গাজায় ইসরায়েলি হামলায় শুধু ২৪ ঘণ্টায় নিহত ৭২

গাজা উপত্যকার কেন্দ্রীয় শহর দেইর আল-বালাহসহ গাজার বিভিন্ন জায়গায় গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি বিমান ও মিসাইল হামলায় অন্তত ৭২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় হাসপাতাল সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, নিহতদের মধ্যে নারী, শিশু ও বৃদ্ধসহ সাধারণ মানুষও রয়েছেন। বিশেষভাবে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, ত্রাণ ও সাহায্য নিতে গিয়ে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে প্রাণ হারানো মানুষের সংখ্যাও দিনের পর দিন বাড়ছে।
গাজার ত্রাণ সংকট এবং নিহতদের সংখ্যা
গাজা সরকারের গণমাধ্যম কার্যালয়ের বরাতে জানা যায়, গত চার সপ্তাহে অন্তত ৫৪৯ জন ফিলিস্তিনি ত্রাণ নিতে গিয়ে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন। ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্র ও আশপাশে সংঘটিত সংঘর্ষে আরও প্রায় ৪ হাজার ৬৬ জন আহত হয়েছেন। এই পরিস্থিতি গাজার মানবিক সংকটকে আরও জটিলতর করছে।
হামলার পেছনের প্রেক্ষাপট: ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামলা থেকে আজ পর্যন্ত
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর স্বাধীনতাকামী ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাস ইসরায়েলের ওপর ব্যাপক হামলা চালায়। সেই হামলায় ইসরায়েলের ১ হাজার ১৩৯ জন নিহত হয়। সেই সময়ের পর ইসরায়েল ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে গাজায়। ওই হামলায় ২০০-এর বেশি মানুষকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়। এই ঘটনার পর থেকে গাজার ওপর ইসরায়েলের বিমান হামলা ও স্থল অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ওই সময় থেকে এখন পর্যন্ত গাজায় ইসরায়েলের হামলায় মোট নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে অন্তত ৫৬ হাজার ২৫৯ জনে, আহত হয়েছেন প্রায় ১ লাখ ৩২ হাজার ৪৫৮ জন। নিহত ও আহতের মধ্যে নিরীহ নারী, শিশু এবং বয়স্কদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ও প্রতিবেদন
গাজার মানবাধিকার সংগঠনগুলি নিয়মিত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবহিত করছে, যে গাজার বেসামরিক মানুষের ওপর এই হামলা এক দিক থেকে মানবাধিকার লঙ্ঘন। বিশেষ করে ত্রাণ কর্মীদের লক্ষ্য করে চলা এই হামলা গাজার মানুষের জীবনমানের ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলছে।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ অন্যান্য সংস্থা এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে ইসরায়েলের প্রতি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছে।
গাজার মানুষের বর্তমান জীবনযাত্রা ও সংকট
গাজার বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরেই অবরোধের কারণে জ্বরমুক্ত পানি, বিদ্যুৎ, চিকিৎসা ও খাদ্যের সংকটে পড়ে আছে। সাম্প্রতিক বিমান হামলা ও গোলাবর্ষণের ফলে চিকিৎসা অবকাঠামোও ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হাসপাতালে জায়গা সংকট, ওষুধের অভাব ও চিকিৎসক সংকট দেখা দিয়েছে। চিকিৎসা ও মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।
তবে ত্রাণ সংস্থা ও মানবিক সংগঠনগুলো সীমিত পরিমাণে হলেও জরুরি খাদ্য, ওষুধ এবং আশ্রয় প্রদান করছে। এসব ত্রাণ কর্মীদের নিয়েও হামলার ভয়াবহ তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।
ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের চলমান সংঘর্ষ: শান্তি প্রতিষ্ঠার আহ্বান
বিশ্ব সম্প্রদায় বার বার ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন উভয় পক্ষের মধ্যে শান্তি আলোচনা শুরু করার আহ্বান জানিয়ে আসছে। গাজার বেসামরিক মানুষের জীবন বাঁচানো এবং মানবিক সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্রয়োজন বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
গাজায় এ দুঃসহ অবস্থার অবসান ছাড়া এলাকার স্থায়ী শান্তি ও উন্নয়ন সম্ভব নয়। একদিকে রাজনৈতিক সমস্যার জটিলতা, অন্যদিকে মানবিক বিপর্যয় যেন এক কঠিন বাস্তবতায় রূপ নিচ্ছে।