ইসরায়েলের বিরসেবায় ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার চলমান উত্তেজনার মধ্যেই আজ আবারও ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর বিরসেবায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। ভোররাতে চালানো এই হামলার জেরে বিরসেবা-ডাইমোনা রেললাইন–এর একটি গুরুত্বপূর্ণ রেলস্টেশন সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ।

ইসরায়েলি রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হামলার সময় রেলস্টেশন এলাকায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে সব ট্রেন চলাচল স্থগিত করা হয়েছে। ফলে তেল আবিব থেকে ডাইমোনা হয়ে বিরসেবা অঞ্চলের আন্তঃনগর যোগাযোগ ব্যাহত হয়েছে।

ভোরে বাজে সাইরেন, আতঙ্কে ঘুম ভাঙে শহরবাসীর

ইসরায়েলি স্থানীয় সময় আজ শুক্রবার ভোররাতে বিরসেবায় ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে। শহরের বিভিন্ন এলাকায় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায় এবং সতর্কসংকেত সাইরেন বাজতে থাকে। এতে পুরো শহরে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

বিরসেবা পৌর কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “উদ্ধারকারী দল দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রয়োজনীয় তৎপরতা চালাচ্ছে। এখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।”

ইরান-ইসরায়েল সংঘাত: আগুনে ঘি ঢালছে পাল্টাপাল্টি হামলা

গত কয়েকদিন ধরেই ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে আকাশপথে পাল্টাপাল্টি হামলা চলছে। ইরান দাবি করেছে, তারা শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ব্যবহার করে ইসরায়েলের বিভিন্ন সামরিক ও কৌশলগত স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে।

ইসরায়েল পাল্টা হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা যেমন নাতাঞ্জ ও আরাক লক্ষ্যবস্তু করেছে। সম্প্রতি তেল আবিবের রামাত গান, সরোকা হাসপাতাল, ও দূতাবাসসংলগ্ন এলাকা-তেও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঘটনা ঘটেছে।

মেগান ডেভিড অ্যাডম-এর প্রকাশিত ছবি ও তথ্য

ইসরায়েলি জরুরি উদ্ধারকারী সংস্থা মেগান ডেভিড অ্যাডম (Magen David Adom) ক্ষেপণাস্ত্র আঘাতের পরপরই সামাজিক মাধ্যমে ছবি প্রকাশ করেছে। ছবিতে বিরসেবা শহরের কিছু ভবনের দেয়ালে ক্ষয়ক্ষতি এবং ধোঁয়া দেখা যায়।

তবে সংস্থাটি নিশ্চিত করেছে,

“এই হামলায় এখন পর্যন্ত কোনো ব্যক্তি হতাহত হয়নি। আমরা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি এবং প্রস্তুত আছি।”

কূটনৈতিক সমাধানের আশা ও হুঁশিয়ারি

সংঘাতময় পরিস্থিতির মাঝেও কূটনৈতিক আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন পশ্চিমা নেতারা। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন,

“আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যেই কূটনৈতিক সমাধানের সুযোগ রয়েছে।”

তবে ইসরায়েলি প্রেসিডেন্ট পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়ে জানিয়েছেন,

“যুক্তরাষ্ট্র হস্তক্ষেপ না করলেও আমরা জানি কী করতে হবে।”

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি দাবি করেছেন,

“আমাদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বিশ্বের বহু মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়েছে।”

আঞ্চলিক নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জে উদ্বেগ বাড়ছে

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার এই যুদ্ধাবস্থা শুধু এই দুটি দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এর মধ্যেই:

• রাশিয়া ও চীনের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে ইরান ইস্যুতে ফোনালাপ হয়েছে
• অস্ট্রেলিয়া তেহরানে তাদের দূতাবাস বন্ধ করে দিয়েছে
• জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে জরুরি বৈঠক আহ্বান করেছে ইরান

এই পদক্ষেপগুলো ইঙ্গিত দিচ্ছে, পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক উদ্বেগ তৈরি করেছে।

ট্রাম্প প্রশাসনের ভূমিকা ও অবস্থান

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন,

“ইরানে হামলার বিষয়ে আমরা কূটনীতিকে আরও দুই সপ্তাহ সময় দিতে চাই, তারপর সিদ্ধান্ত হবে।”

তবে মার্কিন সেনা বা বিমানবাহিনী এখনো সরাসরি এই সংঘাতে জড়ায়নি, যদিও হোয়াইট হাউস বলেছে, ‘শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত’ নেওয়া হতে পারে।

যুদ্ধের আগুন থামবে কবে?

ইরান ও ইসরায়েল– উভয় দেশই পরমাণু ও সামরিক শক্তিতে বলীয়ান। তাদের মধ্যে সরাসরি সংঘাত শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, বিশ্বের ভূ-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাও হুমকির মুখে ফেলতে পারে।

বিরসেবায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মতো ঘটনায় বুঝে নেওয়া যায়, সংঘাত এখন নাগরিক এলাকায় পৌঁছে গেছে, যা যুদ্ধাপরাধ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের আশঙ্কা বাড়ায়।

এখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একমাত্র দায়িত্ব হবে যুদ্ধ থামিয়ে কূটনৈতিক সমাধান নিশ্চিত করা।