বিশ্ব

ইরান যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়নি, শত্রুপক্ষই ভিক্ষা চেয়েছিল

ইরান যুদ্ধবিরতি করেনি, শত্রুপক্ষই ভিক্ষা চেয়েছে: সাবেক বিচারকের গোয়েন্দা তথ্য

ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে আলোড়ন সৃষ্টিকারী তথ্য জানালেন ইরানের অবসরপ্রাপ্ত সুপ্রিম কোর্টের বিশিষ্ট বিচারক আলী আসগর মুজতাহিদজাদেহ। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ে যুদ্ধবিরতি নিয়ে জোর জল্পনা চললেও, শনিবার (২৮ জুন) রাশিয়া ভিত্তিক ‘রাসা নিউজ’-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মুজতাহিদজাদেহ স্পষ্ট করে বলেন, ইসলামিক রিপাবলিক কোনভাবেই যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়নি। বরং শত্রুপক্ষই যুদ্ধবিরতির জন্য ভিক্ষা করেছিল।

ইরানের সাথে কোনো যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়নি

আলী আসগর মুজতাহিদজাদেহ সাক্ষাৎকারে জানান, “আমাদের দেশের বিরুদ্ধে যারা যুদ্ধ শুরু করেছিল, তারা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়ে যুদ্ধবিরতির জন্য বিনীত অনুরোধ করেছে। কিন্তু ইসলামিক রিপাবলিকের তরফ থেকে যুদ্ধবিরতিতে কোনো ধরনের সমঝোতা হয়নি।” তিনি আরও বলেন, তেহরানের সরকারি বিবৃতিতে যুদ্ধবিরতির কোনো উল্লেখ পাওয়া যায়নি, যা প্রমাণ করে ইরান শান্তি বা চুক্তি চায়নি।

তিনি জানান, “শত্রু বাহিনী আক্রমণ করেছিল, আমরা প্রতিরোধ করেছি এবং তাদের আঘাত করতে বাধ্য হয়েছি। কিন্তু যুদ্ধবিরতি আমাদের পক্ষ থেকে নয়, শত্রু পক্ষ থেকে একতরফাভাবে ঘোষণা করা হয়েছে।”

ইরান সর্বদা সজাগ এবং সশস্ত্র

কোমের বিশেষ ধর্মীয় আদালতের সাবেক প্রধান বিচারক মুজতাহিদজাদেহ বলেন, “ইরান সর্বদা জাগ্রত ও সশস্ত্র। আমরা আমাদের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সর্বাত্মক প্রস্তুত।” তিনি ইরানের একাত্মতার কথাও স্মরণ করিয়ে দেন এবং বলেন, “আমাদের জনগণ আজ ঐক্যের বাণী দিয়েছে, যা আমাদের শক্তি এবং সম্মিলিত প্রতিরোধের প্রতীক।”

সর্বোচ্চ নেতার বার্তা

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিও দেশের জনগণের ঐক্যের কথা তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, “আমাদের জনগণ একত্রিত হয়ে বিশ্বের কাছে একটি শক্তিশালী বার্তা দিয়েছে যে, আমরা বিভক্ত নই। আমাদের কণ্ঠস্বর এক।” খামেনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘আত্মসমর্পণ’ আহ্বানকে সমালোচনা করে বলেন, “ট্রাম্পের মুখে এ ধরনের আহ্বান ছিল বিশাল অসঙ্গতি, যা কেবল রাজনৈতিক ইস্যু সৃষ্টি করেছে।”

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন কূটনৈতিক পদক্ষেপ

অন্যদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, আগামী সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের কর্মকর্তারা আলোচনায় বসবেন। তিনি আশা প্রকাশ করেছেন যে, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের কারণে দীর্ঘদিন স্থগিত থাকা সংলাপ পুনরায় শুরু হবে। ট্রাম্প বলেন, “আলোচনা পুনরায় শুরু হওয়া উচিত, যা উভয় দেশের জন্য শান্তি ও স্থিতিশীলতার পথ খুলে দেবে।”

আন্তর্জাতিক পরিসরে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক উত্তেজনা

২০১৮ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক চুক্তি থেকে একতরফাভাবে সরে আসার পর থেকে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক ক্রমেই জটিলতর হয়েছে। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরানের অর্থনীতি ধ্বংসের মুখে পড়েছে, তাতে উত্তেজনা আরও বাড়িয়েছে।

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সাম্প্রতিক সংঘর্ষ বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন ধাক্কা দিয়েছে। বিশেষত ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা লক্ষ্য করে বিমান হামলা ও পাল্টা আক্রমণের ঘটনা আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচিত হয়েছে। যুদ্ধবিরতির কোনও চুক্তি না হওয়ার পেছনে এই কঠিন অবস্থানই সবচেয়ে বড় কারণ বলে মনে করছেন কূটনীতিকরা।

যুদ্ধবিরতির জটিলতা ও ভবিষ্যত

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরান যেহেতু যুদ্ধবিরতির কথা অস্বীকার করেছে, তাতে যুদ্ধের সম্ভাবনা এখনো কমেনি। তবে, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আলোচনার পুনরায় সূচনাকে শান্তির সূচক হিসেবে দেখা হচ্ছে। এই আলোচনায় সাফল্য পেলে মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা বাড়বে।

বিশ্বের অনেক দেশ এই সংঘাতকে খুব সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের প্রতিবেশী দেশগুলো এই পরিস্থিতি থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করছে। ইরান ও ইসরায়েলের সংঘর্ষের ফলে তেল মার্কেটেও অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে, যার প্রভাব বিশ্ব অর্থনীতিতেও পড়েছে।

সার্বিক পরিস্থিতি ও প্রতিবেদন

ইরানের সাবেক বিচারকের বক্তব্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে পরিস্থিতি বুঝতে সাহায্য করছে। যুদ্ধবিরতিতে ইরান জড়িত নয়, বরং শত্রু পক্ষ যুদ্ধবিরতির জন্য জোরাজুরি করেছে—এমন তথ্যই যুদ্ধের প্রকৃত রূপরেখা ফুটিয়ে তুলেছে।

এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্টের আলোচনার প্রস্তাব দুই দেশের মধ্যে নতুন কূটনৈতিক সম্পর্কের সুর গড়ে তুলতে পারে। কিন্তু ইরানের অবস্থান কঠিন হওয়ায় আলোচনার ফলাফল কেমন হবে, তা এখনও অনিশ্চিত।

ইরান যুদ্ধবিরতির জন্য কখনোই সম্মত হয়নি, বরং শত্রুপক্ষই ভিক্ষা করেছে বলে সাবেক বিচারকের স্পষ্ট বক্তব্য ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের পরবর্তী পরিণতি নিয়ে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশ্ব সম্প্রদায় এখন অপেক্ষায় যে, মার্কিন-ইরান আলোচনার মাধ্যমে কীভাবে এই সংকট সমাধান হবে এবং মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তি আসবে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button