কানাডার সাথে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা বন্ধের ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের

ডিজিটাল কর আরোপের পরিপ্রেক্ষিতে কানাডার সঙ্গে চলমান সব বাণিজ্য আলোচনা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি এটিকে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর সরাসরি ‘অত্যন্ত অন্যায়’ আক্রমণ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।
ট্রাম্পের হঠাৎ সিদ্ধান্ত
যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা সম্পর্ক নতুন উত্তেজনার মধ্যে প্রবেশ করল। শুক্রবার (২৭ জুন) রাতে এক সামাজিকমাধ্যম পোস্টে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়ে দেন, কানাডার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সব ধরনের বাণিজ্য আলোচনা অবিলম্বে বন্ধ করা হচ্ছে।
কানাডা সদ্য যে ডিজিটাল সার্ভিসেস ট্যাক্স কার্যকর করতে যাচ্ছে, তা যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর ওপর সরাসরি ও ‘অন্যায় আক্রমণ’ বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।
ট্রাম্প লিখেছেন, “কানাডা এখন আমাদের টেক কোম্পানিগুলোর ওপর অন্যায়ভাবে কর আরোপ করছে। এই আক্রমণের জবাবে আমরা এখনই সমস্ত বাণিজ্য আলোচনা বন্ধ করছি।”
তিনি আরও জানান, “আগামী সাত দিনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশে কানাডাকে কী হারে শুল্ক দিতে হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হবে।”
ডিজিটাল কর নিয়ে পুরোনো বিরোধ
কানাডা চলতি মাসেই ৩ শতাংশ ডিজিটাল সার্ভিস ট্যাক্স কার্যকর করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে, যা গুগল, অ্যামাজন, অ্যাপল ও মেটার মতো মার্কিন টেক জায়ান্টদের বছরে ২ থেকে ৩ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি আর্থিক ক্ষতির মুখে ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এই কর মূলত কানাডায় অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে প্রাপ্ত রাজস্বের ওপর নির্ধারণ করা হবে। কানাডার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ডিজিটাল অর্থনীতিতে ন্যায্য অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতেই এই কর আরোপ করা হচ্ছে।
তবে গত বছর থেকেই এই প্রস্তাব ঘিরে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মধ্যে টানাপড়েন চলছিল। জি-৭ সম্মেলনে দুই দেশের মধ্যে একটি অর্থনৈতিক চুক্তির বিষয়ে আলোচনা শুরু হলেও এই নতুন পদক্ষেপে তা ব্যাহত হলো।
দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি
ট্রাম্পের ঘোষণার পরপরই আন্তর্জাতিক বাজারে উত্তেজনার ছায়া পড়েছে। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, এই সিদ্ধান্ত উত্তর আমেরিকার দুই বৃহৎ অর্থনীতির মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী বিরোধ সৃষ্টি করতে পারে।
বিশ্লেষক ইনু মালাক বলেন, “ট্রাম্প প্রায়ই এমন চাপ প্রয়োগের কৌশল ব্যবহার করেন। এতে হয়তো আলোচনা আবার শুরু হতে পারে, কিন্তু সাময়িকভাবে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হবেই।”
কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “আমরা কানাডিয়ানদের স্বার্থেই আলোচনা চালিয়ে যাব। কোনো চাপের মুখে নীতিগত সিদ্ধান্ত বদলানো হবে না।”
কতটা আর্থিক প্রভাব পড়তে পারে
ডিজিটাল সার্ভিসেস ট্যাক্স কার্যকর হলে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোর বছরে আনুমানিক ৩০০ কোটি ডলার পর্যন্ত অতিরিক্ত কর পরিশোধ করতে হতে পারে বলে অর্থনৈতিক বিশ্লেষণে উঠে এসেছে।
এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্র যদি কানাডার পণ্যে নতুন শুল্ক আরোপ করে, তবে কানাডার রপ্তানি খাত সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ২০২৪ সালে দুই দেশের মধ্যে মোট বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল প্রায় ৮০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যার সিংহভাগই ছিল প্রযুক্তি ও কৃষিপণ্য ভিত্তিক।
ট্রাম্পের বাণিজ্য কৌশল আবার ফিরে এলো?
অনেক পর্যবেক্ষক মনে করছেন, নির্বাচনের আগে ট্রাম্পের এই কড়া অবস্থান মূলত তাঁর “আমেরিকা ফার্স্ট” নীতির ধারাবাহিকতা। ২০১৬–২০২০ মেয়াদে তিনি চীন, ইউরোপ, এমনকি কানাডার সঙ্গেও বাণিজ্য যুদ্ধের মতো অবস্থান নিয়েছিলেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক জনাথন ব্রুকস বলেন, “এই ঘোষণা ট্রাম্পের পুরোনো কৌশলেরই প্রতিফলন। তবে এটি রাজনৈতিক সুবিধা এনে দেবে কি না, তা সময়ই বলে দেবে।”
সামনে কী হতে পারে?
এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্ক নতুন সংকটে পড়েছে। ডিজিটাল করের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের শক্ত প্রতিক্রিয়া উভয় দেশের অর্থনীতি ও পারস্পরিক নির্ভরতার ওপর বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
বিশ্লেষকদের মতে, আগামী সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরোপিত সম্ভাব্য শুল্কের পর বিস্তারিত প্রতিক্রিয়া আসবে।
এম আর এম – ০০৮৪, Signalbd.com