বিশ্ব

যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে পুতিনকে খামেনির চিঠি

যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সাম্প্রতিক আগ্রাসনের প্রেক্ষাপটে রাশিয়ার সমর্থন চেয়ে সরাসরি পুতিনকে চিঠি দিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। এই কূটনৈতিক পদক্ষেপ মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক পদক্ষেপের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে সরাসরি চিঠি দিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। এই চিঠি বহন করে মস্কো পৌঁছেছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি। চিঠিটি ইতিমধ্যে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, শিগগিরই পুতিন নিজে এই চিঠি হাতে পাবেন এবং তা নিয়ে আলোচনা করবেন।

কেন এই চিঠি: পটভূমি ও তাৎপর্য

সম্প্রতি ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাসহ গুরুত্বপূর্ণ সামরিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক হামলা ইরানকে কৌশলগতভাবে কোণঠাসা করে ফেলেছে। একইসঙ্গে ইসরায়েলের সরাসরি হুমকি এবং ক্ষমতা পরিবর্তনের আশঙ্কাও বাড়িয়েছে উদ্বেগ। এমন সময় খামেনি রাশিয়ার সমর্থনের গুরুত্ব অনুধাবন করে এই চিঠি পাঠালেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই চিঠি শুধু একটি আহ্বান নয়; বরং একটি কৌশলগত বার্তা, যা মধ্যপ্রাচ্যে জোটভিত্তিক রাজনীতির চেহারা বদলে দিতে পারে।

রাশিয়ার অবস্থান ও প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া

ক্রেমলিন থেকে প্রাথমিকভাবে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট পুতিন আরাঘচিকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং আলোচনা করেছেন। পুতিন স্পষ্ট করে বলেন, ইরানের বিরুদ্ধে যেকোনো আগ্রাসন ভিত্তিহীন ও আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী। তিনি ইরানি জনগণের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেন, রাশিয়া সবসময় ‘সঠিক ইতিহাসের পক্ষে’ থাকবে।

এই বিবৃতির মাধ্যমে বোঝা যায়, রাশিয়া কৌশলগতভাবে ইরানের পাশে দাঁড়াতে প্রস্তুত, যদিও এখনো স্পষ্টভাবে কোনো সামরিক জোট বা সরাসরি পদক্ষেপের ঘোষণা আসেনি।

চিঠির সম্ভাব্য বিষয়বস্তু

যদিও খামেনির চিঠির পূর্ণ বিবরণ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ হয়নি, ধারণা করা যাচ্ছে যে চিঠিতে তিনটি মূল অনুরোধ থাকতে পারে:

  1. সামরিক ও কৌশলগত সহায়তা: ইরানের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়াতে রাশিয়ার সহযোগিতা।
  2. আন্তর্জাতিক মঞ্চে সমর্থন: জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক পরিসরে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ।
  3. রাজনৈতিক বার্তা: ইরানের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় দৃঢ় অবস্থান।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও বিশ্লেষণ

মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই চিঠি এবং পরবর্তী বৈঠক ইরান-রাশিয়া সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা ভূ-রাজনৈতিক অক্ষ এবার চীন-রাশিয়া-ইরান জোটের দিকে আরও ঝুঁকতে পারে।

বিশ্লেষক হামিদ রেজা বলেন, “খামেনির এই কূটনৈতিক উদ্যোগ শুধু প্রতিরোধ নয়, এটি রাশিয়াকে সরাসরি সংঘাতে টানার একটি প্রয়াসও হতে পারে।”

আর কী বলছে ইরান?

ইরান এই মুহূর্তে প্রকাশ্যে যুদ্ধ চায় না বলে জানালেও, তারা ‘প্রতিরক্ষা ও জবাবদিহির অধিকার’ সংরক্ষণ করে। আব্বাস আরাঘচি বলেন, “আমরা সংঘাত চাই না, কিন্তু প্রয়োজন হলে আত্মরক্ষা করব।” তিনি পুতিনকে ধন্যবাদ জানান ইরানকে ‘অবিচারের শিকার’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য।

ইরানি প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানও পুতিনকে একটি শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়ে রাশিয়ার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।

রাশিয়া কী পদক্ষেপ নিতে পারে?

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, পুতিন এই চিঠির জবাবে কী পদক্ষেপ নেবেন? সম্ভাব্য কিছু পদক্ষেপ হতে পারে:

  • জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব উত্থাপন
  • ইরানকে সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহে অগ্রাধিকার
  • মধ্যপ্রাচ্যে যৌথ মহড়ার প্রস্তাব

তবে এখন পর্যন্ত এসব বিষয়ে স্পষ্ট কোনো ঘোষণা আসেনি।

“ইরানি জনগণকে সাহায্য করতে রাশিয়া প্রস্তুত রয়েছে”— ভ্লাদিমির পুতিন

ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা

বিশ্লেষকদের মতে, এই চিঠির প্রতিক্রিয়া ও পরবর্তী বৈঠকগুলোই নির্ধারণ করবে, রাশিয়া কীভাবে যুক্তরাষ্ট্রের এই আক্রমণাত্মক কৌশলের জবাব দেবে। পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে যদি রাশিয়া সরাসরি ইরানপন্থী অবস্থান গ্রহণ করে। প্রশ্ন হচ্ছে—মধ্যপ্রাচ্যে কি তবে আরেকটি বড় সংঘাতের সূচনা হতে যাচ্ছে?

এম আর এম – ০০২১, Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button