বিশ্ব

যুদ্ধবিরতির খবরে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমেছে ৫ শতাংশ

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার উত্তপ্ত যুদ্ধাবস্থা হঠাৎ করেই থেমে গেছে একটি সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতির ঘোষণা শোনার পর। এই ঘোষণার পরপরই বৈশ্বিক জ্বালানি তেলের বাজারে বড় ধস দেখা দিয়েছে। ব্রেন্ট অপরিশোধিত তেলের দাম ব্যারেল প্রতি কমে এসেছে প্রায় ৬৮ ডলারে, যা প্রায় ৫ শতাংশ হ্রাস।

বিশ্ববাজারের এমন প্রতিক্রিয়া ছিল পূর্বানুমানযোগ্য নয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ যুদ্ধবিরতির খবরে সরবরাহ নিয়ে দীর্ঘদিনের উদ্বেগ অনেকটাই কেটে গেছে। ফলে বিনিয়োগকারীরা এখন তুলনামূলকভাবে স্বস্তির সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।

ট্রাম্পের ঘোষণা: ‘পূর্ণ ও সর্বাত্মক যুদ্ধবিরতি আসছে’

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে জানিয়েছেন, ইরান ও ইসরায়েল যুদ্ধ বন্ধে একটি সমঝোতায় পৌঁছেছে। তাঁর ভাষায়, “আগামী ছয় ঘণ্টার মধ্যে একটি পূর্ণ যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে এবং ১২ ঘণ্টা পর দুই পক্ষ সম্পূর্ণরূপে সামরিক কার্যক্রম বন্ধ করবে।”

যদিও এখনও কোনো পক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টি নিশ্চিত করেনি, তবুও ট্রাম্পের এই ঘোষণার পর আন্তর্জাতিক বাজারে আশার আলো দেখা গেছে।

যুদ্ধ পরিস্থিতির পটভূমি: কী ঘটেছিল গত সপ্তাহে?

১২ জুন গভীর রাতে ইসরায়েলের একটি চূড়ান্ত অভিযানের মাধ্যমে ইরান-ইসরায়েল সংঘর্ষের নাটকীয় সূচনা ঘটে। হরমুজ প্রণালি ঘিরে উত্তেজনা বাড়তে থাকে, যা বিশ্ববাজারে তেলের দামে রেকর্ড উত্থান ঘটায়। পরবর্তী কয়েকদিনে জ্বালানি সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার শঙ্কায় বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত হয়ে ওঠে।

তবে যুদ্ধবিরতির ঘোষণার পর সেই শঙ্কা অনেকটাই প্রশমিত হয়েছে।

আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিক্রিয়া: কোথায় কেমন অবস্থা?

তেলের দাম কমার সঙ্গে সঙ্গে আশার আলো ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন অর্থনৈতিক সূচকে। এশিয়ার শেয়ারবাজারগুলোও ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার শেয়ারবাজারে সূচক বেড়েছে গড়ে ১.২ শতাংশ।

অপরদিকে, মার্কিন ডলারের বিপরীতে অনেক দেশীয় মুদ্রাও কিছুটা স্থিতিশীলতা ফিরে পেয়েছে।

এই শান্তি কতটা স্থায়ী?

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এটি সাময়িক স্বস্তি হলেও এখনো দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতার নিশ্চয়তা নেই। মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি খুব দ্রুত পাল্টাতে পারে। একাধিক ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষক আশঙ্কা করছেন, ঘোষণা বাস্তবায়ন না হলে পরিস্থিতি আরও জটিল হবে।

বিশ্লেষক হাবিবুর রহমান বলেন,

“এই যুদ্ধবিরতি বাস্তবে পরিণত হলে বিশ্ববাজার দীর্ঘস্থায়ী স্থিতিশীলতা পেতে পারে। তবে কোনো পক্ষ প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন করলে আবারও বড় রকমের বাজার সংকট তৈরি হতে পারে।”

পরিসংখ্যান: মূল্য হ্রাসের তুলনামূলক চিত্র

১২ জুন: ব্যারেল প্রতি ব্রেন্ট তেলের দাম — ৭৩ ডলার

২৩ জুন (সোমবার): দাম হ্রাস — ৭ শতাংশ

২৪ জুন (মঙ্গলবার): আরও কমে দাঁড়ায় — ৬৮ ডলার (মোট ৫% হ্রাস)

এক সপ্তাহে দাম কমেছে প্রায় ৯ শতাংশ

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও বাজারের দিকনির্দেশনা

এই যুদ্ধবিরতির খবরে বিনিয়োগকারীদের মনে স্বস্তি ফিরলেও, আন্তর্জাতিক বাজার এখনো অস্থির। আগামী ২৪–৪৮ ঘণ্টার মধ্যে যদি যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়িত হয়, তাহলে তেলের দাম আরও কমতে পারে।

বিশ্বজুড়ে যানবাহন খাত, শিল্প উৎপাদন এবং আমদানি-নির্ভর অর্থনীতির দেশগুলো এতে ইতিবাচক প্রভাব পেতে পারে।

উপসংহার

ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির ঘোষণার খবরে বিশ্বজুড়ে জ্বালানি তেলের বাজারে বড় পরিবর্তন এসেছে। তেলের দাম কমেছে, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ফিরে এসেছে আস্থার বাতাস। তবে ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে এই যুদ্ধবিরতির কার্যকারিতা ও বাস্তবায়নের ওপর।

তবে প্রশ্ন থেকে যায়— এ শান্তি কতটা দীর্ঘস্থায়ী? আর সেই প্রশ্নের উত্তরেই নির্ভর করছে বৈশ্বিক অর্থনীতির পরবর্তী ধাপ।

এম আর এম – ০০২৮ , Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button