পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ‘বাজেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে’: ইরান

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ‘বাজেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত’ হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এসমাইল বাঘাঈ। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে একের পর এক হামলার পর এই ক্ষতির কথা তিনি বুধবার (২৫ জুন) এক সংবাদ সম্মেলনে জানান।
ইরানের পক্ষ থেকে ক্ষতির স্বীকারোক্তি
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এসমাইল বাঘাঈ বলেন, “আমাদের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ভয়াবহ বা বাজেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এটি স্পষ্ট কারণ এগুলোর ওপর একাধিকবার হামলা হয়েছে।” তিনি জানান, এই বিষয়টি একটি প্রযুক্তিগত বিষয় হওয়ায় তিনি বিস্তারিত বলতে পারছেন না, তবে ইরানের পরমাণু শক্তি সংস্থা এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গভীরভাবে অনুসন্ধান করছে।
হামলা ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
গত কয়েক মাসে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র ইরানের বিভিন্ন পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালিয়েছে। বিশেষ করে গত ২২ জুন মার্কিন বাহিনী ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনে বিমান হামলা চালায়, যা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির জন্য বড় ক্ষতি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক সাক্ষাৎকারে দাবি করেন, এই হামলায় ইরানের ফরদো পারমাণবিক স্থাপনাটি ‘সম্পূর্ণ ধ্বংস’ হয়েছে। তবে পরবর্তীতে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার প্রাথমিক রিপোর্টে বলা হয়েছে, এই হামলা ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতাকে সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করতে পারেনি, বরং কয়েক মাসের জন্য কর্মসূচি পিছিয়ে দিয়েছে।
আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা এই হামলা ও এর পরবর্তী ক্ষতির ঘটনাকে ইরান-ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে জোরালো উত্তেজনার অংশ হিসেবে দেখছেন, যা মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা পরিস্থিতি জটিলতর করছে।
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ইতিহাস ও গুরুত্ব
ইরান দীর্ঘদিন থেকে পারমাণবিক শক্তি উন্নয়নের জন্য কাজ করে আসছে, যদিও পশ্চিমা দেশগুলো সন্দেহ করে আসছে যে ইরানের প্রকল্পগুলোর মূল লক্ষ্য পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির দিকে যাচ্ছে। তেহরান সরকার সবসময় এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শুধুমাত্র শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে।
পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ইরানের জাতীয় নিরাপত্তার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এই স্থাপনাগুলোতে বিভিন্ন গবেষণা, উর্বরতা বৃদ্ধি, এবং শক্তি উৎপাদন বিষয়ক কাজ পরিচালিত হয়। তাই এই স্থাপনাগুলোর ক্ষতি ইরানের কৌশলগত ক্ষমতার ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।
হামলার পর ইরানের প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
ইরানের সরকার ইতিমধ্যেই এই হামলার বিরুদ্ধে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের এই হামলার প্রতি। তেহরান শক্তভাবে সতর্ক করেছে, পরবর্তী হামলার ক্ষেত্রে তারা কঠোর জবাব দেবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান হয়তো তার পারমাণবিক কর্মসূচির নিরাপত্তা আরও শক্তিশালী করার পরিকল্পনা করবে এবং হয়তো আন্তর্জাতিক স্তরে নিজেদের অবস্থান জোরদার করবে। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা কমানোর জন্য কূটনৈতিক উদ্যোগেরও সম্ভাবনা রয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনার নতুন পর্ব
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা এবং ক্ষতির খবর মধ্যপ্রাচ্যের জটিল নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করে তুলেছে। ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপকে অনেকেই আগ্রাসন হিসেবে দেখছেন, যা ইরানকে আরও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণে বাধ্য করবে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, বর্তমান পরিস্থিতি ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তা সম্পূর্ণ নির্মূল হয়নি, বরং ইরানকে তার পারমাণবিক কর্মসূচি আরও বিকাশের জন্য উস্কানি দিয়েছে। এই পরিস্থিতি নতুন ধরনের যুদ্ধের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে, যা পুরো অঞ্চলে স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলবে।
সামগ্রিক ভাবনা
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ‘বাজেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত’ হওয়ার খবর বিশ্বজুড়ে সতর্কতার সুর তোলে। এটি শুধু মধ্যপ্রাচ্যের জন্য নয়, গোটা বিশ্বের জন্য একটি উদ্বেগের বিষয়, কারণ পারমাণবিক শক্তি ও সন্ত্রাসবাদের মধ্যে যে সমীকরণ সৃষ্টি হতে পারে, তা অনেক বেশি বিপজ্জনক।
বিশ্লেষকদের মতে, আগামী কয়েক মাসে ইরান-যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল সম্পর্ক কেমন হবে তা নির্ভর করছে কূটনৈতিক ও সামরিক প্রতিক্রিয়ার ওপর। তবে একটাই স্পষ্ট যে, পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ।
এম আর এম – ০০৫৪, Signalbd.com