প্যালেস্টাইন অথরিটিকে ৩০ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দিল সৌদি আরব
সৌদি আরব তাদের ঐতিহ্যবাহী মানবিক ও রাজনৈতিক সমর্থনের ধারাবাহিকতায় প্যালেস্টাইন অথরিটিকে ৩০ মিলিয়ন ডলার অর্থ সহায়তা দিয়েছে। এই সহায়তা শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও প্রশাসনিক খাতে ব্যয় করা হবে।
প্যালেস্টাইনের আর্থিক সংকট নিরসনে ৩০ মিলিয়ন ডলার আর্থিক সহায়তা দিয়েছে সৌদি আরব। জর্ডানের আম্মানে এক আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠানে প্যালেস্টাইনের অর্থমন্ত্রীর হাতে এই তহবিল তুলে দেন সৌদি দূতাবাসের কর্মকর্তা।
কোথায়, কীভাবে সহায়তা দেওয়া হলো
জর্ডানের রাজধানী আম্মানে সৌদি আরবের দূতাবাসে বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে প্যালেস্টাইন অথরিটিকে ৩০ মিলিয়ন ডলার সহায়তা হস্তান্তর করা হয়। সৌদি দূতাবাসের ভারপ্রাপ্ত চার্জ ডি অ্যাফেয়ার্স মোহাম্মদ মুনিস এই অর্থ প্যালেস্টাইনের অর্থমন্ত্রী ওমর আল-বিতারের হাতে তুলে দেন।
সৌদি আরবের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই তহবিল সরাসরি স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সরকারি কর্মচারীদের বেতন প্রদানে ব্যয় করা হবে। মুনিস বলেন, “প্যালেস্টাইনের জনগণের দুঃসময়েও সৌদি আরব সবসময় তাদের পাশে রয়েছে। এই সহায়তা আমাদের ঐতিহাসিক বন্ধুত্বের প্রতীক।”
সৌদি আরব-প্যালেস্টাইন সম্পর্কের ধারাবাহিকতা
সৌদি আরব দীর্ঘদিন ধরে প্যালেস্টিনিদের মানবিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সহায়তা দিয়ে আসছে। কিং সালমান হিউম্যানিটারিয়ান এইড অ্যান্ড রিলিফ সেন্টার (KSRelief)-এর তথ্যমতে, গত কয়েক বছরে প্যালেস্টিনিদের জন্য মোট ৫.৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি সহায়তা প্রদান করেছে সৌদি সরকার।
এই সহায়তা এসেছে হাসপাতাল নির্মাণ, ওষুধ সরবরাহ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা ও পুনর্গঠনের জন্য। এমনকি যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকাতেও সৌদি তহবিলের মাধ্যমে বহু পুনর্বাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে।
এই সহায়তার প্রভাব
এই ৩০ মিলিয়ন ডলারের তহবিল ব্যবহৃত হবে হাসপাতাল পরিচালনা, চিকিৎসা সরঞ্জাম ক্রয়, ওষুধ সংগ্রহ, স্কুল চালু রাখা, শিক্ষক ও চিকিৎসকদের বেতন দেওয়ার মতো মৌলিক খাতে।
প্যালেস্টাইনের অর্থমন্ত্রী আল-বিতার বলেন, “এই সহায়তা শুধু অর্থনৈতিক নয়, এটি আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রামে একটি নৈতিক সহায়তাও। সৌদি নেতৃত্বের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।”
ইসরায়েলের বর্তমান কঠোর নীতির কারণে প্যালেস্টাইন অথরিটি নানা দিক থেকে চাপে রয়েছে। এমন একটি সময়ে এই সহায়তা প্যালেস্টাইনের জন্য একটি বড় সহায় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
পরিসংখ্যান ও তুলনা
শুধুমাত্র ২০২৪ সালেই সৌদি আরব প্যালেস্টাইনকে ৭৫ মিলিয়ন ডলারের বেশি সরাসরি ও প্রকল্পভিত্তিক সহায়তা দিয়েছে।
২০২০–২০২৫ সালের মধ্যে মোট ২৮৯টি প্রকল্পে অর্থ সহায়তা করেছে সৌদি আরব।
এক জরিপে দেখা যায়, গাজা ও পশ্চিম তীরে ৪০% স্বাস্থ্যসেবা সরাসরি সৌদি অর্থায়নে পরিচালিত হয়।
সৌদি সহায়তার পেছনে কৌশলগত ও রাজনৈতিক বার্তা
সৌদি আরব এই সহায়তার মাধ্যমে কেবল মানবিক ভূমিকা নয়, বরং মুসলিম বিশ্বে তাদের নেতৃত্বের দাবিও পুনর্ব্যক্ত করছে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েলের সঙ্গে কিছু আরব দেশের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হওয়ায়, সৌদি আরব প্যালেস্টাইনের পাশে অবস্থান নিয়ে একটি ভিন্ন বার্তা দিচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সহায়তা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সৌদি আরবের ইমেজ পুনর্গঠনে সাহায্য করবে এবং প্যালেস্টাইন ইস্যুতে তাদের নীতিগত অবস্থানকে আরও জোরালো করবে।
ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে
প্যালেস্টাইন কর্তৃপক্ষের আর্থিক সংকট দীর্ঘমেয়াদী। সৌদি আরবের এই সহায়তা তাৎক্ষণিকভাবে কিছুটা স্বস্তি আনবে। তবে বিশ্লেষকদের মতে, আন্তর্জাতিক সমাজের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই পারে প্যালেস্টাইন সংকটের একটি স্থায়ী সমাধান আনতে।
পাঠকের জন্য প্রশ্ন: সৌদি আরবের মতো অন্যান্য মুসলিম দেশগুলো কি এখন আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখবে?
এম আর এম – ০০৭২, Signalbd.com
