বিশ্ব

এক ঘণ্টায় ইসরায়েলে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, বিদ্যুৎ সরবরাহে ভঙ্গ

গতকাল সন্ধ্যার পরিপ্রেক্ষিতে ইসরায়েল সশস্ত্র বাহিনীর বরাত দিয়ে ইরানের ওপর একটি তীব্র ক্ষেপণাস্ত্র হামলার খবর পাওয়া গেছে। খবরটি প্রকাশ করেছে ইসরায়েলের জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যম ইয়নেট নিউজ, যা পরে আল জাজিরার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মহলে ছড়িয়ে পড়ে। ইরান এক ঘণ্টার মধ্যে চারটি ভলিতে মোট ৮টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে, যার ফলে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার বিস্তারিত বিবরণ

ইয়নেট নিউজের রিপোর্ট অনুযায়ী, ইরান প্রথম দফার হামলায় চারটি ভলিতে মোট আটটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বেশিরভাগ ক্ষেপণাস্ত্রকে সফলভাবে ধ্বংস করে। তবে একটি ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েল ইলেকট্রিক কোম্পানির দক্ষিণাঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিদ্যুৎ স্থাপনার নিকটে বিস্ফোরিত হয়। এর ফলে ওই এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহে বড় ধরনের বিঘ্ন ঘটেছে।

ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পেছনের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই সম্পর্কের অবনতি চলছে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের ক্রমবর্ধমান প্রভাব এবং ইসরায়েলের নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণে এ ধরনের সংঘাতের ঘটনা নতুন নয়। সম্প্রতি ইরান নিকটবর্তী এলাকায় তার সামরিক কার্যক্রম বাড়িয়েছে, যা ইসরায়েলের পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দার সম্মুখীন হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরানের এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা মূলত একটি রাজনৈতিক সংকেত, যা ইসরায়েলের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চায়। এছাড়া ইরানের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার মোকাবিলায় এ ধরনের সামরিক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও সাম্প্রতিক প্রতিক্রিয়া

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, বিশেষত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘আয়রন ডোম’ (Iron Dome), এ ধরনের হামলা প্রতিহত করার জন্য বিশ্বজুড়ে পরিচিত। ইয়নেট নিউজ জানিয়েছে, এই আয়রন ডোম সিস্টেম বেশিরভাগ ক্ষেপণাস্ত্রকে ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছে, ফলে বড় ধরনের মানব ও সামরিক ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা পেয়েছে দেশটি।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রেখেছে এবং ইতিমধ্যে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার বিরুদ্ধে জবাবী পদক্ষেপ গ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে যাতে ভবিষ্যতে এমন হামলা রোধ করা যায়।

ইসরায়েলি বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা ও সাউথার্ন ইলেকট্রিক কোম্পানির অবস্থা

ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সময় যেই বিদ্যুৎ স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, সেটি ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত ইলেকট্রিক কোম্পানির একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। এই স্থাপনার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ফলে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ইয়নেট নিউজের রিপোর্ট অনুযায়ী, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনরুদ্ধারের জন্য দ্রুত কাজ চলছে।

স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বলছে, এই ধরনের হামলা দেশের অর্থনীতি ও জনজীবনে বিরূপ প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে গরমকালের এই সময় বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হলে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবন কঠিন হয়ে পড়ে। সরকার পরিস্থিতি দ্রুত মোকাবিলায় উদ্যোগ নিয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্যে সন্ত্রাস ও সামরিক উত্তেজনা: ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের প্রভাব

মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা পরিস্থিতি বরাবরই অস্থির। বিশেষ করে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার বিরোধ উত্তেজনার শীর্ষে রয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইরানের সশস্ত্র গোষ্ঠী ও ইসরায়েলের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সংঘর্ষ হয়েছে, যার প্রভাব পড়েছে পুরো অঞ্চলের স্থিতিশীলতায়।

বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, যদি এই ধরণের হামলা বাড়তে থাকে, তাহলে পুরো মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে বড় ধরনের যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ এবং নতুন সামরিক সংঘর্ষের সৃষ্টি হতে পারে। আন্তর্জাতিক শক্তিগুলো এ জন্য নিয়মিত শান্তি আলোচনা ও মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়ে আসছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও কূটনৈতিক প্রচেষ্টা

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ব্যাপক উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন হামলার নিন্দা জানিয়ে দ্রুত শান্তি প্রতিষ্ঠার আহ্বান করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য বিশ্ব শক্তিগুলো শান্তি প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার ওপর জোর দিয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের স্থায়ী সমাধান ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। তাই কূটনৈতিক প্রচেষ্টা আরও জোরদার করতে হবে।

ইরানের নিক্ষেপিত আটটি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন ঘটেছে। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বেশিরভাগ ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করতে সক্ষম হলেও একটি ক্ষেপণাস্ত্র বিদ্যুৎ স্থাপনার কাছে বিস্ফোরিত হয়। এর পেছনে রাজনৈতিক ও সামরিক উত্তেজনার জটিল প্রেক্ষাপট কাজ করছে, যা মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় উদ্বিগ্ন এবং দ্রুত কূটনৈতিক সমাধানের আহ্বান জানাচ্ছে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button