বিশ্ব

লেবাননে ফের ইসরাইলের বিমান হামলা

যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে দক্ষিণ লেবাননের একাধিক এলাকায় ইসরাইলি বিমান হামলা। নিহত এক নারী, আহত বহু বেসামরিক। আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ বাড়ছে।

ঘটনাস্থলে ফের আগুনঝরা হামলা

দক্ষিণ লেবাননে ফের বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। শুক্রবার (২৭ জুন) স্থানীয় সময় ভোররাতে আলী আল তাহির বন, কাফারতাবনিত এবং নাবাতিহ আল ফাওকা অঞ্চলে একাধিক বিমান হানা চালানো হয়।

এই হামলায় একজন নারী নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন অন্তত ১১ জন বেসামরিক নাগরিক। আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।

ইসরাইলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তারা হিজবুল্লাহ-নিয়ন্ত্রিত একটি ভূগর্ভস্থ স্থাপনায় আঘাত হেনেছে, যা তারা প্রতিরক্ষা ও অগ্নিনির্বাপণ কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করত।

যুদ্ধবিরতির প্রতিশ্রুতি কোথায়?

২০২৪ সালের নভেম্বরে হিজবুল্লাহ ও ইসরাইলের মধ্যে এক যুদ্ধবিরতির চুক্তি কার্যকর হয়। তখন আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল—উভয় পক্ষ শান্তিপূর্ণ অবস্থানে থাকবে। তবে বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা।

হিজবুল্লাহ তাদের প্রতিশ্রুতি মেনে চললেও, ইসরাইল পক্ষ বারবার সেই চুক্তি লঙ্ঘন করে যাচ্ছে। শুধু জুন মাসেই এটি ছিল ইসরাইলের পঞ্চম বড় ধরণের আক্রমণ।

আগের দিনের হামলার ধারাবাহিকতা

এই হামলার ঠিক আগের দিন, বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) ইসরাইল ড্রোনের মাধ্যমে লেবাননের আরও দুটি স্থানে হামলা চালায়। সেই হামলায় দুইজন নিহত হয়েছিলেন। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মতে, এটি ছিল বড় পরিসরে হামলার প্রস্তুতি।

বিশেষজ্ঞদের ধারণা, লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলকে চাপের মধ্যে রাখতে ধারাবাহিকভাবে এসব হামলা চালানো হচ্ছে।

বেসামরিক প্রাণহানিতে উদ্বেগ

যুদ্ধবিরতি থাকা সত্ত্বেও বারবার বেসামরিকদের লক্ষ্য করে চালানো এসব হামলায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে লেবাননের সাধারণ মানুষ। এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন—

“হঠাৎ বিকট শব্দে ঘুম ভাঙে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই জানালার কাচ ভেঙে পড়ে। শিশুরা কাঁদছিল, রাস্তায় শুধু ধোঁয়া আর ধ্বংস।”

এই বেসামরিক প্রাণহানির ঘটনায় এখনো পর্যন্ত লেবাননের প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রী কোনও আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেননি, যা নিয়েও সমালোচনা চলছে।

গাজা উপত্যকায়ও ভয়াবহ হামলা অব্যাহত

লেবাননের পাশাপাশি গাজা উপত্যকায়ও ইসরাইলি হামলা অব্যাহত রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে নিহত হয়েছেন অন্তত ৭১ জন বেসামরিক নাগরিক। আহত হয়েছেন অগণিত মানুষ।

এই হত্যাযজ্ঞকে “গণহত্যার সমান” বলছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও বিশ্লেষণ

জাতিসংঘ এবং বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ইসরাইলের এই আচরণে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। যদিও পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোর পক্ষ থেকে এখনো জোরালো কোনো নিন্দা বা নিষেধাজ্ঞা আসেনি।

মধ্যপ্রাচ্য বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইসরাইল পরিকল্পিতভাবে একাধিক ফ্রন্টে উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলছে, যেন তারা আন্তর্জাতিক চাপ এড়িয়ে গাজায় অভিযান চালাতে পারে।

ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি কী হতে পারে?

বর্তমান পরিস্থিতি ইঙ্গিত দিচ্ছে, লেবানন ও ইসরাইলের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ সংঘাতের আশঙ্কা বাড়ছে। হিজবুল্লাহ এখনো প্রতিশোধে পা না দিলেও দীর্ঘমেয়াদে সংযম ধরে রাখা তাদের পক্ষেও কঠিন হয়ে পড়ছে।

বিশ্লেষকদের মতে—

“যদি এমন হামলা চলতে থাকে, তাহলে হিজবুল্লাহ প্রতিরোধে নামবে, এবং তখন পুরো অঞ্চলই নতুন এক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে।”

সারসংক্ষেপ

ইসরাইলের লাগাতার আক্রমণে লেবানন এখন এক অস্থির সময় পার করছে। যুদ্ধবিরতির কাগজে কলমে থাকলেও বাস্তব চিত্র বলছে, আগুন কখনোই নিভেনি—বরং সময়ের সঙ্গে তা আরও ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে দৃঢ় পদক্ষেপ না এলে, এই আগুন যে কোনও মুহূর্তে পুরো মধ্যপ্রাচ্যকে গ্রাস করতে পারে।

এম আর এম – ০০৭৭, Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button