনী ইতোমধ্যে উত্তর গাজার বাসিন্দাদের দ্রুত এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে। গাজা শহরের কিছু অংশ এবং আশপাশের অঞ্চল ইতোমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও উদ্বেগ
মধ্যপ্রাচ্যের উত্তপ্ত পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। একাধিক মানবাধিকার সংস্থা ও জাতিসংঘের সংস্থাগুলো গাজায় ক্রমবর্ধমান মানবিক সংকট নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই বিস্ফোরণ এবং সেনা হতাহতের ঘটনা ইসরাইলকে আরও আগ্রাসী পদক্ষেপ নিতে প্ররোচিত করতে পারে, যার ফলে যুদ্ধ পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হতে পারে।
সামরিক বিশ্লেষণ ও প্রতিরোধ বাহিনীর তৎপরতা
গাজার প্রতিরোধ যোদ্ধারা দীর্ঘদিন ধরে গোপন সুড়ঙ্গপথ, বিস্ফোরক ফাঁদ এবং গেরিলা কৌশলের মাধ্যমে ইসরাইলি সেনাদের প্রতিরোধ করে আসছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ইসরাইলি সেনাবাহিনীর সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে এই অনিশ্চিত ও জটিল লড়াইয়ের ময়দান।
ইসরাইলি আর্মি রেডিওর তথ্য অনুযায়ী, মার্চ থেকে গাজায় পুনরায় সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর থেকেই ৩০ জনের বেশি সেনা নিহত হয়েছে হামাস ও অন্যান্য প্রতিরোধ যোদ্ধাদের হামলায়।
সারসংক্ষেপঃ
গাজায় ইসরাইলি সেনা নিহতের ঘটনা এই সংঘাতকে নতুন মোড় দিতে পারে। একদিকে মানবিক সংকট, অন্যদিকে সেনা হতাহতের চাপ—এই দুই দিক থেকেই পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, পরবর্তী পদক্ষেপে নির্ভর করছে এই উত্তপ্ত পরিস্থিতি আরও ছড়াবে, নাকি কোনো সমঝোতার দিকে গড়াবে।
এম আর এম – ০১০৩, Signalbd.com