গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ৮১ নিহত, ৪০০+ আহত

গাজা, ২৯ জুন ২০২৫ – অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর বোমা হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ৮১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন চার শতাধিক। এ ঘটনায় গাজার বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক ধ্বংসস্তুপ সৃষ্টি হয়েছে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
শিশু, নারী ও বয়স্কদের ওপর হামলা: গাজায় বেদনার ছায়া
গাজার রাজধানী এলাকায় অবস্থিত একটি স্টেডিয়ামের আশেপাশে ইসরায়েলি বিমানবাহিনীর বিমান থেকে বিধ্বংসী বোমা ফেলা হয়। ওই স্টেডিয়ামে হাজার হাজার উদ্বাস্তু ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়েছিলেন। বোমা হামলায় শিশুসহ অন্তত ১১ জন প্রাণ হারান। এক প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনায়, ‘হঠাৎ বিস্ফোরণ ঘটে, আশেপাশের তাঁবুগুলো ধ্বংস হয়ে যায়। আমরা মরদেহ খুঁজে মাটিও খুঁড়ছি।’
গাজার আল-মাওয়াসি এলাকায় একটি আবাসিক ভবন এবং আশ্রয়স্থল হিসেবে থাকা তাঁবুতে আরও বোমা হামলা হয়, যেখানে অন্তত ১৪ জন নিহত হন, তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েকজন শিশু। নিহত শিশুদের দাদি সৌদ আবু তেইমা বলেন, “এই শিশুরা তাদের কী অপরাধ করেছে? তারা কি ইসরায়েলের জন্য কোনও হুমকি ছিল?”
ব্যক্তিগত ক্ষতির করুণ কাহিনি
রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মোহাম্মদ হাবিব জানান, ওই হামলায় তার বাবা, ভাতিজা এবং প্রতিবেশী কয়েকজন শিশু মারা গেছেন। তিনি বলেন, “আমরা তাদের (ইসরায়েল) কিছু করিনি, তাহলে কেন আমাদের ক্ষতি করছেন? আমরা সাধারণ মানুষ।”
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান: নিহতের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি আগ্রাসনে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানাচ্ছে, এ পর্যন্ত ৫৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যার বেশির ভাগই নারী ও শিশু। তবে, ইসরায়েলের একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, বাস্তব সংখ্যা আরও অনেক বেশি, প্রায় ১ লাখের কাছাকাছি।
লন্ডনের ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের হোলোওয়ে কলেজের অর্থনীতিবিদ ও আন্তর্জাতিক সংঘাত গবেষক অধ্যাপক মাইকেল স্পাগাটের গবেষণা অনুযায়ী, গাজার এই দীর্ঘদিনের সংঘাতে নিহতের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ১ লাখে পৌঁছেছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও মানবাধিকার নিয়ে প্রশ্ন
বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার সংগঠনগুলো ইসরায়েলের এই হামলা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সাধারণ মানুষের ওপর অকারণ সহিংসতা ও বোমা হামলার নিন্দা জানিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় দ্রুত উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
গাজায় চলছে এক ভয়াবহ মানবিক সংকট
গাজার অবরুদ্ধ অবস্থা, বিদ্যুৎ ও চিকিৎসা সরবরাহের অভাবের কারণে আহতরা সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছে না। হাসপাতালে জায়গার সংকট, ওষুধের ঘাটতি ও জলবিহীনতায় মানুষের জীবন বিপন্ন হচ্ছে। শিশু ও নারীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
ফিলিস্তিনের এই ধ্বংসস্তূপ আর নিঃস্ব মানুষের কান্না শুধু গাজার সীমাবদ্ধতায় থেমে থাকবে না। আন্তর্জাতিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় এখন সময় এসেছে সক্রিয় ভূমিকা নেওয়ার। সাধারণ মানুষের জীবন ও মর্যাদা রক্ষাই আজকের পৃথিবীর বড় চ্যালেঞ্জ।