ট্রাম্পকে ই’স’রা’য়েলের ‘ড্যাডি’ হিসেবে সম্বোধন করলেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ইসরায়েলের প্রতি মার্কিন সমর্থন ও আয়াতুল্লাহ খামেনির বিরুদ্ধে ট্রাম্পের কটুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানালেন ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি। বললেন, ইরানকে থামাতে ‘ড্যাডি ট্রাম্প’-এর শরণাপন্ন হওয়া ছাড়া ইসরায়েলের আর কোনো উপায় ছিল না।
ট্রাম্পের মন্তব্যের জবাবে তীব্র প্রতিক্রিয়া
মার্কিন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে কটাক্ষ করে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ইসরায়েল কিংবা যুক্তরাষ্ট্র চাইলে খামেনির জীবন শেষ করে দিতে পারত, কিন্তু তিনি ‘রক্ষা’ করেছেন। এই মন্তব্যকে ‘অসম্মানজনক ও উসকানিমূলক’ আখ্যা দিয়ে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি।
এক্স-এ (পূর্বের টুইটার) দেওয়া এক পোস্টে আরাঘচি বলেন,
“মহান ইরানি জাতি পুরো বিশ্বকে দেখিয়েছে—ইসরায়েলি শাসকদের মার্কিন ‘ড্যাডি’র (ট্রাম্প) কাছে ছুটে যাওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় ছিল না। যদি তারা আবার ভুল পথে পা বাড়ায়, তবে ইরান আসল শক্তির মুখ উন্মোচনে দ্বিধা করবে না।”
ইরান-মার্কিন উত্তেজনার নতুন রূপ
গত কয়েক মাস ধরে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক চরম উত্তেজনাপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তিনটি ইরানি পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালিয়েছে। যদিও এই হামলার ফলাফল নিয়ে সংশয় রয়েছে, তবে এটা স্পষ্ট—যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের পাশে অবস্থান নিয়েছে।
এই অবস্থায় ট্রাম্পের মন্তব্য নতুন করে আগুনে ঘি ঢালার মতো কাজ করেছে। তিনি দাবি করেন,
“আমি জানতাম খামেনিকে কোথায় আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমি ইসরায়েল বা আমাদের শক্তিশালী সেনাবাহিনীকে তাকে হত্যা করতে দিইনি। আমি তাকে এক জঘন্য মৃত্যু থেকে বাঁচিয়েছি।”
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বার্তা: সম্মান ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান
আরাঘচি বলেন,
“যদি ট্রাম্প সত্যিই আলোচনায় আগ্রহী হন, তবে তাকে আয়াতুল্লাহ খামেনির প্রতি সম্মান ফিরিয়ে আনতে হবে এবং লক্ষ লক্ষ ইরানির হৃদয়ে আঘাত দেওয়া বন্ধ করতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, ইরান কখনোই শক্তির দাপট বা হুমকির সামনে মাথা নত করবে না। বরং, পরিস্থিতি জটিল হলে তারা যথোপযুক্ত জবাব দিতে প্রস্তুত।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও বিশ্লেষণ
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই মন্তব্য ইরান-মার্কিন সম্পর্ক আরও তলানিতে নিয়ে যেতে পারে। অতীতে পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আলোচনায় আশার কিছু ঝলক দেখা গেলেও এই ধরনের মন্তব্য সেই সম্ভাবনায় জল ঢালছে।
এছাড়াও, ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান সামরিক সহযোগিতা এবং আঞ্চলিক উত্তেজনা মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলছে। ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ দীর্ঘদিন ধরেই উদ্বিগ্ন।
পারমাণবিক আলোচনার ভবিষ্যৎ
ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি ইরানের ওপর থেকে কিছু নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের চেষ্টা করছেন। তার মতে, আলোচনায় ফিরে আসা এখন সময়ের দাবি। তবে ইরান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পারমাণবিক আলোচনা আপাতত পুনরায় শুরু করবে না।
বিশ্লেষকদের মতে, যদি দুই পক্ষই পারস্পরিক আক্রমণাত্মক মনোভাব ত্যাগ না করে, তবে আগামী দিনে একটি বড় ধরনের সংঘর্ষ অস্বীকার করার উপায় থাকবে না।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন-
“বিশ্বকে আমরা দেখিয়ে দিয়েছি—ইসরায়েলকে বাঁচাতে ড্যাডি ট্রাম্পের শরণ নেওয়া ছাড়া তাদের কিছুই করার ছিল না”—আব্বাস আরাঘচি ।
ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা
মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন এক সময় বাস্তব মনে হলেও, বর্তমান পরিস্থিতি তার পুরো বিপরীত। ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিশ্বাসের ঘাটতি, পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে দ্বন্দ্ব, এবং ইসরায়েলকে ঘিরে ভূরাজনৈতিক খেলা পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলছে।
এম আর এম – ০০৯০, Signalbd.com