বিশ্ব

যুদ্ধবিরতির ঘোষণার পর ইরানজুড়ে বিজয় উৎসব

 ইসরায়েলের সঙ্গে ১২ দিনের রক্তক্ষয়ী সংঘাত শেষে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসতেই ইরানের শহরজুড়ে উৎসবের আবহ। রাজধানী তেহরানসহ বিভিন্ন এলাকায় হাজারো মানুষের অংশগ্রহণে বিজয় মিছিল, স্লোগান, আগুন জ্বালিয়ে উল্লাস।

যুদ্ধবিরতির ঘোষণার পর আনন্দে ফেটে পড়ে ইরান

ইসরায়েলের সঙ্গে টানা ১২ দিনের সংঘাতের পর অবশেষে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হতেই ইরানজুড়ে দেখা গেছে বিজয়ের উল্লাস। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণার মাধ্যমে এ যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত আসে, যার পরপরই রাজধানী তেহরানসহ বিভিন্ন শহরে রাস্তায় নেমে আনন্দ মিছিল করে জনতা। আগুন জ্বালিয়ে, পতাকা উড়িয়ে এবং বিপ্লবী স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে রাস্তাঘাট।

সরকারি টেলিভিশন থেকে শুরু করে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওগুলোতে দেখা গেছে, হাজারো মানুষ ‘আমেরিকা নিপাত যাক’, ‘ইসরায়েল ধ্বংস হোক’ জাতীয় স্লোগানে মুখর হয়ে বিজয় উদযাপন করছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সারাদেশে এক আবেগঘন পরিবেশ তৈরি হয়।

 কীভাবে শুরু হলো সংঘাত?

২০২৫ সালের ১৩ জুন, ইসরায়েল ইরানের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা চালায়, যেগুলোর মধ্যে পারমাণবিক স্থাপনাও ছিল। জবাবে ইরানও ইসরায়েলের সামরিক স্থাপনায় পাল্টা আঘাত হানে। পরিস্থিতি ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠলে যুক্তরাষ্ট্র এতে হস্তক্ষেপ করে।

ইরানের বিরুদ্ধে পরমাণু কর্মসূচি ও আঞ্চলিক হুমকির অভিযোগ এনে যুক্তরাষ্ট্রও সরাসরি হামলা চালায় ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায়। এর প্রতিক্রিয়ায় ইরান আবারও মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালায়, বিশেষ করে কাতার ও ইরাকের ঘাঁটিগুলো লক্ষ্য করে।

এই উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প উভয় দেশের সঙ্গে আলোচনা করে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন, যেটিকে দুই পক্ষই সম্মতিসূচকভাবে গ্রহণ করে।

রাজনৈতিক ও সামরিক মহলে প্রতিক্রিয়া

ইরানের শীর্ষ রাজনৈতিক ও সামরিক নেতারা এ যুদ্ধবিরতিকে “ঐতিহাসিক জয়” হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ রেজা আরেফ বলেন, “এই বিজয়ের মাধ্যমে ইরান প্রমাণ করেছে যে, আমরা শুধু সামরিক নয়, কূটনৈতিক শক্তিতেও সক্ষম।”

সংসদের স্পিকার ও আইআরজিসি’র সাবেক কমান্ডার মোহাম্মদ বাঘের গালিবাফের উপদেষ্টা মাহদি মোহাম্মাদি সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, “এটি শুধু একটি যুদ্ধের অবসান নয়, বরং একটি নতুন যুগের সূচনা।”

পারমাণবিক শক্তি সংক্রান্ত দপ্তরের মুখপাত্র বেহরুজ কামালভান্দি বলেন, “আমাদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ভিত্তি এতটাই মজবুত যে, আমাদের পারমাণবিক কর্মসূচিকে কেউ থামাতে পারবে না।”

তেহরান থেকে ইস্পাহান, কারম্যান থেকে মাশহাদ

যুদ্ধবিরতির খবরে শুধু তেহরান নয়, ইরানের প্রায় প্রতিটি শহরে মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। ইসলামী সংগীত, বিপ্লবী স্লোগান, পতাকা উড়ানো ও আগুন জ্বালিয়ে লোকজন নিজেদের বিজয় উদযাপন করে।

তরুণদের পাশাপাশি বৃদ্ধরাও রাস্তায় নেমে আসে। অনেক জায়গায় পরিবারসহ মানুষের অংশগ্রহণ দেখা গেছে। বাচ্চারা জাতীয় পতাকা হাতে উল্লাস করছে, নারীরা ছাদ থেকে পতাকা উড়িয়ে জয়ধ্বনি দিচ্ছে। সামাজিক মাধ্যমে এসব দৃশ্য ভাইরাল হয়ে গেছে।

কূটনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিজয়, নাকি সাময়িক বিরতি?

যদিও ইরানের অভ্যন্তরে এই ঘটনাকে একটি বিরাট সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে, আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা এই যুদ্ধবিরতির স্থায়িত্ব নিয়ে সন্দিহান। কারণ, ইরান-ইসরায়েল বৈরিতা একদিনে শুরু হয়নি এবং এটা বহু দশক ধরে চলছে।

তবে এই যুদ্ধবিরতি ইরানকে কূটনৈতিক ময়দানে একধরনের সুযোগ এনে দিয়েছে। এখন তারা আলোচনায় একটি শক্ত অবস্থান নিয়ে অংশ নিতে পারবে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সঙ্গে পরবর্তী বৈঠকে।

ইরান নতুন করে জায়গা করে নিচ্ছে

বিশ্লেষকদের মতে, এই সংঘাতের পর ইরান বিশ্বকে একটি বার্তা দিতে সক্ষম হয়েছে— তারা শুধু প্রতিরক্ষায় দক্ষ নয়, বরং আঞ্চলিক রাজনীতিতে বড় ভূমিকা রাখতে প্রস্তুত।

একজন মধ্যপ্রাচ্য বিশ্লেষক বলেন, “ইরানের প্রতিরোধের এই মনোভাব তাদের আঞ্চলিক অবস্থান আরও শক্ত করবে, বিশেষ করে সিরিয়া, ইরাক ও লেবাননের প্রেক্ষাপটে।”

এছাড়া, যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে ইরান অভ্যন্তরীণভাবে জনগণের মধ্যে একধরনের আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে পেরেছে, যা সরকারের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধিতে সহায়ক হতে পারে।

শেষ কথা: যুদ্ধবিরতি—স্বস্তি না সঙ্কেত?

ইরানের জনতা এই মুহূর্তে উল্লাসে মাতলেও, পরিস্থিতি আসলে কতটা শান্ত থাকবে, তা ভবিষ্যতের কূটনৈতিক ও সামরিক পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে।বিশ্লেষকদের মতে, “এই বিজয় যতটা কূটনৈতিক সাফল্য, ততটাই এক নতুন উত্তেজনার শুরু হতে পারে। কারণ, মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিতে প্রতিটি জয়-পরাজয় একেকটি নতুন মোড়ের সূচনা করে।”

এম আর এম – ০০৩২ , Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button