গাজায় যুদ্ধবিরতির দাবিতে ভিয়েনায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ

ইসরায়েলি হামলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনার রাজপথে নেমে আসে শত শত মানুষ। ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে তাঁরা ‘এখনই যুদ্ধবিরতি চাই’—এই স্লোগানে গর্জে ওঠেন। সমাবেশে বক্তব্য দেন মানবাধিকারকর্মীসহ একাধিক স্থানীয় নাগরিক।
ঘটনা ও বিক্ষোভের বিস্তারিত:
গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে এবং ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে গতকাল শনিবার (২৮ জুন) অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনাতে বিশাল এক বিক্ষোভ মিছিল ও জনসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন ভিডিও এবং স্থানীয় সংবাদসূত্র অনুযায়ী, বিক্ষোভে অংশ নেন শত শত মানুষ। তাঁরা ফিলিস্তিনের জাতীয় পতাকা, ব্যানার এবং প্ল্যাকার্ড হাতে রাজপথে নামেন। ‘Ceasefire Now’ (এখনই যুদ্ধবিরতি চাই), ‘Free Palestine’, ‘Stop the Genocide’—এমন নানা স্লোগান ধ্বনিত হয় মিছিলে।
বিক্ষোভকারীরা দাবি করেন, গাজায় চলমান সশস্ত্র সংঘাত অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে এবং মানবিক সহায়তা নির্বিঘ্নে পৌঁছানোর জন্য একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতির প্রয়োজন রয়েছে।
অংশগ্রহণকারীদের বক্তব্য ও বার্তা:
সমাবেশ শেষে আয়োজিত বক্তব্য পর্বে অংশগ্রহণ করেন বিভিন্ন পেশার মানুষ, যার মধ্যে মানবাধিকারকর্মী, শিক্ষার্থী এবং প্রবাসী ফিলিস্তিনিরা ছিলেন।
সমাবেশে বক্তব্য দেন ইয়াসমিন আকার নামের এক মানবাধিকারকর্মী, যিনি চলতি মাসের শুরুতে সুইডিশ পরিবেশকর্মী গ্রেটা থুনবার্গের সঙ্গে গাজায় ত্রাণ পাঠানোর মিশনে অংশ নিয়েছিলেন। ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে তাঁদের জাহাজ ইসরায়েলি বাহিনী থামিয়ে দেয় এবং তাঁদের অস্ট্রিয়ায় ফেরত পাঠানো হয়।
ইয়াসমিন বলেন,
“আমরা শুধু যুদ্ধবিরতির দাবি করছি না, আমরা ন্যায়বিচার, মানবতা এবং একজন মানুষের জীবন রক্ষার অধিকার ফিরিয়ে আনার দাবি জানাচ্ছি।”
আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট:
ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যকার চলমান সংঘাতের কারণে গত কয়েক মাস ধরে গাজা উপত্যকা রীতিমতো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা, খাদ্য এবং পানি সরবরাহ বিপর্যস্ত। হাজার হাজার মানুষ নিহত ও আহত হয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক মহল থেকে যুদ্ধবিরতির দাবি জোরালো হলেও ইসরায়েল এখনো হামলা অব্যাহত রেখেছে। ট্রাম্পের মন্তব্য অনুযায়ী, ‘এক সপ্তাহের মধ্যে চুক্তি হতে পারে’—এই বক্তব্য নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। ইসরায়েলি কর্মকর্তারা তাঁর বক্তব্যকে ‘অবাস্তব’ এবং ‘রাজনৈতিক ইচ্ছাপ্রসূত’ বলে অভিহিত করেছেন।
ইউরোপজুড়ে প্রতিবাদের ঢেউ:
শুধু ভিয়েনা নয়, ইউরোপজুড়েই ফিলিস্তিনপন্থী আন্দোলন সম্প্রসারিত হচ্ছে। বার্লিন, প্যারিস, আমস্টারডাম, লন্ডনসহ বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ চলছে। এসব বিক্ষোভে অংশ নিচ্ছেন সাধারণ নাগরিক, প্রবাসী ফিলিস্তিনি এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলো।
অস্ট্রিয়ায় বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের অংশগ্রহণ বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তাঁরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে সচেতনতা বাড়াতে এবং তথ্য ছড়িয়ে দিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন।
বিশ্লেষণ ও মানবিক প্রেক্ষাপট:
বিশ্লেষকদের মতে, গাজার পরিস্থিতি শুধু রাজনৈতিক নয়, এটি এখন একটি গভীর মানবিক সংকটে রূপ নিয়েছে। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাও একাধিকবার যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে।
তবে রাজনীতিক দ্বন্দ্ব, ইসরায়েলি নীতিনির্ধারকদের অবস্থান এবং হামাসের প্রতিরোধ—এই সব মিলিয়ে পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল হয়ে উঠেছে।
অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় অনুষ্ঠিত এই বিক্ষোভ তাই শুধু একটি প্রতিবাদ নয়; এটি বিশ্ববাসীর একটি বার্তা—নিপীড়নের বিরুদ্ধে, ন্যায়ের পক্ষে, মানবতার জন্য।
“এই আন্দোলন দেখিয়ে দিয়েছে, ইউরোপের জনগণ ফিলিস্তিনিদের পাশে আছে। শুধু সরকার নয়, মানুষও মানবতার পক্ষে দাঁড়াতে জানে।” — একজন অংশগ্রহণকারী।
সারসংক্ষেপঃ
ভিয়েনায় আয়োজিত বিক্ষোভ এবং সমাবেশ ছিল একটি শক্তিশালী বার্তা—গাজা আর রক্তের নদী দেখতে চায় না বিশ্ববাসী।
যুদ্ধবিরতি এখন সময়ের দাবি।
তবে রাজনৈতিক অস্থিরতা, আন্তর্জাতিক কৌশলগত হিসাব এবং শক্তির খেলা কতটা জায়গা দেবে মানবতার জয়কে—তা নিয়েই প্রশ্ন রয়ে যায়।
এম আর এম – ০১০৩, Signalbd.com