বিশ্ব

পরমাণু অস্ত্রবাহী ১২টি যুদ্ধবিমান কিনছে যুক্তরাজ্য: এক প্রজন্মের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক শক্তিবৃদ্ধি

যুক্তরাজ্য পারমাণবিক বোমা বহনে সক্ষম ১২টি এফ-৩৫এ যুদ্ধবিমান কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সিদ্ধান্তকে প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলছেন “জাতীয় নিরাপত্তায় যুগান্তকারী বিনিয়োগ”। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি যুক্তরাজ্যের পারমাণবিক কৌশলে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

ন্যাটো সম্মেলনে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ঘোষণা দিয়েছেন, তার সরকার পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ১২টি এফ-৩৫এ যুদ্ধবিমান কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটি যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা কাঠামোয় এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

বিস্তারিত

যুক্তরাজ্যের ডাউনিং স্ট্রিট এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এই ১২টি এফ-৩৫এ যুদ্ধবিমান যুক্তরাষ্ট্রের লকহিড মার্টিন কোম্পানি নির্মিত। যুদ্ধবিমানগুলো ন্যাটোর ‘দ্বৈত ক্ষমতা সম্পন্ন’ পারমাণবিক বাহিনীর অংশ হিসেবে ব্যবহার করা হবে।

প্রধানমন্ত্রী স্টারমার বলেন, “এই অনিশ্চয়তার সময়ে আমরা শান্তিকে আর নিশ্চিত ধরে নিতে পারি না। আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই এই পদক্ষেপ।”

নতুন যুদ্ধবিমানগুলো পারমাণবিক বোমা ছাড়াও প্রচলিত অস্ত্র বহনে সক্ষম। ফলে এগুলোর বহুমুখী ব্যবহারিকতা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ইতালি, নেদারল্যান্ডসসহ কয়েকটি ন্যাটো দেশ ইতিমধ্যেই এই মডেলের বিমান ইউরোপে মোতায়েন করেছে।

কেন এই সিদ্ধান্ত?

বর্তমানে যুক্তরাজ্যের একমাত্র পারমাণবিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ট্রাইডেন্ট সাবমেরিন-নিক্ষিপ্ত ক্ষেপণাস্ত্র নির্ভর। তবে সাম্প্রতিক এক ব্যর্থ পরীক্ষার পর এই ব্যবস্থার ওপর নির্ভরতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়ার আগ্রাসী ভূমিকায় ইউরোপজুড়ে নিরাপত্তা উদ্বেগ বাড়ছে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সুরক্ষা ভূমিকা কিছুটা সীমিত হওয়ার ইঙ্গিত মিলেছে, যার পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাজ্য নিজস্ব সামরিক সক্ষমতা জোরদার করছে।

এই সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়া 

ন্যাটোর মহাসচিব মার্ক রুট যুক্তরাজ্যের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “এটি ন্যাটোর প্রতি যুক্তরাজ্যের দৃঢ় প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন।”

যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই সিদ্ধান্ত দেশটিকে আবারও কৌশলগতভাবে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের সক্ষমতা এনে দেবে, যা ১৯৯৮ সালের পর প্রথমবার।

অন্যদিকে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বিমান ক্রয় শুধুই প্রতিরক্ষা জোরদার নয়, বরং এটি একটি রাজনৈতিক বার্তাও – ইউরোপে সামরিক নেতৃত্ব ধরে রাখার।

পরিসংখ্যান ও তুলনা

▶️ যুক্তরাজ্যের এই বিমান ক্রয়ের ফলে প্রায় ২০ হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

▶️ লকহিড মার্টিনের নির্মিত প্রতিটি এফ-৩৫এ যুদ্ধবিমানের দাম গড়ে ৮০-৯০ মিলিয়ন ডলার

▶️ যুক্তরাজ্য এই প্রকল্পের মাধ্যমে বিমান তৈরির আন্তর্জাতিক চেইনে অংশ নিচ্ছে – এই জেটের ১৫% যন্ত্রাংশ ব্রিটেনে তৈরি হবে।

বিশেষজ্ঞ বিশ্লেষণ

রাজনৈতিক বিশ্লেষক রজার হ্যান্ডারসন মনে করেন, “এই সিদ্ধান্ত কেবল সামরিক শক্তির প্রশ্ন নয়, এটি যুক্তরাজ্যের বৈশ্বিক অবস্থান পুনর্গঠনের একটি কৌশল।”

আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ফিলিপা ব্রাউন বলেন, “যেহেতু রাশিয়া ও চীন পারমাণবিক অস্ত্র উন্নয়নে আগ্রহী, যুক্তরাজ্যও তাদের প্রতিরোধ গড়তে চায়।”

“এই যুদ্ধবিমানগুলো আমাদের প্রতিরক্ষা সক্ষমতার একটি নতুন অধ্যায় শুরু করবে”—প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার

সারসংক্ষেপঃ  

যুক্তরাজ্যের এই পদক্ষেপ শুধু সামরিক শক্তিবৃদ্ধি নয়, বরং বৈশ্বিক ভূরাজনীতির প্রতিক্রিয়ায় গৃহীত একটি কৌশলগত সিদ্ধান্ত।

এখন প্রশ্ন হলো, এই পদক্ষেপ কি ইউরোপে অস্ত্র প্রতিযোগিতা আরও বাড়াবে? নাকি এটি সত্যিই একটি কার্যকর প্রতিরোধ গড়বে?

এম আর এম – ০০৪৫, Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button