বিশ্বে স্থিতিশীলতা আনতে যুক্তরাষ্ট্রকেই নেতৃত্ব দিতে হবে: ন্যাটো মহাসচিবের হুশিয়ারি

বিশ্ব রাজনীতির অস্থিরতা মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন ন্যাটোর মহাসচিব মার্ক রুট। তার মতে, সামরিক ও অর্থনৈতিক শক্তির বিচারে কেবল যুক্তরাষ্ট্রই পারে বিশ্ব শান্তির ভার বহন করতে।
ভূরাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব জরুরি: ন্যাটো প্রধান
বিশ্বে চলমান অস্থিরতা, সংঘাত ও যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকেই দায়িত্ব নিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন উত্তর আটলান্টিক চুক্তি সংস্থা (ন্যাটো)-এর মহাসচিব মার্ক রুট। নেদারল্যান্ডসের রাজধানী হেগ-এ অনুষ্ঠিত সামরিক জোটের উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে তিনি বলেন, “শান্তি এবং স্থিতিশীলতা নিশ্চিতে যখনই প্রয়োজন, তখনই যুক্তরাষ্ট্রকে নেতৃত্ব দিতে হবে।”
যুক্তরাষ্ট্রের শক্তি ও দায়িত্ব
মার্ক রুট বলেন, “বিশ্বের প্রায় ২৫ শতাংশ অর্থনৈতিক অংশীদার যুক্তরাষ্ট্র। শুধু অর্থনৈতিক নয়, সামরিক দিক থেকেও এটি সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্র। বিশ্ব যখন সংঘাত আর অনিশ্চয়তার মুখোমুখি, তখন যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপই নির্ধারণ করে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক রূপরেখা।”
তিনি আরও জানান, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য, ইউক্রেন এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে সাম্প্রতিক পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের দৃঢ় অবস্থান ছাড়া কোনও দীর্ঘস্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়।
শান্তি প্রচেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্রের ঐতিহাসিক ভূমিকা
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র বৈশ্বিক রাজনীতিতে স্থিতিশীলতার প্রধান কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে আসছে। কোরিয়ান যুদ্ধ, ভিয়েতনাম সংকট, আফগানিস্তান ও ইরাক যুদ্ধসহ নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে বিশ্ব রাজনীতিতে তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রমাণ করে যে, বড় সিদ্ধান্তে তাদের ভূমিকা অপরিহার্য।
ন্যাটো গঠনের মূল উদ্দেশ্যই ছিল পশ্চিমা বিশ্বে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, যার মূল নেতৃত্ব শুরু থেকেই যুক্তরাষ্ট্রই দিয়ে এসেছে।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা কেন জরুরি?
ন্যাটো মহাসচিবের মতে, বর্তমান বিশ্বে যুদ্ধ পরিস্থিতি, জলবায়ু সংকট, অর্থনৈতিক টানাপোড়েন ও উদ্বাস্তু সমস্যা একত্রে একটি বৃহৎ সংকট সৃষ্টি করেছে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এখনো সমাপ্ত হয়নি, মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের উত্তেজনা নতুন করে আশঙ্কা সৃষ্টি করছে, এবং এশিয়ায় চীন-তাইওয়ান ইস্যু ঘিরে বাড়ছে সামরিক প্রস্তুতি।
এই সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একটি নির্ভরযোগ্য ও প্রভাবশালী নেতৃত্ব ছাড়া কোনও কার্যকর সমাধান আশা করা যায় না।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও বিশ্লেষণ
বৈঠকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র সবসময় শান্তির পক্ষে। তবে আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা ও বিশ্ব স্থিতিশীলতা রক্ষা করাই আমাদের অগ্রাধিকার।”
বিশ্লেষকদের মতে, মার্কিন প্রশাসনের এই বক্তব্য আগামী দিনে ন্যাটোসহ অন্যান্য জোটের কার্যক্রমে সরাসরি প্রভাব ফেলবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান, ভারতসহ বিভিন্ন রাষ্ট্র ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারিত্ব বাড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টিভঙ্গি
আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষক ড. তানভীর আহমেদ বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব ছাড়া এখনকার বিশ্ব সংকট সামাল দেওয়া কঠিন। কিন্তু সেই নেতৃত্বকে অবশ্যই দায়িত্বশীল, কৌশলগত ও মানবিক হতে হবে।”
তার মতে, কেবল সামরিক শক্তি নয়, কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করেই যুক্তরাষ্ট্রকে শান্তি রক্ষা করতে হবে।
“বিশ্বের সবচেয়ে বড় সামরিক শক্তি ও অর্থনীতির অধিকারী রাষ্ট্র হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রকেই শান্তির রূপরেখা তৈরি করতে হবে”—মার্ক রুট, মহাসচিব, ন্যাটো।
উপসংহার
ন্যাটো সম্মেলনে মার্ক রুটের এই মন্তব্য আন্তর্জাতিক মহলে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। একদিকে বিশ্বজুড়ে চলমান সংঘাত ও উত্তেজনা, অন্যদিকে একটি রাষ্ট্রের ওপর এমন বিশাল দায়িত্ব—সব মিলিয়ে সামনে বিশ্ব রাজনীতির পট পরিবর্তনের সম্ভাবনা প্রবল। এখন দেখার বিষয়, যুক্তরাষ্ট্র এই আহ্বানে কীভাবে সাড়া দেয় এবং কতটা কার্যকরভাবে বিশ্বে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার পথে অগ্রসর হয়।
এম আর এম – ০০৪৭, Signalbd.com