বিশ্ব

আগামী সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হবে যুক্তরাষ্ট্র-ইরান বৈঠক

সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা ও সামরিক সংঘাতের পর যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান আবারও কূটনৈতিক টেবিলে বসার পরিকল্পনা করেছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানিয়েছেন, চুক্তি হোক বা না হোক, আলোচনার দরজা খোলা রাখছেন তারা।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার মধ্যেই আসছে সপ্তাহে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের কথা জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আলোচনায় পরমাণু চুক্তির বিষয়টি কেন্দ্রে থাকবে বলে ইঙ্গিত মিলেছে, যদিও তা নিশ্চিত নয়।

বৈঠকের ঘোষণা ও অবস্থান

নেদারল্যান্ডসে অনুষ্ঠিত ন্যাটো সম্মেলনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, “আমরা আগামী সপ্তাহে ইরানের সঙ্গে আলোচনায় বসতে যাচ্ছি। হয়তো একটি নতুন চুক্তিও হতে পারে।”

তবে তিনি স্পষ্ট করে জানান, “এই চুক্তি না হলেও আমার কিছু যায় আসে না।” তার মতে, যুদ্ধ ও সংঘাতের পর ইরান এখন অনেকটাই পিছিয়ে গেছে এবং তাদের সঙ্গে আলোচনার জন্য খুব বেশি উত্তেজনা তিনি অনুভব করছেন না।

ট্রাম্প আরও বলেন, “ইরান এবং ইসরায়েল দুপক্ষই ক্লান্ত। যদিও সংঘাত এখন থেমে আছে, তবুও ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আবার উত্তপ্ত হতে পারে।”

সাম্প্রতিক উত্তেজনা

এই বৈঠকটি এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, যখন সম্প্রতি ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। ইসরায়েলের সামরিক হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।

এ সময় যুক্তরাষ্ট্র স্পষ্টভাবে ইসরায়েলের পাশে অবস্থান নেয় এবং এই অবস্থানের ফলে ১৫ জুন ওমানে নির্ধারিত যুক্তরাষ্ট্র-ইরান বৈঠক বাতিল করে তেহরান।

তেহরানের অভিযোগ ছিল, ইসরায়েলের হামলায় আমেরিকার নীরব সমর্থন রয়েছে, যা তাদের বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। তাই তারা আলোচনাকে ‘অর্থহীন’ বলেও উল্লেখ করেছিল।

আলোচনা ফলপ্রসূ হবে কি?

যদিও ট্রাম্প আলোচনাকে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছেন না, বিশ্লেষকরা মনে করছেন এই বৈঠক মধ্যপ্রাচ্যের কূটনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ মোড় আনতে পারে।

মার্কিন বিশেষ প্রতিনিধি স্টিভ উইটকফ বলেন, “আমেরিকা ও ইরানের মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ের কিছু আলোচনা ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে।”

বিশ্লেষকদের মতে, পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে অনেক কঠোর হয়ে উঠেছে এবং তারা চাইছে, ইরান যেন পুনরায় চুক্তির আলোচনায় ফিরে আসে তবে আরও কঠিন শর্তে।

চুক্তি না হলে কী ঘটতে পারে?

বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি আলোচনা ব্যর্থ হয়, তবে মধ্যপ্রাচ্যে আবারও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়তে পারে।

ইরান যদি নতুন করে পারমাণবিক কর্মসূচি শুরু করে এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণের বাইরে কাজ চালায়, তাহলে ইসরায়েল আবারও সামরিক প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে, যা পুরো অঞ্চলে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে।

এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে গঠিত জোট রাষ্ট্রগুলোও ইরানের বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে।

বিশ্লেষণ ও ভবিষ্যদ্বাণী

রাজনৈতিক বিশ্লেষক মোহাম্মদ আব্বাস জানান, “যুক্তরাষ্ট্র-ইরান বৈঠক যদি সফল হয়, তবে এটি শুধু পরমাণু চুক্তি নয়, বরং সামগ্রিকভাবে মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতিকে শান্ত করতে ভূমিকা রাখবে।”

তবে একাধিক বিশ্লেষকের মতে, উভয় দেশের মধ্যে অবিশ্বাস এখনও বড় বাধা। ইরান বিশ্বাস করে না যে আমেরিকা তাদের সার্বভৌমত্বকে সম্মান করবে, এবং আমেরিকা চায় না যে ইরান আবার আগের মত পারমাণবিক শক্তি অর্জনের দিকে অগ্রসর হোক।

“আমরা ইরানের সঙ্গে আলোচনায় বসছি, তবে চুক্তি হোক বা না হোক, তা বড় কথা নয়”—মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প

সারসংক্ষেপঃ  

যুক্তরাষ্ট্র-ইরান বৈঠক কেবল দুই দেশের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক আলোচনা নয়, এটি মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা, সামরিক উত্তেজনা এবং আন্তর্জাতিক কূটনীতির দিক থেকেও এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হতে চলেছে।

তবে প্রশ্ন রয়ে যায়, এই আলোচনায় বাস্তব কোনও চুক্তি হবে, না কি আবারও কথাবার্তার মাঝেই হারিয়ে যাবে শান্তির আশা?

এম আর এম – ০০৪৮, Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button