বিশ্ব

ইরানের প্রেসিডেন্টের আন্তরিক দুঃখ কাতারের আমিরের কাছে

ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান সম্প্রতি কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলছেন। এই আলাপচারিতায় তিনি কাতারে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে চালানো ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জন্য গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছেন। আমিরের দপ্তর থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, হামলার প্রকৃত লক্ষ্যবস্তু কাতার নয়, বরং কাতারের ভূখণ্ডে অবস্থিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আল উদেইদ বিমানঘাঁটি ছিল।

পেজেশকিয়ান টেলিফোনালাপে বিশেষভাবে উল্লেখ করেন, এই হামলা কাতারের জনগণের প্রতি কোনো হুমকি নয়। তিনি আশা প্রকাশ করেন, প্রতিবেশী এবং মুসলিম দেশ হিসেবে কাতারের সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক সবসময় বন্ধুত্বপূর্ণ ও সম্মানজনক থাকবে, যা সার্বভৌমত্ব ও সুপ্রতিবেশী আচরণের নীতির ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠবে।

কাতারে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে হামলার পটভূমি

গত সোমবার কাতারের ভূখণ্ডে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সামরিক ঘাঁটি আল উদেইদে একপর্যায়ে ১৯টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়। কাতারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা যায়, তাদের প্রতিরক্ষা বাহিনী ১৮টি ক্ষেপণাস্ত্র নিষ্ক্রিয় করতে সক্ষম হয়। যদিও এক ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে বলে প্রাথমিক তথ্য পাওয়া গেছে।

এই হামলা ইরানের অভিজাত ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড কোর (আইআরজিসি) কর্তৃক পরিচালিত, যা যুক্তরাষ্ট্রের রোববারের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার ‘জবাবে’ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। মার্কিন বাহিনী ওই হামলাকে ‘সুস্পষ্ট সামরিক আগ্রাসন’ হিসেবে বর্ণনা করেছিল।

মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা বৃদ্ধি ও কাতার-ইরান সম্পর্কের ভবিষ্যৎ

মধ্যপ্রাচ্যে ইরান, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের মধ্যকার উত্তেজনা দিন দিন বাড়ছে। পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা এবং প্রতিহামলা যুদ্ধ পরিস্থিতি আরও জটিল করেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই অঞ্চলের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও অবনতি হতে পারে যদি শান্তিপূর্ণ আলোচনার পথ না নেওয়া হয়।

তবে ইরানের প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান কাতারের সঙ্গে সম্পর্কের গুরুত্ব আবারও জোর দিয়ে বলেন এবং উভয় দেশের মধ্যে সহযোগিতার পথ অব্যাহত রাখার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।

আল উদেইদ বিমানঘাঁটির গুরুত্ব ও ভূমিকা

আল উদেইদ বিমানঘাঁটি মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বড় মার্কিন সামরিক ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। এখানে বিভিন্ন যুদ্ধ বিমানের চালনা, গোয়েন্দা কার্যক্রম এবং সামরিক সহযোগিতা পরিচালিত হয়। কাতার এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কৌশলগত এই ঘাঁটি মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ইরানের হামলার সময় কাতারের রাজধানী দোহা সহ বিভিন্ন অঞ্চলে অগ্নিশিখা দেখা যায় এবং বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। তবে কাতার কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে, হামলার আগেই মার্কিন সেনারা ঘাঁটিটি খালি করে নেয়।

বিশ্লেষক মতামত ও ভবিষ্যৎ পর্যালোচনা

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ইরানের এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা মধ্যপ্রাচ্যে শক্তির ভারসাম্যে একটি নতুন অধ্যায় সূচনা করতে পারে। যদিও ইরান তার উদ্দেশ্য কাতার নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রকে লক্ষ্য করেছে, তবুও এ ঘটনায় কাতার-মার্কিন সম্পর্কের উপর প্রভাব পড়তে পারে।

মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য কাতার ও ইরানের মধ্যকার সম্পর্ক সুদৃঢ় রাখা অত্যন্ত জরুরি। দুই দেশের মধ্যে সাম্প্রতিক টেলিফোন আলাপ ও পেজেশকিয়ানের দুঃখ প্রকাশ এই ইঙ্গিত দেয় যে, কূটনৈতিক মাধ্যমে সমস্যার সমাধান সম্ভব।

মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা, বিশেষ করে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার সংঘাত বিশ্বজুড়ে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কাতারের ভূখণ্ডে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঘটনা একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে এই সংঘাতকে। ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের কাতারের আমিরের কাছে দুঃখ প্রকাশ এবং সুসম্পর্ক বজায় রাখার প্রত্যয় একটি ইতিবাচক সংকেত।

আসন্ন সময়গুলোতে কাতার ও ইরানের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্ক এবং মধ্যপ্রাচ্যের সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি কেমন হবে, সেটাই বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। শান্তি প্রতিষ্ঠায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও প্রতিবেশী দেশগুলোর সক্রিয় ভূমিকা অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button