বিশ্ব

জাতিসংঘের পরমাণু সংস্থার বিরুদ্ধে ‘কঠোর ব্যবস্থা’ নিল ইরান

 ইসরায়েলের হামলা ও পশ্চিমা জোটের ভূমিকার বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে গিয়ে এবার আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (IAEA) সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করল ইরান। পরিদর্শনের অনুমতি বাতিল করে সংস্থার প্রধানকে ইরানে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

পরমাণু সংস্থার প্রধানকে ‘নিষিদ্ধ’ ঘোষণা করল ইরান

টানা ১২ দিনের সংঘাত ও চাপানউতোরের পর আন্তর্জাতিক মহলে আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে ইরানের সর্বশেষ ঘোষণা। জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষক সংস্থা আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (IAEA) সঙ্গে সবধরনের সহযোগিতা বাতিল করেছে ইরান। শুধু তাই নয়, সংস্থার মহাপরিচালক রাফায়েল মারিয়ানো গ্রোসিকে ইরানে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না বলেও জানানো হয়েছে।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি বলেন, “আইএইএ এখন পক্ষপাতদুষ্টভাবে কাজ করছে। তারা নিরপেক্ষ থাকার বদলে পশ্চিমাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে লিপ্ত। আমাদের নিরাপত্তা ও স্বার্বভৌমত্ব রক্ষায় আমরা এই কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

দীর্ঘ ১২ দিন ধরে চলা সংঘাত

১২ দিন ধরে চলা ইসরায়েল-ইরান সংঘাতে প্রাণ গেছে দুই দেশের বহু মানুষের। এই সংঘাতের সূচনা হয় গত ১৩ জুন, যখন ইসরায়েল ভয়াবহ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরানের সামরিক, পারমাণবিক ও বেসামরিক স্থাপনাগুলোর ওপর। ইরান সরকারের তথ্যমতে, এই হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৬০৬ জন এবং আহত হয়েছেন ৫ হাজার ৩৩২ জন।

জবাবে ইরানও চালায় পাল্টা আক্রমণ। ইসরায়েলের বিভিন্ন অঞ্চলে মিসাইল ও ড্রোন হামলা চালায় তারা। হিব্রু ইউনিভার্সিটি অব জেরুজালেমের দেওয়া তথ্যমতে, এতে কমপক্ষে ২৯ জন নিহত এবং আহত হয়েছেন ৩ হাজার ৪০০ জনের বেশি মানুষ।

এই সংঘাতের মধ্যেই ইরান সরকারের মনে হয়েছে, IAEA তাদের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর ভূমিকা রাখেনি। বরং সংস্থাটি নিরপেক্ষ থাকার বদলে ইরানকে চাপে রাখার অপচেষ্টা করেছে।

পার্লামেন্টে নতুন আইন ও পরবর্তী পদক্ষেপ

সংঘাত চলাকালীন ইরানের পার্লামেন্ট একটি নতুন আইন পাশ করেছে, যার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পরমাণু সংস্থার সঙ্গে সবধরনের সহযোগিতা স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এই আইন অনুযায়ী—

  • আর কোনো পরমাণু স্থাপনায় নজরদারি ক্যামেরা বসানো যাবে না
  • আগের ইনস্টলকৃত ক্যামেরা খুলে ফেলা হবে
  • IAEA-এর কোনো সদস্য বা প্রতিনিধি ইরানে প্রবেশ করতে পারবে না

এই পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়নের কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে বলে ইরান সরকারের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও উদ্বেগ

বিশ্ব সম্প্রদায় ইরানের এই পদক্ষেপকে গভীর উদ্বেগের চোখে দেখছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র এবং জাতিসংঘ ইতোমধ্যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

একজন পশ্চিমা কূটনীতিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “এই সিদ্ধান্ত পারমাণবিক শান্তি উদ্যোগের জন্য হুমকি স্বরূপ। যদি IAEA ইরানের পরমাণু কর্মসূচির ওপর নজরদারি করতে না পারে, তাহলে ভবিষ্যতে বড় বিপর্যয় ঘটতে পারে।”

বিশ্লেষকদের মতামত: কোন পথে যাচ্ছে ইরান?

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ইরান এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যেখানে তারা নিজেদের সিদ্ধান্তে পশ্চিমা বিশ্বের প্রভাব রাখতে দিতে চায় না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, “ইরান দীর্ঘদিন ধরে পারমাণবিক উন্নয়ন কর্মসূচি নিয়ে আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে রয়েছে। বর্তমান পদক্ষেপ সেই চাপের পাল্টা জবাব হিসেবে দেখা যেতে পারে। তবে এতে উত্তেজনা আরও বাড়বে বলেই আশঙ্কা।”

তিনি আরও বলেন, “এখন দেখার বিষয়—আন্তর্জাতিক মহল এই সিদ্ধান্তের পর কেমন প্রতিক্রিয়া জানায় এবং পরবর্তী পদক্ষেপ কী নেয়।”

সাময়িক যুদ্ধবিরতি: কতটা স্থায়ী হবে?

বর্তমানে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সাময়িক যুদ্ধবিরতি চলছে। ২৪ জুন থেকে কার্যকর হওয়া এই যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যৎ নিয়ে নানা সংশয় দেখা দিয়েছে। দুই দেশের মধ্যে প্রচণ্ড অবিশ্বাস ও ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার প্রেক্ষিতে কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছে না যে এই শান্তি কতদিন স্থায়ী হবে।

সারসংক্ষেপঃ

ইরানের পক্ষ থেকে IAEA-র বিরুদ্ধে নেওয়া পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ইতিহাসে এক নতুন মোড় তৈরি করতে পারে। এটি শুধু মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি নয়, বরং বৈশ্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ প্রক্রিয়ার ওপরও বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে।

তবে বিশ্লেষকদের মতে, বিষয়টি এখন অনেকটাই নির্ভর করছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পরবর্তী কূটনৈতিক পদক্ষেপ ও সংযত আচরণের ওপর।

এম আর এম – ০০৯৭, Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button