বিশ্ব

ট্রাম্প কি ইরানের পারমাণবিক শক্তি অর্জনের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিলেন

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় সরাসরি মার্কিন হামলা শুধু যুদ্ধের উত্তেজনা নয়, বরং পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনে তেহরানকে আরও উৎসাহিত করছে বলে আশঙ্কা বিশ্লেষকদের।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের ওপর অভূতপূর্ব সরাসরি সামরিক পদক্ষেপ নিয়ে কূটনৈতিকভাবে এক বিপজ্জনক রূপরেখা গড়েছেন। পারমাণবিক স্থাপনায় ‘বাঙ্কার বিধ্বংসী’ বোমা হামলার পর এখন প্রশ্ন উঠেছে: এই হামলা কি ইরানকে আরও দ্রুত পারমাণবিক শক্তি অর্জনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে?

হামলার প্রকৃতি ও প্রভাব:

পেন্টাগনের বরাতে জানা গেছে, ইরানের নাতাঞ্জ, ইসফাহান ও ফোরদোতে পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর সংঘটিত এই হামলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। যদিও তেহরান দাবি করছে, কর্মসূচি বহাল রয়েছে এবং ক্ষয়ক্ষতি নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হচ্ছে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, এটি কেবল সামরিক পদক্ষেপ নয়—বরং ইসলামী প্রজাতন্ত্রের ভাবমূর্তির ওপরও সরাসরি আঘাত। এই হামলা তেহরানের আত্মমর্যাদা, প্রতিরোধ নীতি এবং ভূরাজনৈতিক ভারসাম্যকে চ্যালেঞ্জ করছে।

খামেনির দোটানা:

৮৬ বছর বয়সী সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির সামনে এখন দুটো কঠিন রাস্তা:

  1. প্রতিশোধ নেওয়া, যা বড় ধরনের যুদ্ধ ডেকে আনতে পারে
  2. পরিস্থিতি সামাল দেওয়া, যা অভ্যন্তরীণভাবে দুর্বলতা ও আত্মসমর্পণের ইঙ্গিত দিতে পারে

চ্যাথাম হাউসের বিশ্লেষক সানাম ভাকিল বলেন, “খামেনির প্রতিটি পদক্ষেপ এখন ইতিহাসে তার স্থায়ী পরিচয়ের সঙ্গে জড়িত হয়ে যাচ্ছে।”

ইরান কি পারমাণবিক কর্মসূচি জোরদার করবে?

যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের ধারাবাহিক আঘাতে ইরান তার নিরাপত্তা ও প্রতিরোধ কৌশল নতুনভাবে সাজাতে বাধ্য হচ্ছে। অনেক পর্যবেক্ষক মনে করছেন, তেহরান এখন আরও গোপনে ও দ্রুততার সঙ্গে পারমাণবিক কর্মসূচি এগিয়ে নিতে পারে।

ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের হার ৬০ শতাংশে পৌঁছেছে, যা অস্ত্রোপযোগী ৯০%-এর বেশ কাছাকাছি। ইউরোপীয় ইউনিয়ন একে ‘অশুভ ইঙ্গিত’ হিসেবে দেখছে।

প্রতিশোধ না কূটনীতি—দ্বিধায় তেহরান:

ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি) বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র এমন প্রতিশোধ পাবে যা ‘স্থায়ী অনুশোচনা’ সৃষ্টি করবে। তবে হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দিলে বিশ্ব তেলবাজারে বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়তে পারে, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে চীন ও অন্যান্য অর্থনৈতিক অংশীদারদের ওপরও।

আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক হামিদ রেজা আজিজ বলেন, “ইরান যুদ্ধ চায় না। কিন্তু সম্মানের প্রশ্নে প্রতিক্রিয়া দেখানো বাধ্যতামূলক হয়ে উঠছে।”

ট্রাম্পের ভেতরের চাপে যুক্তরাষ্ট্র:

কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়াই এমন হামলা চালানোয় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দেশটির আইনপ্রণেতাদের সমালোচনার মুখে পড়েছেন। তাঁর সমর্থকদের একাংশ মনে করছেন, দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধ এড়িয়ে চলার যে অঙ্গীকার তিনি করেছিলেন, তা তিনি ভেঙেছেন।

কূটনীতির দরজা বন্ধ:

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি বলেন, “যখন যুক্তরাষ্ট্র বোমা ফেলছে, তখন কোনো আলোচনার প্রশ্নই আসে না। শান্তি আলোচনা মানেই আত্মসমর্পণ।”

বিশ্লেষণ

ইউরোপীয় কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনস-এর উপ-পরিচালক এলি গেরানমায়ে বলেন, “ট্রাম্প হয়তো চেয়েছিলেন ইরানের পারমাণবিক হুমকি ঠেকাতে, কিন্তু উল্টো ফল হতে যাচ্ছে। ইরান এখন পারমাণবিক শক্তিতে পরিণত হওয়ার আরও বেশি কারণ খুঁজে পেয়েছে।”

এই মুহূর্তে আন্তর্জাতিক কূটনীতি কার্যত অচল। ইরান যদি পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের দিকে অগ্রসর হয়, তবে যুক্তরাষ্ট্রের এই হামলা হবে ইতিহাসে এক কৌশলগত বিপর্যয়ের উদাহরণ।

এম আর এম – ০০২৪, Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button