বিশ্ব

গাজায় ইসরায়েলের ৭ সেনা নিহত: গাজা যুদ্ধে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি

গাজা উপত্যকায় চলমান সংঘর্ষে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সাত সদস্য প্রাণ হারিয়েছে। দেশটির সেনাবাহিনী আজ বুধবার এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানিয়েছে। দক্ষিণ গাজার উত্তপ্ত জায়গায় লড়াইয়ের সময় একই ব্যাটালিয়নের পাঁচ সেনা ও একজন প্লাটুন কমান্ডার নিহত হয়েছে। আরও একজন সেনার মৃত্যু হয়েছে, তবে পরিবারের অনুরোধে তাঁর নাম প্রকাশ করা হয়নি।

গাজায় কি ঘটছে?

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকায় হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে বিরাট সশস্ত্র সংঘর্ষ চলছে। ২০২৩ সালের ওইদিন হামাস ইসরায়েলে বিস্ফোরক হামলা চালায়, যা ইতিহাসের সবচেয়ে রক্তাক্ত হামলা হিসেবে বিবেচিত। সেই হামলায় ইসরায়েলের ১,২১৯ জন নিহত হয়েছে, যার অধিকাংশই সাধারণ নাগরিক। একইসঙ্গে, গাজায় বন্দী রাখা হয়েছে ২৫১ জনকে, যার মধ্যে ৪৯ জন এখনো বন্দী এবং ২৭ জনের মৃত্যুর খবর ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দিয়েছে।

গাজার মানুষ ও মানবাধিকার সংকট

ইসরায়েলের জবাবে গাজার ওপর ব্যাপক সেনা অভিযান চালানো হয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই সংঘর্ষে ৫৬,৭৭৭ এরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যারা অধিকাংশই নারী ও শিশু। জাতিসংঘ এই তথ্যকে বিশ্বাসযোগ্য বলে বিবেচনা করে। পাশাপাশি, মানবাধিকার সংস্থাগুলো জানাচ্ছে, চলতি বছরের মার্চ থেকে মে পর্যন্ত গাজায় কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ ও সরবরাহ সীমাবদ্ধতার কারণে ২০ লাখের বেশি গাজার বাসিন্দা দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি।

সাম্প্রতিক অবস্থা ও ভবিষ্যৎ ঝুঁকি

গতকাল ইরানের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করায় ইসরায়েলি সেনাপ্রধান ইয়াল জমির বলেছেন, এবার তারা গাজার প্রতি নতুন করে মনোযোগ দিবে। এর ফলে আগামী দিনগুলোতে গাজার অবস্থা আরও সংকটজনক হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন।

গাজা সংকট: ইতিহাস ও বর্তমান বাস্তবতা

গাজা উপত্যকা প্রায় ৩৬০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। এটি ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠীর অন্যতম প্রধান বসতি। দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে জমি ও রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সংঘাত চলে আসছে। ২০০৭ সালের পর হামাস গাজার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে এই অঞ্চলে স্থায়ী শান্তি বিধির আশঙ্কা বেড়েছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

গাজায় সংঘর্ষ বৃদ্ধির কারণে আন্তর্জাতিক মহল উদ্বিগ্ন। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও বিভিন্ন দেশ পরিস্থিতি শিথিল করার আহ্বান জানিয়েছে। মানবাধিকার সংস্থা গুলো বারবার যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলে নিরপরাধ মানুষদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা বলেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও গাজার স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার সংকটের বিষয়ে সতর্ক করেছে।

গাজার অর্থনীতি ও জীবনযাত্রা

গাজার অর্থনীতি যুদ্ধ ও অবরোধের কারণে একেবারে ভেঙে পড়েছে। সাধারণ মানুষের জীবিকা নির্বাহ কঠিন হয়ে পড়েছে। বিদ্যুৎ, পানি, ও খাদ্যের চরম ঘাটতির মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছেন গাজার ২০ লাখের বেশি মানুষ। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা এই সংকটে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত।

গাজায় সংঘর্ষের পরবর্তী চিত্র ও বিশ্ব রাজনীতি

গাজায় চলমান সংঘর্ষ শুধু মধ্যপ্রাচ্যের নয়, গোটা বিশ্বের জন্য উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, এই সংঘর্ষের প্রভাবে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক পরিবেশ তীব্রভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে। ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধে সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে সঙ্গে বৃহত্তর আঞ্চলিক শক্তিরাও জড়িয়ে পড়ছে, যেমন ইরান ও মিসর।

বিশ্বজুড়ে শান্তিপ্রিয় জনগণ গাজার শিশু, নারী ও বয়স্কদের দুর্দশার কথা শুনে দুঃখ প্রকাশ করেছে এবং যুদ্ধ বিরতির আহ্বান জানাচ্ছে। তবে বাস্তবতা হলো, যতক্ষণ না রাজনৈতিক সমাধান হয়, গাজায় নিরবিচ্ছিন্ন সহিংসতা চলতেই থাকবে।

সারমর্ম

  • ৭ জন ইসরায়েলি সেনা গাজায় নিহত হয়েছে সম্প্রতি সংঘটিত লড়াইয়ে।
  • ২০২৩ সালের হামাসের বিস্ফোরক হামলা থেকে আজ পর্যন্ত গাজা যুদ্ধে ৪৩০ এর বেশি ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছে।
  • গাজার ৫৬,৭৭৭ এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত, যারা প্রধানত সাধারণ মানুষ ও শিশু।
  • ২০ লাখ গাজার বাসিন্দা খাদ্য ও জলের সংকটে দিন কাটাচ্ছে।
  • আন্তর্জাতিক মহল যুদ্ধবিরতি ও মানবাধিকার সুরক্ষার আহ্বান জানিয়েছে।
  • ইসরায়েলি সেনাপ্রধান গাজার ওপর নতুন মনোযোগ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

গাজা উপত্যকা এখন এক মহাযুদ্ধের অঙ্গন, যেখানে প্রতিদিন নিরীহ মানুষের জীবন সংকটাপন্ন হচ্ছে। এই সংকটের দ্রুত ও স্থায়ী সমাধান না হলে মানবতার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হবে।

সিগনালবিডি ডটকম
আপনার জন্য সঠিক ও গভীর তথ্যের প্রতিশ্রুতি। বিশ্বের সংবাদ, বিশ্লেষণ এবং আপডেটের জন্য আমাদের সাথে থাকুন।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button