ইরানে হামলা ঐতিহাসিকভাবে সফল: যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী

পেন্টাগনে সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ বলেন, ইরানে পারমাণবিক স্থাপনায় হামলায় ‘অসাধারণ সাফল্য’ পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তার মতে, এই অর্জন আমেরিকানদের উদযাপন করা উচিত।
শনিবার ইরানের গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের পরিচালিত বিমান হামলাকে ‘ঐতিহাসিকভাবে সফল’ বলে অভিহিত করেছেন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ। তার মতে, হামলার পরিণতিতে ইরানের পরমাণু কর্মসূচিতে গুরুতর ক্ষতি হয়েছে, যা গোয়েন্দা তথ্য ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণে প্রমাণিত।
মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ বলেন, “এই হামলা ছিল এক ঐতিহাসিক সাফল্য, যা আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা জোরদার করেছে। আমেরিকান হিসেবে আমাদের এ সাফল্য উদযাপন করা উচিত।”
তিনি আরও বলেন, “পূর্ববর্তী প্রেসিডেন্টরা যেটি করতে চেয়েছিলেন, তা এবার বাস্তবায়িত হয়েছে। এটি ট্রাম্প প্রশাসনের সাহসী সিদ্ধান্তেরই ফল।”
কেন হামলা চালানো হলো?
গত কয়েক মাস ধরে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উদ্বেগ তৈরি হয়েছিল। জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (IAEA) ধারাবাহিকভাবে ইরানের গোপন ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম সম্পর্কে প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছিল।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইরান যদি নির্ধারিত সীমার বাইরে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে থাকে, তাহলে এটি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সক্ষমতা অর্জন করতে পারে। এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত ছিল — ‘সক্ষমতা ধ্বংস করো, ঝুঁকি নয়।’
হামলার প্রভাব ও মূল্যায়ন
হামলার পর পরই বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক সংস্থা একে উল্লেখযোগ্য সাফল্য হিসেবে চিহ্নিত করে।
সিআইএ’র মতে, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো “গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে”।
IAEA-এর প্রধানের মতে, হামলার ফলে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিতে ‘বহুল ক্ষতি’ হয়েছে এবং তা কয়েক মাস পিছিয়ে গেছে।
তবে হামলার একদিন পরেই কিছু সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়েছিল, ক্ষতির মাত্রা অতটা গুরুতর নয়। এ প্রসঙ্গে প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, “প্রাথমিক মূল্যায়নে যেসব রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে, তা ছিল তথ্য-নির্ভর নয়। আমরা তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের পর নিশ্চিত হয়েছি — এই অভিযান অত্যন্ত সফল।”
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া ও সমালোচনা
হামলার বিষয়ে ইরান ইতিমধ্যেই কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেছেন, “ইরান কখনোই আত্মসমর্পণ করবে না এবং আমাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্রস্তুত আছে।”
ইরান এই হামলাকে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের অংশ বলেও আখ্যা দিয়েছে এবং জাতিসংঘে প্রতিবাদ জানানোর উদ্যোগ নিয়েছে।
বিশ্বের কিছু রাষ্ট্র — বিশেষ করে রাশিয়া ও চীন — এই হামলার নিন্দা করেছে এবং এটিকে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা বাড়াবে বলে মন্তব্য করেছে।
আঞ্চলিক প্রভাব
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই হামলা শুধু ইরানের জন্য নয়, গোটা মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক পরিবেশে বড় প্রভাব ফেলবে। ইসরায়েল এই হামলাকে স্বাগত জানিয়েছে এবং ইঙ্গিত দিয়েছে যে, এই ধরনের পদক্ষেপ পারমাণবিক হুমকি নিরসনে কার্যকর হতে পারে।
তবে অনেক আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্ত নতুন করে যুদ্ধ পরিস্থিতি উসকে দিতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদে তা বিশ্বশান্তির জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।
সারসংক্ষেপঃ
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক হামলা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন উত্তেজনার জন্ম দিয়েছে। একপক্ষে রয়েছে সফল অভিযানের দাবি, অন্যদিকে রয়েছে বিরোধী রাষ্ট্র ও সংস্থার উদ্বেগ।
বিশ্লেষকদের মতে, “এই সাফল্য কতটা স্থায়ী প্রভাব ফেলবে, তা নির্ভর করছে ইরানের পরবর্তী পদক্ষেপ ও আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক অবস্থানগুলোর ওপর।”
এম আর এম – ০০৬২, Signalbd.com