বিশ্ব

ইরানকে সহায়তা না করার কারণ জানালেন পুতিন

Advertisement

মধ্যপ্রাচ্যের উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের প্রেক্ষাপটে রাশিয়ার নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এবার খোলাখুলি জানালেন কেন ইরানকে সরাসরি সহায়তা করছেন না তিনি।

ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক হামলার পর মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা তুঙ্গে। এমন পরিস্থিতিতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জানালেন, কেন তারা ইরানকে সরাসরি সামরিক সহায়তা দিচ্ছে না।

পুতিনের বক্তব্যে রাশিয়ার অবস্থান স্পষ্ট

সেন্ট পিটার্সবার্গে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ফোরামের এক অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন। সেখানে তিনি বলেন, “আমি আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়ন ও বর্তমান রুশ ফেডারেশনের প্রায় ২০ লাখ মানুষ এখন ইসরায়েলে বসবাস করেন। এটি এখন কার্যত রুশভাষীদের একটি রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই এই বাস্তবতাকে আমরা উপেক্ষা করতে পারি না।”

তিনি আরও বলেন, “যারা আমাদের মিত্রতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, তারা মূলত উসকানিদাতা। রাশিয়া কখনোই নিজের স্বার্থ পরিত্যাগ করে সিদ্ধান্ত নেয় না।”

পুতিনের ভাষ্যমতে, রাশিয়া কূটনৈতিক ভারসাম্য বজায় রেখে চলতে চায় এবং সেই কারণেই ইরানের প্রতি আবেগতাড়িত সিদ্ধান্ত না নিয়ে আরও যুক্তিসঙ্গত অবস্থান নিয়েছে।

উত্তপ্ত ইরান-ইসরায়েল পরিস্থিতি

গত ১৩ জুন ইরানের একটি সামরিক স্থাপনায় ইসরায়েলের বিমান হামলার পর থেকেই সংঘাত শুরু হয়। জবাবে ইরানও পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। পরবর্তীতে ২১ জুন রাতে ‘অপারেশন মিডনাইট হ্যামার’ চালিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ফোর্দো, নাতাঞ্জ ও ইস্পাহান পারমাণবিক স্থাপনায় বাঙ্কার-বাস্টার বোমা নিক্ষেপ করে।

এই হামলার পর ইরান আন্তর্জাতিক সহায়তার আশায় তাকিয়ে ছিল, বিশেষ করে রাশিয়ার দিকেই। তবে পুতিনের নিরপেক্ষ অবস্থান অনেককে অবাক করেছে।

মধ্যপ্রাচ্যে রাশিয়ার সূক্ষ্ম ভারসাম্য কৌশল

রাশিয়া দীর্ঘদিন ধরে মধ্যপ্রাচ্যে একটি ভারসাম্যপূর্ণ কৌশল অনুসরণ করছে। একদিকে ইসরায়েলের সঙ্গে তাদের গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ও সামাজিক সম্পর্ক রয়েছে, অন্যদিকে ইরানের সঙ্গেও রয়েছে দীর্ঘমেয়াদী সামরিক ও কূটনৈতিক সহযোগিতা।

পুতিন জানান, “আমরা ইরানের সঙ্গে বহু দশক ধরে আস্থা ও সহযোগিতার ভিত্তিতে সম্পর্ক বজায় রেখেছি। বুশেহরে প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে রাশিয়ার ভূমিকা ছিল মুখ্য।”

তবে এই মুহূর্তে সরাসরি সামরিক সহায়তা দিলে সেই কৌশলগত ভারসাম্য ভেঙে পড়ার আশঙ্কা আছে বলেই রাশিয়া এ বিষয়ে সতর্ক ভূমিকা নিচ্ছে।

মুসলিম বিশ্বের প্রতিও রাশিয়ার দৃষ্টি

রাশিয়ার জনসংখ্যার প্রায় ১৫ শতাংশ ইসলাম ধর্ম অনুসরণ করে। পুতিন বলেন, “আমরা মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে আমাদের ঐতিহাসিক সম্পর্ককে অত্যন্ত গুরুত্ব দিই। রাশিয়া ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার (OIC) একজন পর্যবেক্ষক সদস্য। তাই ইরানের পাশে দাঁড়ানো আমাদের জন্য শুধু রাজনৈতিক নয়, ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিকভাবেও সংবেদনশীল একটি সিদ্ধান্ত হতে পারত।”

তবে সেই সংবেদনশীলতাকে ব্যবহার না করে কৌশলগত চিন্তাই বেছে নিয়েছে মস্কো।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া: যুক্তরাষ্ট্রের নিন্দা করলেও সহায়তা নয়

রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের হামলাকে আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে আখ্যা দিয়েছে। তবে তারা সরাসরি সামরিক পদক্ষেপ গ্রহণ থেকে বিরত থেকেছে। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের উপর এমন হামলা জাতিসংঘ সনদ এবং আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।”

পুতিনের মতে, এই মুহূর্তে উত্তেজনা না বাড়িয়ে রাজনৈতিকভাবে সমাধানের পথ খুঁজে বের করাই সর্বোত্তম।

কৌশলের পেছনে রাজনীতি ও বাস্তবতা

বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়ার এই অবস্থান কৌশলগতভাবে যৌক্তিক। কারণ একদিকে তাদের ইসরায়েলের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও জনসংখ্যাগত সম্পর্ক, অন্যদিকে মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে রাজনৈতিক সংযোগ—এই দুইয়ের ভারসাম্য বজায় রাখতে গিয়ে রাশিয়া কোনো পক্ষেই পুরোপুরি ঝুঁকে পড়তে চায় না।

তবে কেউ কেউ বলছেন, এই নিরপেক্ষতা ইরানের সঙ্গে ভবিষ্যতের সম্পর্ককে ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে।

“আমরা কূটনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখতেই এই অবস্থান নিয়েছি”— ভ্লাদিমির পুতিন, প্রেসিডেন্ট, রাশিয়া

সার-সংক্ষেপ 

মধ্যপ্রাচ্যের জটিল ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় রাশিয়ার ‘নিরপেক্ষ’ অবস্থান আপাতদৃষ্টিতে প্রশ্নবিদ্ধ হলেও এর পেছনে রয়েছে গভীর কৌশল ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা। ভবিষ্যতে রাশিয়া এই সংঘাতে কী ভূমিকা রাখে, সেটিই এখন দেখার বিষয়।
এম আর এম – ০০১৭, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button