ইরানে শাসন পরিবর্তন দেখতে চান না, বললেন ট্রাম্প

সাম্প্রতিক এক মন্তব্যে ট্রাম্প জানান, ইরানে শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের পক্ষপাতী নন তিনি। বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা থেকেই এমন মনোভাব বলে জানান সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
ইরানে শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের ব্যাপারে পূর্বে মন্তব্য করলেও এবার একেবারে উল্টো অবস্থান নিলেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইরানে শাসন পরিবর্তন চায় না, কারণ এতে অঞ্চলজুড়ে বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়তে পারে।
ট্রাম্পের বক্তব্য: শাসন পরিবর্তনের বিপক্ষে
সম্প্রতি নেদারল্যান্ডসে ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার পথে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, “আমি চাই না ইরানে শাসন পরিবর্তন হোক। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেখানে স্থিতিশীলতা ফিরে আসুক, সেটাই চাই।”
তিনি আরও বলেন, “শাসন পরিবর্তনের সময় সাধারণত বিশৃঙ্খলা দেখা যায়। আদর্শগতভাবে আমরা আর কোনো বিশৃঙ্খলা দেখতে চাই না। তাই ইরানে বর্তমানে যা চলছে, সেটার শান্তিপূর্ণ সমাধান দেখতে চাই।”
ট্রাম্পের এই বক্তব্য অনেককেই চমকে দিয়েছে, কারণ কয়েকদিন আগেই সামাজিক মাধ্যমে তার বক্তব্য ছিল একেবারে বিপরীত সুরে।
পূর্ববর্তী মন্তব্য: বিপরীত অবস্থান
মাত্র একদিন আগেই নিজের Truth Social প্ল্যাটফর্মে ট্রাম্প প্রশ্ন তোলেন, “যদি বর্তমান ইরানি সরকার দেশকে ‘আবার মহান’ করে তুলতে না পারে, তাহলে কেন সেই শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন করা হবে না?”
তিনি লেখেন, “শাসন পরিবর্তন শব্দটি রাজনৈতিকভাবে সঠিক নাও হতে পারে, কিন্তু দরকার হলে সেটিই তো একমাত্র পথ হতে পারে।” তিনি এই পোস্টের শেষে যোগ করেন “MIGA!!!” — যার ব্যাখ্যা “Make Iran Great Again”।
এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে জল্পনা শুরু হয়েছিল যে, ট্রাম্প আবার কি ইরানে হস্তক্ষেপমূলক নীতি গ্রহণ করতে যাচ্ছেন?
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের প্রতিক্রিয়া
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের দুই বিপরীতমুখী বক্তব্যের পেছনে রয়েছে কৌশলগত বার্তা। কেউ কেউ বলছেন, এটি মার্কিন অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নির্বাচনী বার্তার অংশ — একদিকে কড়া অবস্থান, অন্যদিকে কূটনৈতিক ভারসাম্য।
ওয়াশিংটনভিত্তিক আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ মারিয়া কোলম্যান বলেন, “ট্রাম্প জানেন, ইরানে সরাসরি শাসন পরিবর্তনের উদ্যোগ নেওয়া মানে একটি অস্থিতিশীলতা তৈরির সম্ভাবনা, যা মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের জন্য হুমকি হতে পারে।”
যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান
১৯৭৯ সালের ইসলামিক বিপ্লবের পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের সম্পর্ক তিক্ত। গত চার দশকে একাধিকবার যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, সামরিক চাপও সৃষ্টি করেছে।
২০১۸ সালে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পই পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেন, যেটি ওবামা প্রশাসনের সময় ইরানের সঙ্গে সম্পাদিত হয়েছিল। তখন থেকেই ইরান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র চাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে একটি অপেক্ষাকৃত শান্তিপূর্ণ অবস্থা বজায় রাখতে, বিশেষ করে ইউক্রেন যুদ্ধ ও তাইওয়ান সংকটের পেছনে আন্তর্জাতিক মনোযোগ কেন্দ্রীভূত হওয়ায়।
তাছাড়া মার্কিন রাজনীতিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বছর হিসেবে ২০২৫ গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রেক্ষাপটে ট্রাম্প তার অবস্থানে ভারসাম্য দেখানোর চেষ্টা করছেন বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।
ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই অবস্থান কতটা স্থায়ী, তা নিয়ে এখনো প্রশ্ন রয়ে গেছে। কারণ অতীত অভিজ্ঞতা বলছে, ট্রাম্প তার অবস্থান প্রয়োজনে পাল্টাতে পারেন খুব দ্রুতই।
তবে একথা নিশ্চিত — ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক আগামী দিনে আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে। এখন দেখার বিষয়, ইরান নিজেই তার অভ্যন্তরীণ শাসন ও নীতির কোন পথে এগোয়।
“শাসন বদলের সময় বিশৃঙ্খলা হয়। আদর্শগতভাবে আমরা এত বিশৃঙ্খলা দেখতে চাই না”—ডোনাল্ড ট্রাম্প
ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্য ইঙ্গিত দিচ্ছে, মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্র আপাতত স্থিতিশীলতাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে শাসন পরিবর্তনের চেয়ে। তবে ট্রাম্পের অতীত রেকর্ড বিবেচনায় নিয়ে বলা যায় — তার বক্তব্যে স্থিরতা নেই। ফলে আগামী দিনে নতুন মোড় নেওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
তবে প্রশ্ন থেকেই যায়: ট্রাম্পের এই নতুন অবস্থান আদৌ কূটনৈতিক বাস্তবতা, নাকি নির্বাচনী কৌশল?
এম আর এম – ০০৩৫, Signalbd.com